
সাক্ষাৎকার: দিলীপ বড়ূয়া
বিএনপি কখনোই আওয়ামী লীগের বিকল্প নয়
প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২২ । ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
সাক্ষাৎকার গ্রহণ: এহ্সান মাহমুদ

বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের (এম-এল) সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ূয়া ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের শিল্পমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৪ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দেওয়ার সময় তিনি দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। ১৯৬৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। একই বিভাগ থেকে ১৯৭০ সালে স্নাতক ও ১৯৭১ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এ ছাড়া একই বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা এবং আইন বিষয়েও পড়াশোনা করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টিতে (এম-এল) যোগ দেন। দিলীপ বড়ূয়ার জন্ম ১৯৪৯ সালে, চট্টগ্রামে।
সমকাল: আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের প্রথম মেয়াদে আপনি শিল্পমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এখনও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়; কিন্তু আপনারা সরকারে নেই। এখন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে সাম্যবাদী দলের সম্পর্ককে কীভাবে চিহ্নিত করবেন?
দিলীপ বড়ূয়া: একটি জোট হয় কতগুলো প্রয়োজনের নিরিখে। আবার এই জোট চিরস্থায়ী কোনো বিষয়ও নয়। ১৪ দলীয় জোটও সেভাবে গড়ে উঠেছিল। ২০০৪ সালে যখন গ্রেনেড হামলা হয়েছিল, তখন আমরা ১১ দলীয় জোটে ছিলাম। সেই সময়ে বর্তমানের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলের নেতা ছিলেন। তিনি একই সঙ্গে আওয়ামী লীগেরও প্রধান। তখন আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছিলেন- একসঙ্গে আন্দোলন, একসঙ্গে নির্বাচন, একসঙ্গে ক্ষমতা। সে কথায় আমরা আশ্বস্ত হয়েছিলাম। পরে ১১ দলীয় জোটের সঙ্গে যুক্ত হলো আওয়ামী লীগ, জাসদ ও ন্যাপ। এর পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার হয়েছিল। সেই সরকারকেই কেবল মহাজোটের সরকার বলা যাবে। এর পর ২০১৪ ও '১৮ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার গঠন হয়েছে। সেখানে জোটের আর কারও অংশীদারিত্ব নেই। তবে আমরা ক্ষমতাসীন জোটে আছি। এর বাইরে বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের যে লক্ষ্য ও আদর্শ- লুটেরা শ্রেণির কাছ থেকে দেশকে রক্ষা করা, সাম্য নিশ্চিতে লড়াই করা, তা অব্যাহত আছে।
সমকাল: আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আপনারা যে লক্ষ্য ও অঙ্গীকার নিয়ে জোটবদ্ধ হলেন, তা কতটা পূরণ হয়েছে?
দিলীপ বড়ূয়া: আমাদের সব লক্ষ্য বা কর্মসূচি বাস্তবায়ন হয়নি সত্যি। কিছু কিছু হয়েছে। যেমন- দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রায় কার্যকর হয়েছে। সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করা দল জামায়াতের রাজনীতির ওপর আইনি নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি বিচারাধীন। জামায়াতের বিরুদ্ধে দেশে একটি জনমত তৈরি হয়েছে। মোটা দাগে এমন কিছু দাবি পূরণ হয়েছে। আবার ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নিয়ে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াত যেভাবে সহিংসতা চালিয়েছে, সে সময়ে আমরা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পাশে সমর্থন নিয়ে থেকেছি। দেশে হলি আর্টিসানের মতো ঘটনা ঘটেছে, যা কিনা বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র প্রমাণের জন্য করা হয়েছিল। সেখান থেকে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। পরে চীনের প্রেসিডেন্ট যখন বাংলাদেশ সফরে এলেন; বিশ্ববাসী দেখল, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। এখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এটা ঠিক, বর্তমানে যে সরকার, তা আওয়ামী লীগের। সেখানে আমাদের অংশগ্রহণ নেই। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আবার ১৪ দল ঐক্যবদ্ধ হবে।
সমকাল: এখন কি তবে ১৪ দল অস্তিত্বহীন? নাকি ঘুমিয়ে আছে বলা যায়?
