
বিনামূল্যের ডেঙ্গু টেস্টেও গুনতে হয় ফি
প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২২ । ০০:০০ | আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২২ । ০২:৩৫ | প্রিন্ট সংস্করণ
তবিবুর রহমান

প্রতীকী ছবি
দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে। কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা বাদে দেশের সব জেলায় মিলছে এ-সংক্রান্ত রোগী। এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতি ২০১৯ সালেও দেখা দিয়েছিল। সে সময় সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পরীক্ষা বিনামূল্যে করার নির্দেশনা দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তখন এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপনও জারি হয়েছিল। তবে তা বন্দি আছে কাগজ-কলমে; মানছে না কোনো সরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অধিদপ্তরের নির্দেশনা বাস্তবায়নের কথা বলা হলেও সব টেস্টেই নেওয়া হচ্ছে ফি।
রাজধানীর একাধিক হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্ধারিত মূল্য জমা দিয়েই করাতে হচ্ছে ডেঙ্গু পরীক্ষা। রোগীদের ওষুধও কিনতে হচ্ছে বাইরে থেকে। দেওয়া হচ্ছে না মশারি বা মশা থেকে বাঁচার কোনো উপকরণও। টাকা নেওয়া হচ্ছে এ সংশ্নিষ্ট তিনটি পরীক্ষায়; সাধারণ এনএস-১ অ্যান্টিজেন টেস্ট, পল্গাটিলেট ঠিক আছে কিনা তা দেখতে সিবিসি এবং অ্যান্টিবডির পরিমাণ জানতে করাতে হয় আইজিএম পরীক্ষা। এতে গরিব ও অসহায় রোগীদের জন্য বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়েছে। অর্থ সংকটে বেসরকারি হাসপাতালেও চিকিৎসা নিতে পারছে না তারা।
রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনটি পরীক্ষার জন্য এনএস-১-এর জন্য ১০০ টাকা, সিবিসিতে ২৫০ টাকা এবং আইজিএমের জন্য ২৫০ টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে রোগীকে। এ অবস্থা রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে, উত্তর সিটি করপোরেশনের সবচেয়ে বড় কভিড হাসপাতালসহ প্রায় সব হাসপাতালেই। এমনকি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অধীন ৪৬টি নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার কথা থাকলেও অধিকাংশ কেন্দ্রেই টাকা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নানা অজুহাতে এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে রোগীদের ফেরত দেওয়ারও প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এদিকে বেসরকারি হাসপাতালে ভিন্ন ভিন্ন দামে ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হচ্ছে। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলো মনিটরিংয়ের উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে পরীক্ষা করার জন্য নতুন করে নির্দেশনাও দেওয়া হতে পারে। এ ছাড়া বেসরকারি হাসপাতাল এনএস-১ অ্যান্টিজেন পরীক্ষার সেবামূল্য সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা, আইজিজি অ্যান্ড আইজিএম ৫০০ টাকা এবং সিবিসি পরীক্ষার সর্বোচ্চ সেবামূল্য ৪০০ টাকা নেওয়ার নতুন নির্দেশনা জারি করবে। কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এসব পরীক্ষার ক্ষেত্রে সেবামূল্যের চেয়ে বেশি নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. খলিলুর রহমান বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরের পর বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার সেই নির্দেশনার কার্যকাল শেষ হয়ে যায়। এর পর থেকে নির্দিষ্ট ফি নেওয়া হচ্ছে।
তবে ভিন্ন তথ্য জানান মুগদা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ডা. নিয়াতুজ্জামান। তিনি বলেন, ২০১৯ সালে ডেঙ্গু পরীক্ষা বিনামূল্যে করানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী বিনামূল্যে সেবা দিয়ে আসছিলাম। সম্প্রতি নতুন একটি নির্দেশনা পেয়েছি। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, নির্ধারিত মূল্য পরিশোধে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে হবে।
উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রি. জেনারেল জোবায়দুর রহমান বলেন, গত বছর থেকেই আমরা ৪৬টি নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা করে আসছি। তবে যেসব কেন্দ্রে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে সরকারি হিসাবেই এ বছর ৪১ হাজার মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে, মারা গেছে ১৬২ জন। এখনও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরকারি হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন তিন হাজার ৬৬০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে আরও ৪৯৮ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চলতি মাসের চার দিনে সাড়ে তিন হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে মারা গেছে ২১ জন। চলতি বছর সবচেয়ে বেশি রোগী ছিল অক্টোবরে, এ মাসে ২১ হাজার ৯৩২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়। তাদের মধ্যে মারা গেছে ৮৬ জন। বর্তমানে ডেঙ্গু পরিস্থিতির বিপর্যয়কর অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আবারও সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবার বিষয়টি সামনে এসেছে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম গতকাল একটি অনুষ্ঠানে জানান, ডেঙ্গুর সুচিকিৎসা নিশ্চিতে দেশের সরকারি হাসপাতালগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রও সরবরাহ করা হচ্ছে। ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা সব জেলাতেই আছে। এখনও পর্যন্ত সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা বা চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com