স্বপ্নবাজদের পাঠাগার

প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২২ । ০০:০০ | আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২২ । ১১:২৮ | প্রিন্ট সংস্করণ

কাজী রিতা

ভাগ্যকূল পাঠাগার ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে পাঠকের একাংশ

দুই খুদে পাঠক পাঠাগারে এসেছে বই ফেরত দিতে। বয়স ১০ বছরের বেশি নয়। রেজিস্ট্রার বইয়ে অ্যান্ট্রি করে আগে যে বই নিয়ে পড়েছে, তা ফেরত দিয়ে নতুন বই নিচ্ছে। দেখে অভিভূত হতে হয়- এ পাঠাগারের বেশিরভাগ পাঠকই তৃতীয় থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। এ সংখ্যাটিও কোনো অংশে কম নয়। স্কুলের টিফিন পিরিয়ডে তারা বই নিতে আসে। তাদের পছন্দের বই পাঠাগারে না থাকলে সেটি এনে দেওয়ার জন্য তারা অনুরোধ করে। এটি ভাগ্যকুল পাঠাগার ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের একটি সাধারণ দিনের চিত্র।

শুরু পাঠচক্র দিয়ে। একদল স্বপ্নবাজ মানুষ কয়েক বছর আগে গড়েছিলেন 'বঙ্গ পাঠচক্র'। তাঁরা বই পড়তেন এবং আলোচনা করতেন। নিজেদের মধ্যে বই পড়ার বিষয়টি সীমাবদ্ধ না রেখে তা সমাজের সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া যায়- এ চিন্তা থেকে তাঁরা ২০১৮ সালের মাঝামাঝিতে এসে পাঠাগার করার সিদ্ধান্ত নেন। অনেক সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ৩০০ বই নিয়ে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে ভাগ্যকুল পাঠাগার ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের যাত্রা শুরু ২০১৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি।

পাঠাগারটির অন্যতম উদ্যোক্তা সুদীপ্ত সাহা বলেন, 'শুরুতে সবাই যেন বিনিময় মূল্য ছাড়া বই নিয়ে পড়তে পারে- সেই ভাবনাই ছিল প্রধান। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে বই পড়ার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক পরিবর্তনও জরুরি। সেই লক্ষ্যে পাঠাগার থেকে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক কাজ করা হচ্ছে। পাঠাগার থেকে বিতর্ক প্রতিযোগিতা, চিত্রাঙ্কন, কবিতা পাঠের আয়োজন করা হয়।'

বর্তমানে এ পাঠাগারে বই আছে প্রায় তিন হাজার। আছে ৩টি আলমারি ও একটি ডেস্ক। বিশ্বের সেরা বইগুলো রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। সব বয়সের পাঠক পাঠাগার থেকে নিয়মিত বই নিয়ে পড়তে পারেন।

পাঠাগারের সভাপতি মুজিব রহমান বলেন, 'একদল স্বপ্নবাজ তরুণের আগ্রহে গড়ে উঠেছে এই পাঠাগার। শুরুতে লক্ষ্য রাখা হয়েছে সবচেয়ে সহজভাবে যেন পাঠক বই নিয়ে পড়তে পারেন। আমাদের স্বপ্ন সারাদেশের গ্রাম-মহল্লায় পাঠাগার গড়ে উঠুক- সেই লক্ষ্যে সর্বোচ্চ কাজ করা এবং বই পড়ার মধ্য দিয়ে তরুণ সমাজ মেধা-মননে সাংস্কৃতিক চর্চায় আরও এগিয়ে যাবে।'

করোনার আগে বই পড়ার জন্য অনেক সাড়া পাওয়া যেত। প্রতি সপ্তাহে ১৫০ থেকে ২০০টি বই লেনদেন হতো। করোনার সময় গতি কিছুটা মন্থর হলেও তার পরিমাণ এখন আবার বাড়ছে। পাঠাগারে এই পর্যন্ত তারা ২০০ পর্ব পাঠচক্র অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে কোনো নির্দিষ্ট বই বা সমসাময়িক কোনো বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করা হয়। নিয়মিত সাপ্তাহিক পাঠচক্রে ৫০-৬০ জনের মতো অংশ নেন। এই পাঠাগারের উদ্যোগে 'প্রকর্ষ' নামে একটি ত্রৈমাসিক প্রকাশনা বের হচ্ছে। করোনা-পরবর্তী সময়ে 'কথা আঙ্গিনা' নামে আলোচনা চক্র শুরু হয়েছে।

৫০ জন তরুণ যুক্ত আছেন এ উদ্যোগে। তাঁরা এ পাঠাগারের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। নিজেরাই চাঁদার মাধ্যমে পাঠাগারের ভাড়া, অন্যান্য ব্যয় বহন করেন। স্থানীয় জনগণও পাঠাগারের উন্নয়নে পৃষ্ঠপোষকতা করেন।

এই পাঠাগারের কাজ, সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের জেলায়। তাঁরাও আগ্রহী হয়ে উঠছেন বই পড়ার ব্যাপারে। দুই দশক ধরে কোনো পাঠাগার ছিল না এখানে। পাঠাগারটি শুরু করার পর এলাকার মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে। তাঁরা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে স্বতঃস্ম্ফূর্তভাবে অংশ নিচ্ছেন। া

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com