লাগাতার দরপতন শেয়ারবাজারে

সাত কার্যদিবসে সূচক হারিয়েছে প্রায় ২০০ পয়েন্ট

প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২২ । ০৯:০৫ | আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২২ । ০৯:০৫

সমকাল প্রতিবেদক

প্রতীকী ছবি

অধিকাংশ শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে নেমে আসার পরও লাগাতার দরপতন চলছে শেয়ারবাজারে। সর্বশেষ সাত কার্যদিবসের মধ্যে ছয় দিনই সূচকে বড় পতন হয়েছে। ফ্লোর প্রাইসের ওপরে যে ৭০ থেকে ৮০টি শেয়ার রয়েছে, সেগুলোর দরপতনই এ সূচক পতনের কারণ। বাজারসংশ্নিষ্টরা জানাচ্ছেন, দরপতন অব্যাহত থাকলে এখান থেকে আর সর্বোচ্চ ১০০-১২০ পয়েন্ট সূচকের পতন হতে পারবে, তার বেশি নয়।

গত কয়েক দিনের লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত সপ্তাহের সোমবার থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ২০১ পয়েন্ট হারিয়ে ৬২১৮ পয়েন্টে নেমেছে। এর মধ্যে গতকাল হারিয়েছে ৩৫ পয়েন্ট। গত বৃহস্পতিবার কেবল ৩ পয়েন্ট বেড়েছিল।

লাগাতার দরপতন রোধে গত ৩১ জুলাই দ্বিতীয় দফায় ফ্লোর প্রাইস কার্যকরের আগে ডিএসইএক্স সূচক ৫৯৮০ পয়েন্ট পর্যন্ত নামে। যে নিয়মে ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করা হয়, তাতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিংহভাগ শেয়ারের দর বেড়ে যায়। এ কারণে মূল্য সূচকও স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাড়ে অন্তত ১০০ পয়েন্ট। এর সঙ্গে ৩১ জুলাইয়ের দরবৃদ্ধিতে ভর করে ওই দিন সূচক ১৫৩ পয়েন্ট বেড়ে ৬১৩৪ পয়েন্টে উঠেছিল। বাজারসংশ্নিষ্টরা জানান, এখন সব শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে নেমে এলে সূচক হয়তো ৬০৮০ পয়েন্ট পর্যন্ত নামতে পারে, এর নিচে নয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, এখন অল্প কিছু শেয়ার ফ্লোর প্রাইসের তুলনায় বেশ ওপরে আছে। সে ক্ষেত্রে এখনকার অবস্থান থেকে সূচকের মোট পতন হওয়ার জায়গা আছে আরও ১০০ পয়েন্টের মতো, এর বেশি নয়। ওই কর্মকর্তা বলেন, আক্ষরিক অর্থেই শেয়ারবাজার এখন খাদের কিনারে।

গতকাল শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৮৯ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩১৯টির কেনাবেচা হয়েছে। ৭০ শেয়ারের কোনো কেনাবেচাই হয়নি। যেসব শেয়ারের কেনাবেচা হয়েছে, তার মধ্যে মাত্র ২৪টির দর বেড়েছে এবং কমেছে ৬১টির। বাকি ২৩৪টির দর অপরিবর্তিত ছিল।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গতকালের দরপতনে ফ্লোর প্রাইসে নেমে আসা শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের সংখ্যা বেড়ে ৩০৬টিতে উন্নীত হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল যুক্ত হয়েছে ৬টি। যে ৮৩টি শেয়ার ফ্লোর প্রাইসের ওপরে রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে ৩৬টি ফ্লোর প্রাইসের তুলনায় সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ বেশিতে কেনাবেচা হয়েছে। অর্থাৎ এগুলো যে কোনো সময় ফ্লোর প্রাইসে নেমে আসতে পারে। ১০ শতাংশের বেশি দরে কেনাবেচা হচ্ছে বাকি ৩৫ শেয়ার।

দিন যত গড়াচ্ছে, টাকার অঙ্কে লেনদেনও কমে আসছে। শেয়ারবাজারসংশ্নিষ্টরা বলছেন, ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হলে বড় দরপতনের শঙ্কা থেকে শেয়ার কেনার সাহস না করাতে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল ডিএসইতে ৫৬১ কোটি টাকারও কম মূল্যের শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। এর মধ্যে লেনদেনে শীর্ষ ২০ শেয়ারের লেনদেন ছিল মোটের ৬৭ দশমিক ৫২ শতাংশ। এ ছাড়া শীর্ষ ৫০ শেয়ারের লেনদেন ছিল ৯০ দশমিক ৭২ এবং শীর্ষ ১০০ শেয়ারের ছিল ৯৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

এ অবস্থায় লেনদেন বাড়াতে ফ্লোর প্রাইসের তুলনায় ১০ শতাংশ কমে শেয়ার কেনাবেচার সুযোগ দিয়ে গতকাল নতুন এক আদেশ জারি করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। এ আদেশ অনুযায়ী, শুধু ব্লক মার্কেটে ফ্লোর প্রাইসের তুলনায় ১০ শতাংশ কম দরে শেয়ার কেনাবেচা করা যাবে।

এদিকে লেনদেন বাড়ানোর জন্য ফ্লোর প্রাইস তুলে দিতে বিএসইসির কাছে অনুরোধ করছে বিএমবিএ- এমন গুজব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়াচ্ছে বলে জানিয়েছে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সংগঠনটি। গতকাল সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিএমবিএ বলেছে, ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার বিষয়ে বিএমবিএ এখন পর্যন্ত কারও সঙ্গে আলোচনা করেনি এবং ভবিষ্যতেও করবে না। মিথ্যা বা অপপ্রচার থেকে সতর্ক থাকতে সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছেন সংগঠনটির মহাসচিব রিয়াদ মতিন।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com