
বিনিয়োগ
খুলেছে ট্রেজারি বন্ডের সেকেন্ডারি বাজার
প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২২ । ০০:০০ | আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২২ । ০৯:৪৭ | প্রিন্ট সংস্করণ
সমকাল প্রতিবেদক

প্রতীকী ছবি
বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে সবচেয়ে নিরাপদ আর জনপ্রিয়তায় বাংলাদেশে সবার ওপরে রয়েছে সরকারি সঞ্চয়পত্র। শুধু নিরাপদ বিবেচনাতেই নয়, 'ফিক্সড ইনকাম' বা নির্দিষ্ট আয়ভিত্তিক বিনিয়োগ মাধ্যমগুলোর মধ্যেও সঞ্চয়পত্র এখনও সবার ওপরে। ছয়-নয় ফর্মুলার ব্যাংক সুদহারের নীতির ফলে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকে আমানতের সুদহার যেখানে ৫ থেকে ৬ শতাংশে নেমেছে, তখনও সঞ্চয়পত্রে সুদহার ১১ থেকে পৌনে ১২ শতাংশ।
মজার ব্যাপার হলেও সত্য যে, এর থেকে বেশি সুদের বিনিয়োগ মাধ্যম আছে এই বাংলাদেশেই। ফিক্সড ইনকাম ক্যাটাগরির এই বিনিয়োগ সরকারি গ্যারান্টিযুক্ত হওয়ায় তা সঞ্চয়পত্রের মতোই সম্পূর্ণ নিরাপদ। এ বিনিয়োগ ইন্সট্রুমেন্টের নাম ট্রেজারি বন্ড, যা টি-বন্ড নামেও পরিচিত।
বাংলাদেশ সরকার থেকে ইস্যু করা একটি ট্রেজারি বন্ডের নাম টিবি২০ওয়াই০৭২৭। এ বন্ডের বিপরীতে সর্বাধিক ১৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ সুদ দিচ্ছে সরকার। ২০০৭ সালের ২৫ জুলাই ইস্যু করা এ বন্ডের মেয়াদ ২০ বছর, যার মেয়াদপূর্তি হবে ২০২৭ সালের ২৫ জুলাই। এ বন্ডটির মাধ্যমে সরকার ৫০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল। প্রতি ছয় মাস অন্তর এ বন্ডের সুদ বিতরণ করা হয়।
শুধু এ বন্ডটি নয়, ২০০৭ সালের আগস্টে ইস্যু করা টিবি২০ওয়াই০৮২৭ নামের ট্রেজারি বন্ডটিতে সরকার ১৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ হারে সুদ দিচ্ছে। ১৩ থেকে সোয়া ১৪ শতাংশ সুদ দিচ্ছে আরও ১৭টি ট্রেজারি বন্ডের বিপরীতে। ১২ থেকে ১৩ শতাংশ সুদ দিচ্ছে ৭২টি বন্ডে। ১১ থেকে ১২ শতাংশ সুদ দিচ্ছে, এমন ট্রেজারি বন্ড আছে আরও ৪৬টি।
ট্রেজারি বন্ড কী : ট্রেজারি বন্ডও অন্যান্য বন্ডের মতোই একটি বন্ড। সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে মূলত ব্যক্তি মানুষের কাছ থেকে ধার করে সরকার। এর পরিমাণ তুলনামূলক কম। ট্রেজারি বন্ডের মাধ্যমে সরকার একবারে বড় অঙ্কের টাকা ধার করে। এক্ষেত্রে একবারে ৫০ কোটি থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার ট্রেজারি বন্ডও ইস্যু করেছে সরকার। বর্তমানের চালু আড়াইশ ট্রেজারি বন্ডের মধ্যে ২৪টির প্রতিটির আকার সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশে এর প্রধান বিনিয়োগকারী বাণিজ্যিক ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বীমা কোম্পানি। চাইলে ব্যক্তিরও ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগের সুযোগ আছে। এতদিন ডিলার ব্যাংকের মাধ্যমে ট্রেজারি বন্ড কেনাবেচা হতো বিধায় ওই ব্যাংক-সংশ্নিষ্ট উচ্চ পদের কর্তাব্যক্তি বা তাঁদের পরিচিতরাই এসব বন্ডে বিনিয়োগ করে আসছেন।
