
অনাহারীর জন্য চবির তিন শিক্ষার্থীর দরদ
প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২২ । ০০:০০ | আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২২ । ১৫:৩৯ | প্রিন্ট সংস্করণ
মারজান আক্তার, চবি প্রতিনিধি

অর্থ সংকটে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে তিন শিক্ষার্থীর উদ্যোগে গড়ে ওঠা 'উত্তরণ' প্রকল্পের আওতায় বিনামূল্যে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে - সমকাল
বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে নিজেদের খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন হাজারো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। নিজের ওপর নির্ভরশীল এমন অনেক শিক্ষার্থীকে মাস শেষে থাকতে হয় অনাহারে বা অর্ধাহারে। বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দূরের জেলা থেকে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের পড়তে হয় আর্থিক সমস্যায়। এভাবে অর্থসংকটে থাকা শিক্ষার্থীদের সাহায্যের জন্য 'উত্তরণ' নামে এক প্রকল্প চালু করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) তিন শিক্ষার্থী। চবির চারটি হলের ডাইনিংয়ে রাখা আছে উত্তরণ প্রকল্পের ডায়েরি।
আর্থিক সংকটে থাকা শিক্ষার্থীরা খাবার খেয়ে টাকার পরিমাণ ওই ডায়েরিতে লিখে রাখেন। মাস শেষে টাকা পরিশোধ করে আসেন উত্তরণের তিন উদ্যোক্তা নূর নবী রবীন, জাহিদ হাসান ও মারুফ। তাদের এই মানবিক সহযোগিতায় যুক্ত হয়েছেন চবির শিক্ষকরাও। শিক্ষার্থীদের আর্থিক সমস্যার স্থায়ী সমাধানে কাজ করাই এই প্রকল্পের উদ্যোক্তাদের লক্ষ্য।
করোনা-পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় চালু হওয়ার পর অনেক শিক্ষার্থী আর্থিক সমস্যায় ভুগছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক ফেসবুক পেজে কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান খাবারের সমস্যার কথা। আবার মাস শেষে হলগুলোতে দেখা যায় কিছু শিক্ষার্থী থাকেন অর্ধাহারে, কেউবা আবার শুধু ডাল-ভাত খেয়ে দিন পার করে দেন। একই সমস্যা দেখা যায় মেয়েদের হলেও। আর এই সমস্যাগুলো নজরে আসে চবির যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী নূর নবী রবীনের। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাবার সংকটে থাকবে বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি রবীন। নিজের ফেসবুক পোস্টে জানান, খাবারে সংকটে থাকা শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করতে চান তিনি। তার এই উদ্যোগে এগিয়ে আসেন জাহিদ ও মারুফ। প্রথমেই রবীনের এই পোস্টে সাড়া দেন যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রেজাউল করীম। ধীরে ধীরে এই প্রকল্পে যুক্ত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী। খাবারের সংকট থেকে উত্তরণের এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক নাম দেন 'উত্তরণ'।
শিক্ষার্থীদের এই মহৎ কাজে উপদেষ্টা হিসেবে আছেন যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রেজাউল করীম। তিনি বলেন, 'এই কাজ আমাদের সবার। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা না খেয়ে থাকবে, এটা তো মেনে নেওয়া যায় না। এই সমস্যার সমাধানে আমার শিক্ষার্থীদের এই ধরনের উদ্যোগ প্রশংসাযোগ্য। তবে আমাদের লক্ষ্য থাকবে শিক্ষার্থীদের আত্মনির্ভরশীল করে তোলা। তাদের জন্য চাকরি বা টিউশনের ব্যবস্থা করা গেলে আর্থিক সমস্যা কমে আসবে।'
কেন এই ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন- সে প্রশ্নের জবাবে উত্তরণের প্রথম উদ্যোক্তা নূর নবী রবীন বলেন, 'মানুষের খাবারের সংকট আজীবন থাকে না। সাময়িক এ সমস্যায় আমরা কিছুটা সহযোগিতা করতে এই উদ্যোগ নিয়েছি। আবার দেখা যায় ক্ষুধা সমাজে অপরাধ বাড়ায় কিংবা শিক্ষার্থীদের মানসিক সমস্যা তৈরি করে। সবাই মিলে হাত বাড়ালে শিক্ষার্থীদের খাবারের সমস্যা থাকবে না।'
রবীন আরও জানান, ধীরে ধীরে তাদের এই প্রকল্পের আওতা বাড়ছে। তারা আর্থিক সমস্যায় থাকা শিক্ষার্থীদের হয়তো দীর্ঘদিন এভাবে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এই ধরনের সাহায্যের সঙ্গে তাদের জন্য টিউশন বা চাকরির ব্যবস্থা করতে চান উত্তরণের স্বেচ্ছাসেবকরা। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন তাঁরা।
উত্তরণের কার্যক্রম : হলে যারা খাবার খান তাঁদের নাম-পরিচয় গোপন রাখা হয়। প্রথমত আলাওল হলে কার্যক্রম শুরু করলেও এখন তাঁদের সহযোগিতার ডায়েরি আছে চবির চারটি আবাসিক হলে। ছেলেদের দুটি হল আলাওল ও সোহরাওয়ার্দী এবং মেয়েদের দুটি হল খালেদা জিয়া ও প্রীতিলতায় আছে উত্তরণের খাবার প্রকল্পের ডায়েরি। এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থীকে সহযোগিতা করেছেন তাঁরা।
মাস শেষে খাবারের এই অর্থ প্রথমত উদ্যেক্তারা নিজেদের পকেট থেকে দিতেন। কিন্তু আওতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ধীরে ধীরে এগিয়ে এসেছেন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। স্বেচ্ছাসেবকরা মাস শেষে ১০০ কিংবা ২০০ করে টাকা দিয়ে চালিয়ে যান তাঁদের এই মহৎ কার্যক্রম। যুক্ত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও।
নূর নবী রবীন জানান, শিক্ষকরা এগিয়ে আসায় তাঁদের কার্যক্রম অনেক এগিয়ে গেছে। বিশেষ করে যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রেজাউল করীম, খালেদা জিয়া হলের প্রভোস্ট ড. সাইদুল ইসলাম, প্রীতিলতা হলের প্রভোস্ট শায়লা বিনতে হোসাইন, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিভাগের সভাপতি আতিয়ার রহমান ও ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. শওকত আরা বেগম এই প্রকল্পে বিশেষ অনুদান রেখেছেন।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com