দিলীপ বড়ূয়া: যেহেতু ১৪ দলের একটি কাঠামো আছে, ১৪ দলের একজন সমন্বয়ক আছেন, ১৪ দলের নেত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা আছেন, তাই ১৪ দল অবস্থান করছে- এটি বলতে হবে। জোটগতভাবে ১৪ দল যতটা তৎপর থাকার কথা ছিল ততটা নেই। দলগতভাবে যার যা কাজ তা আমরা করছি। আমরা কয়েক দিন আগে সেমিনার করলাম। সামনে আরও কর্মসূচি আছে। একইভাবে জাসদও কর্মসূচি পালন করছে। যার যার কাজ করে যাচ্ছে। জোটগতভাবে হচ্ছে না, এটি সত্যি। এখন যে রাজনৈতিক বাস্তবতা, তাতে আমরা মনে করি, এখন শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর এককভাবে নির্ভর করা কিংবা প্রশাসনের ওপর নির্ভরতায় বর্তমান অবস্থা থেকে পরিত্রাণ মিলবে না। এ জন্য সবাই মিলে কাজ করতে হবে। ১৪ দলীয় জোটকে সক্রিয় করার মধ্য দিয়ে জনসাধারণের কাছে পৌঁছতে পারলে, জনগণকে সম্পৃক্ত করা গেলে বর্তমান অবস্থায় বিজয় লাভ করা সম্ভব। যদি তাতে কোনো ব্যত্যয় ঘটে তাহলে দেশে আশু কোনো অরাজকতা ঘটার আশঙ্কা আছে।
সমকাল: আপনি বলছেন, জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। কিন্তু দেশে একটি আলোচনা রয়েছে- বড় পরিসরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে আর কোনো রাজনৈতিক দল জনগণের কাছে পৌঁছাতে পারে না।
দিলীপ বড়ূয়া: এটি এক সুপারফিশিয়াল কথা। আওয়ামী লীগ এককভাবে পারছে না বলেই তো আমাদের প্রয়োজন হয়েছে। আওয়ামী লীগ একা পারছে না বলেই ১৪ দল গঠন করা হয়েছিল। আমি যদি আমার দলের কথা বলি, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের বিশ্বাসযোগ্যতা আছে। দেশে ন্যায়ভিত্তিক ও সমতার ভিত্তিতে সমাজ গঠন করতে হলে সাম্যবাদী দলের প্রয়োজন হবে। শিল্পমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলাম; কোনো দুর্নীতি স্পর্শ করতে পারেনি। দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছিলাম। কাদায় ছিলাম, কিন্তু কাদা আমাদের স্পর্শ করতে পারেনি। বাইন মাছ যেমন কাদায় থাকে, কিন্তু কাদা গায়ে লাগে না; তেমনি একজন কমিউনিস্ট হিসেবে শিল্প মন্ত্রণালয়ের মতো একটি জায়গায় কোনো দুর্নীতি গায়ে লাগেনি। সাম্রাজ্যবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও লুটেরা ধনিক শ্রেণি তথা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক দুর্বৃত্তায়নের হাত থেকে দেশবাসীকে রক্ষার জন্য আমরা রাজনীতি করি। জাতীয় সার্বভৌমত্বকে সুরক্ষা করতে আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করেছিলাম।
সমকাল: এখন বিএনপি যেভাবে রাজপথে আন্দোলন করছে, এটি মোকাবিলায় কোনো কর্মসূচি আছে কি আপনাদের? আগামী নির্বাচন সামনে রেখে কীভাবে বিরোধীদের মোকাবিলা করবেন- দল বা জোটগতভাবে?
দিলীপ বড়ূয়া: আমি মনে করি, এখনকার যে পরিস্থিতি, তা আওয়ামী লীগ একা মোকাবিলা করতে পারবে না। আমাদের প্রয়েজিন আছে। আবার আমাদেরও আওয়ামী লীগের প্রয়োজন আছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে ২৩ দফা নিয়ে এক হয়ে আমরা আন্দোলন করেছিলাম। তাই আমার মনে হয়, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে জোটবদ্ধ হয়েই আন্দোলন-সংগ্রাম করা হবে। এখন হয়তো আওয়ামী লীগের সভাপতি, যিনি আবার দেশের প্রধানমন্ত্রী; কোনো সীমাবদ্ধতার জন্য আমাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু করেননি। আমি আশাবাদী, আগামী ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পরেই আমাদের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ তৈরি হবে।
সমকাল: ১৪ দল কি আগের মতো বিএনপিকে মোকাবিলা করতে পারবে?