দায়িত্ব গ্রহণের পর অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ট্রেজারি বন্ডের কার্যকর সেকেন্ডারি বাজার তৈরির উদ্যোগ নেয়। সম্প্রতি পরীক্ষামূলকভাবে দেশের দুই পুঁজিবাজার ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই ও সিএসই) মাধ্যমে ট্রেজারি বন্ডের সেকেন্ডারি বাজার চালু হয়েছে। এ বাজারের মাধ্যমে যে কোনো শেয়ার কেনার মতো করে ট্রেজারি বন্ডেও বিনিয়োগ করতে পারবেন।
কীভাবে বিনিয়োগ করবেন : আগে ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করার একমাত্র উপায় ছিল কোনো ব্যাংকের মাধ্যমে এ বন্ডে বিনিয়োগ করা। এখন স্টক এক্সচেঞ্জে এ বন্ডের সেকেন্ডারি বাজার তৈরি হওয়ায় এ বাজারের মাধ্যমেও বিনিয়োগ করা যাবে।
ব্যাংকের মাধ্যমে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে, আপনার যে ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট আছে সে ব্যাংককে বলে প্রথমে নিজের জন্য একটি ডিপি আইডি খুলতে হবে। এজন্য এক থেকে তিন সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। ডিপি আইডি খোলার পর বন্ড কেনার জন্য টাকাসহ নির্দেশনা ব্যাংককে দিতে হয়।
আর স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করতে চাইলে প্রথমত অনুমোদিত কোনো ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংকে গিয়ে বিও অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। শেয়ারে বিনিয়োগের জন্য কারও সক্রিয় বিও অ্যাকাউন্ট থাকলে তিনি ওই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই ট্রেজারি বন্ড কিনতে পারবেন।
বিও অ্যাকাউন্ট করার পর সংশ্নিষ্ট ব্রোকার বা মার্চেন্ট ব্যাংকের কাছে ট্রেজারি বন্ড কেনার আদেশ দিলে ওই প্রতিষ্ঠান সেকেন্ডারি বাজারে আপনার পক্ষে বন্ড কেনার আদেশ দেবেন। বিক্রেতা থাকলে আপনার বন্ড কেনা হবে।
ট্রেজারি বন্ডগুলোর প্রতিটির ফেসভেল্যু বা অভিহিত মূল্য বা প্রকৃত মূল্য যাই বলেন, তাহলো ১০০ টাকা। সেকেন্ডারি বাজারে এক লটে এক হাজার বন্ড থাকে। এক লটের কম কেনাবেচার সুযোগ নেই। তাহলে নতুন ইস্যু করা একটি লট বন্ড কিনতে হয়তো এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। সরকারি নিলামে কখনও কখনও ডিসকাউন্টে বিক্রি হয়। আপনি যদি দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করতে চান, তাহলে ব্যাংক আপনার জন্য ভালো ডিসকাউন্টে নিলামে অংশ নেবে।
তবে আপনি যদি উচ্চ সুদযুক্ত পুরোনো কোনো বন্ড কিনতে চান, সেক্ষেত্রে বর্তমান বন্ডহোল্ডার আপনাকে ফেসভেল্যুতে বা প্রকৃত মূল্যে বন্ড বিক্রি করতে চাইবে না। এক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয় হলো বর্তমানে ব্যাংকের সুদহার কত। যে বন্ডটি কিনতে চাচ্ছেন, তার কূপন বা সুদহার কত। এক্ষেত্রে ব্যাংক সুদহার কম ও পড়তির দিকে হলে ওই বন্ড কিনতে বেশি প্রিমিয়াম দিতে হবে।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com