
চট্টগ্রামের ভাষায় ভিন্ন স্বাদের নাটক 'দইজ্জা'
প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২২ । ০০:০০ | আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২২ । ১৬:৫৭ | প্রিন্ট সংস্করণ
বাবলা চৌধুরী, প্রদায়ক

'দইজ্জা' নাটকের একটি দৃশ্য সমকাল
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণের অঞ্চলগুলোয় সাগর বা সমুদ্রকে 'দইজ্জা', 'দরিয়া' বা 'দইরগ্যা' নামে ডাকা হয়। সেই দইজ্জার কূলের জেলেজীবন নিয়ে অনবদ্য সব গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ রচিত হয়েছে সাহিত্যিক হরিশংকর জলদাসের হাত ধরে। তাঁর রচিত গল্প-উপন্যাস নিয়ে নাটক চলচিত্রও নির্মিত হয়েছে। কিন্তু সেই দইজ্জার কূলের ভিন্নধর্মী জেলেজীবনের নান্দনিক নাট্যরূপ উঠে এসেছে নাট্যকার ফারুক তাহেরের নাট্যভাবনায়। গত ৯ অক্টোবর বিটিভি, চট্টগ্রাম কেন্দ্র থেকে সম্প্রচারিত এই নাটকে সাংবাদিক ফারুক তাহের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর সংবাদ অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছেন। আর তা আরও জীবন্তভাবে তুলে এনেছেন নাট্যনির্দেশক হিমেল ইসহাক।
এখানে উল্লেখ্য, আনোয়ারার দইজ্জ্যাপাড়ে বেড়ে ওঠা ফারুক তাহেরের প্রথম টিভি নাটক 'জোঁয়া' নির্মিত হয় ২০০৫ সালে এবং তা প্রচারিত হয় একুশে টেলিভিশনে ২০০৮ সালে দুর্গাপূজার বিশেষ নাটক হিসেবে। সেখানে অভিনয় করেছিলেন সদ্য প্রয়াত ও একুশে পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা মাসুম আজিজ, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা গাজী রাকায়েত, চঞ্চল চৌধুরী, বন্যা মীর্জা, মোমেনা চৌধুরী, শাহীনুর সরোয়ার, সাখাওয়াত শিবলীসহ গুণী শিল্পীরা। সমুদ্রলগ্ন মৎস্যজীবীদের পাড়ায় বড় হওয়ার সুবাদে জেলেদের জাল-জলা নিয়ে বিস্তৃত প্রেক্ষাপট অবলোকনে অভিজ্ঞতানির্ভর নাটক সৃজন ফারুকের পক্ষে সহজেই সম্ভবপর হয়ে ওঠে, যার স্বাক্ষরও তিনি রাখেন তার 'জোঁয়া' ও 'দইজ্জ্যা' নাটকের কাহিনি নির্মাণে।
দইজ্জ্যা নাটকের কাহিনি গড়ে উঠেছে মূলত সামুদ্রিক ইলিশ মাছ ধরা, কেনাবেচার নিলাম ব্যবসাকে কেন্দ্র করে। ভোর থেকে গভীর রাত অবধি চার-পাঁচ ঘণ্টার বিরতিতে জমে ওঠে সাগরপাড়ের এই মাছের হাট। আর এই অর্থনৈতিক ক্রিয়াকাণ্ড ঘিরে জেলেদের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার নিত্যকার জীবনের যে গল্প 'দইজ্জ্যা' নাটকে পাওয়া যায়, তা আমাদের চেনা পরিচয়ের বাইরে অন্য এক জগতে নিয়ে যায়। মানুষের আদিম জীবন থেকে বর্তমান পর্যন্ত সময়কালের ইতিহাস তো নানান দ্বন্দ্ব-সংঘাতের ইতিহাস। সাগরে জাল বা ফাঁর বা ফাঁদ বসানো নিয়ে এমনই দ্বন্দ্ব-সংঘাত এবং আবার মিলন, সহজাতভাবেই ফুটে উঠেছে নাটকটিতে।
অন্যদিকে, আমরা দেখি কেবল প্রাকৃতিক প্রতিকূলতাই জেলেদের একমাত্র প্রতিপক্ষ নয়, সেখানে আছে পদে পদে অন্যরকম বিপদের হাতছানিও, এমনকি মৃত্যুর ঝুঁকি, যা দুর্বৃত্তায়িত সমাজের দস্যুতাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এই বিষয়ে নাট্যকার জেলেদের এক কর্তা পরিবারে আশ্রিত শাকিল ও তাঁর সহকর্মীদের সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে জলদস্যুদের হাতে গুরুতর আহত হওয়া এবং মাছ ও জাল হারানোর কাহিনির ভেতর দিয়ে উন্মোচন করেছেন। পরিশেষে আমরা দেখি, সেই নোয়াখাইল্ল্যা শাকিল ওরফে শাকুর সঙ্গেই চাটগাঁইয়া কর্তার মেয়ে জমিলার খুনসুটি, ঐতিহ্যিক আতিথেয়তা, সেবা, অবশেষে প্রেম-পরিণয়।
নাটকটির নির্মাণ স্থান যথেষ্ট কাহিনি সংলগ্ন হওয়ায় দেখতে ভালো লেগেছে। পরিচালক হিমেল ইসহাকের পরিশ্রমী পরিচালনার ছাপ রয়েছে নাটকে। তবে কাহিনি আর একটু সাসপেন্সনির্ভর হলে আরও আকর্ষণীয় হতো, সন্দেহ নেই। কিছু কিছু জায়গায় কারও কারও অভিনয় আরও মনোযোগ আশা করতেই পারে দর্শক। দৃশ্য পরিবর্তন দেখে বোঝা যায়, ভিডিও সম্পাদনায় কিছুটা অস্থিরতা আছে।
বিটিভির প্রযোজক আল মামুনের প্রযোজনায় ও হিমেল ইসহাকের পরিচালনায় নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয়কারী অঞ্চল চৌধুরী, সাইফুল আলম বাবু, তৌহিদ হাসান ইকবাল, রওশন জান্নাত, ইউনুস সোহেল রানা, মহাশ্বেতা ভাবনা, শাহরিয়ার হান্নান, সাইফুল ইসলাম, ফারাবি ইমন, আবু ছালেহ রিটু, শাহরিয়ার শাহিল ও একুশী। তাদের অভিনয় আমাদের নিরাশ করে না, বরং টিভি নাটক চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় ভিন্ন স্বাদ দেওয়ার ক্ষমতা রাখে, তা-ই পুনঃপ্রমাণিত।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com