দিলীপ বড়ূয়া: মাও সেতুং-এর একটি কথা আমি উল্লেখ করতে চাই- 'রাজনীতি কিছুই না। রাজনীতি হচ্ছে দ্বন্দ্বগুলোকে মোকাবিলা করা।' আমার মনে হয়, বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এখন এই কাজটি করছেন। আমি বিশ্বাস করি, তিনি সামনের দিনেও এসব সমস্যা মোকাবিলা করবেন। এখন বিএনপি রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করছে। কিন্তু ক্ষমতায় থাকতে বিএনপি কী করেছিল, তা আমাদের মনে আছে তো। কিন্তু এখন জনগণের কাছে আওয়ামী লীগের বিকল্প হচ্ছে বিএনপি। আমি মনে করি, এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী প্রশাসন। প্রশাসন মাঝেমধ্যে এমন সব পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে থাকে, যাতে মানুষ বিএনপির দিকে ধাবিত হচ্ছে। তার মানে এই নয়, আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপি ভালো। কিন্তু প্রশাসনের কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
সমকাল: এখন দেশে অর্থনেতিক ও খাদ্য সংকট নিয়ে আলোচনা আছে। এ জন্য কাকে দায়ী করবেন? প্রশাসন, না রাজনীতিকে?
দিলীপ বড়ূয়া: আমি বিশ্বাস করি, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষকে কোনো বিপদে ফেলবেন না। তবে তিনি এখন যে প্রশাসন নিয়ে বসে আছেন, তারা হচ্ছে রক্ষণশীল। এই প্রশাসন প্রতিক্রিয়াশীল, সুবিধাভোগী ও গণবিরোধী। এই প্রশাসন দিয়ে তিনি যা করছেন, তা অভাবনীয়। আবার দেশের এক শ্রেণির মুনাফালোভী ব্যবসায়ী রয়েছে, যারা এই সুযোগে তেলের দাম, চিনির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। অল্প দামে কেনার পরও বেশি দামে বিক্রি করছে। এর দায় যাচ্ছে সরকারের দিকে। কিন্তু প্রশাসনে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা এসব নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। এর সঙ্গে রয়েছে কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠী, যারা একই সঙ্গে ডলার কিনে রেখে সংকট তৈরি করছে। আবার এরাই বলছে আইএমএফ থেকে ঋণ নিতে। প্রশাসন ও ব্যবসায়ী শ্রেণির অসহায় শিকার হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাঁকে বিপদে ফেলছেন।
সমকাল: আপনার বিবেচনায় এখন দেশের সংকট কোনটি- অর্থনৈতিক, নাকি রাজনৈতিক?
দিলীপ বড়ূয়া: একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে আমি চিন্তা করি, বিএনপি ক্ষমতায় যখন ছিল, তখন তারা কী করেছে? তারা এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কথা বলে। কিন্তু সেই ব্যবস্থাকে তারাই বিতর্কিত করেছে নিজ দলীয় ও পছন্দের লোকদের নিয়োগ দিয়ে। বিএনপি হচ্ছে রাজনীতিতে দক্ষিণপন্থি এবং লুটেরা শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করে এমন দল। এখনকার প্রধানমন্ত্রী তবুও নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করছেন। সেখানে কোনো নিয়ন্ত্রণের বালাই নেই। এখন তারা বলছে- শেখ হাসিনাকে হটাতে হবে। কেন? শেখ হাসিনাকে হটানোর প্রশ্ন আসে কেন? যদি পারে ভোটের মাধ্যমে; জনগণ যদি চায় তাহলে বিএনপি আসবে।
সমকাল: বিএনপি তো নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার দাবি জানিয়ে আসছে।
দিলীপ বড়ূয়া: জনগণ যদি সঙ্গে থাকে, তাহলে সরকার তো আগের মতো যেনতেন নির্বাচন দিতে পারবে না। জনগণকে নিয়ে বিএনপিকে কাজ করতে হবে। তা না করে বিএনপির শত্রু যেন ব্যক্তি শেখ হাসিনা! শেখ হাসিনাকে ব্যক্তিগত শত্রু মনে করলে তো হবে না। তিনি অনেক বড় নেতা। সহসা বাংলাদেশে তাঁর মতো রাজনৈতিক নেতা আর আসবে না।
সমকাল: আগামী নির্বাচনকে কীভাবে গ্রহণযোগ্য করা যাবে?
