চন্দনাইশের ধোপাছড়িতে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের উৎপাত

অপহরণের ভয়ে গাড়ি চলে না রাস্তায়

অনেকে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের আমন্ত্রণ করে নিয়ে আসে : ওসি

প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২২ । ০০:০০ | আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২২ । ১৬:৫২ | প্রিন্ট সংস্করণ

চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা

অপহরণের ভয়ে দিনেও মানুষ যায় না চন্দনাইশের দিয়াকুল-চিরিংঘাটা-ধোপাছড়ি সড়কে - সমকাল

চন্দনাইশ উপজেলার সমগ্র পূর্বাংশ ও সর্ব উত্তরে অবস্থিত ধোপাছড়ি ইউনিয়ন। সমতল, পাহাড় ও নদী পরিবেষ্টিত এই ইউনিয়নে বসবাস করেন ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ। এই ইউনিয়নে বাঙালি ও উপজাতি একসঙ্গে বসবাস করে। কৃষিকাজই এখানকার মানুষের প্রধান পেশা। এক সময় নদীপথই ছিল এই ইউনিয়নের বাসিন্দাদের একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম। তবে সম্প্রতি খানহাট-ধোপাছড়ি-বান্দরবান সড়ক ও দিয়াকুল-চিরিংঘাটা-ধোপাছড়ি সংযোগ সড়ক স্থাপিত হওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষ সড়ক যোগাযোগের সুবিধা পাচ্ছেন।

ধোপাছড়ি ইউনিয়নে ৪ চাকার গাড়ি প্রবেশ করায় আনন্দিত হন সাধারণ মানুষ। প্রয়োজনীয় কাজে দ্রুত গন্তব্য স্থানে যাওয়া, কৃষিজ পণ্যসহ অন্যান্য মালামাল পরিবহন করার সুযোগ হয়। মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করার সুযোগ পান শত শত বেকার যুবক। সম্প্রতি এই দুটি সড়কে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের উৎপাত বৃদ্ধি পাওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ ও গাড়ি চালকরা। গত ১৪ অক্টোবর শুক্রবার দিনেদুপুরে দিয়াকুল-চিরিংঘাটা-ধোপাছড়ি সড়ক থেকে দুই মোটরসাইকেল আরোহী অপহরণ হওয়ার পর থেকে ভয়ে সাধারণ মানুষ ওই সড়ক দিয়ে তেমন যাতায়াত করছেন না। পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের দ্বারা ওই দুই ব্যক্তি অপহৃত হওয়ার প্রায় আড়াই দিন পর মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পান। তবে সন্ত্রাসীদের ভয়ে অপহৃত দুই ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা মুখ খুলেননি।

ধোপাছড়ির বাসিন্দারা জানান, মাত্র ৭-৮ বছর আগেও যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ছিল নদীপথ। সম্প্রতি দিয়াকুল-চিরিংঘাটা-ধোপাছড়ি সড়কে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ করা হয়। এতে সাধারণ মানুষ নৌপথের বদলে নিরবচ্ছিন্নভাবে সড়ক ব্যবহারের সুযোগ পান। সড়কটি দিয়ে নির্ভয়ে মানুষ যাতায়াত করলেও হঠাৎ দুই ব্যক্তি অপহৃত হওয়ার পর থেকে সাধারণ মানুষ শংি।

সম্প্রতি বান্দরবানে পাহাড়ি অঞ্চলে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যৌথবাহিনীর অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে ধোপাছড়িতে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেড়েছে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা। পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা অবস্থাপন্ন প্রতিটি পরিবারের কাছ থেকে নির্দিষ্ট হারে চাঁদা আদায় করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইউপি সদস্য জানান, পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা দিনের বেলায় শিকারির ছদ্মবেশে লোকালয়ে বিচরণ করে। পরে তারা পাহাড়ে একত্র হয়।

যুগ যুগ ধরে এখানে উৎপাদিত সবজি নদীপথে নৌকাযোগে পরিবহন করতে গিয়ে নৌকা ডুবে ভেসে যেত কৃষিপণ্য। ঠিকমতো বাজারজাত করা যেত না। ফলে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হতো বেশি। নৌকাযোগে রোগী নিয়ে ডাক্তার কিংবা হাসপাতালে যাওয়াও সহজ ছিল না। দিয়াকুল-চিরিংঘাটা-ধোপাছড়ি সড়ক দিয়ে পণ্য পরিবহন ও যাতায়াতের সুযোগ পেয়েছিলেন জনগণ। কিন্তু এই সড়কে সম্প্রতি পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের উৎপাত বাড়ায় অপহরণের ভয়ে স্থানীয়রা আতঙ্কিত।

চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের আনাগোনা এখানে অনেক আগে থেকেই ছিল। স্থানীয়দের মধ্যে কেউ কেউ তাদের আমন্ত্রণ করে নিয়ে আসে। নিজেদের লাভে ওদের পক্ষ হয়ে কাজ করে। এদের প্রতিরোধ করতে হলে সবাইকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে। বিষয়টি সেনাবাহিনীকেও অবহিত করা আছে, তারা বিষয়টি দেখছেন।

ধোপাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবদুল আলীম জানান, চট্টগ্রাম-১৪ আসনের সংসদ সদস্য মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরীর সহায়তায় ধোপাছড়ির সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়। সম্প্রতি গন্ডামারা এলাকার মো. দেলোয়ার হোসেন ও নুর হোসেন অপহরণ ও মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কে ধোপাছড়িবাসী। সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে ভয় পাচ্ছেন ধোপাছড়ি ইউনিয়নের মানুষ। এ ব্যাপারে প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ জরুরি।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com