দিলীপ বড়ূয়া: বিএনপি এখন বিভ্রান্তিকর কথা বলছে। একবার বলছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, আরেকবার বলছে জাতীয় সরকার। তাদের নির্দিষ্ট রূপরেখা দিতে হবে। এখন তাদের কথায় ঘুরেফিরে একটি কথাই আসছে। তা হলো শেখ হাসিনার বিরোধিতা করা। এভাবে তো হবে না। তাদের ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে আসতে হবে। আমাকে কেউ যদি বলেন, আপনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার মেনে নিন। আমি কেন মেনে নেব? ক্ষমতা কে ছাড়তে চায়! আপনি আন্দোলন-সংগ্রাম করেন। আন্দোলন করে দেখেন, কী করতে পারেন। আপনার ক্ষমতা থাকলে করেন। আমাদের দলের অবস্থান হচ্ছে- আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই না। শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হবে। তিনিই নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান থাকবেন। সেই নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। তাতে যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে, আসবে।
সমকাল: বিএনপি যদি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচনে না আসে?
দিলীপ বড়ূয়া: তারা আসবে না; করবে কী? বিপ্লব করবে? তারা কি বিপ্লবী পার্টি? তারা যা ভাবছে তা ভুল। ২০১৪ সালে তারা এলো না। আবার ২০১৮ সালে অর্ধেক খেলা রেখে উঠে পড়েছে।
সমকাল: কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনকে বিএনপি ছাড়াও অনেকে 'রাতের ভোট' হিসেবে চিহ্নিত করছে।
দিলীপ বড়ূয়া: রাতে ভোট হলো; তারা প্রতিহত করল না কেন! তারা কীসের বিরোধী দল? সরকার কী করবে, তারা তা পাহারা দেবে না?
সমকাল: বলতে চাইছেন, রাতের ভোট বিএনপির পাহারা দেওয়া উচিত ছিল?
দিলীপ বড়ূয়া: অবশ্যই। বিএনপির পাহারা দেওয়া উচিত ছিল। এটাই পলিটিক্স। এটাই ট্রিকস; রাজনৈতিক কৌশল।
সমকাল: নির্বাচনকে তবে কৌশল বলছেন?
দিলীপ বড়ূয়া: অবশ্যই কৌশল। সবসময়ই নির্বাচন কৌশল ছিল। পাকিস্তানে ইমরান খান কৌশল করছেন না? তিনি প্রথমে বললেন, আমেরিকা তাঁকে উচ্ছেদ করেছে। এখন আবার বলছেন, আমেরিকা তাঁর শত্রু নয়। তাঁকে উচ্ছেদ করেনি। প্রশ্নটা হচ্ছে- দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে, লুটপাটের কারণে, চাঁদাবাজির কারণে, অর্থ পাচারের কারণে মানুষের ক্ষোভ আছে। আবার যুবলীগ, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ নামধারীদের কারণে কিছু মানুষের ক্ষোভ আছে। সে জন্য মানুষ ক্ষুব্ধ। কিন্তু তার অর্থ এই নয়, বিএনপি ধোয়া তুলসী পাতা।
সমকাল: একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ হিসেবে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আপনার বার্তা কী?
দিলীপ বড়ূয়া: দেশবাসীর প্রতি আমার বার্তা হচ্ছে- করোনা মহামারি থেকে শুরু করে সব দুর্যোগ শেখ হাসিনা দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করছেন। তাই শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিকল্প বিএনপি কিংবা তারেক রহমান নন।
সমকাল: আওয়ামী লীগ বা বিএনপির বাইরে আপনারা বিকল্প হয়ে উঠতে পারলেন না কেন?
দিলীপ বড়ূয়া: সারা দুনিয়ায় একটি পরিবর্তন এসেছে। এখন রাজনীতি হয়ে গেছে বাজারনির্ভর, প্রচারণানির্ভর। সেখানে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে আমরা পিছিয়ে পড়েছি। এখন আদর্শের রাজনীতির তুলনায় প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতি সব দখল করে নিচ্ছে।
সমকাল: আপনাকে ধন্যবাদ।
দিলীপ বড়ূয়া: সমকালকেও ধন্যবাদ।
সমকাল: আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের প্রথম মেয়াদে আপনি শিল্পমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এখনও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়; কিন্তু আপনারা সরকারে নেই। এখন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে সাম্যবাদী দলের সম্পর্ককে কীভাবে চিহ্নিত করবেন?
দিলীপ বড়ূয়া: একটি জোট হয় কতগুলো প্রয়োজনের নিরিখে। আবার এই জোট চিরস্থায়ী কোনো বিষয়ও নয়। ১৪ দলীয় জোটও সেভাবে গড়ে উঠেছিল। ২০০৪ সালে যখন গ্রেনেড হামলা হয়েছিল, তখন আমরা ১১ দলীয় জোটে ছিলাম। সেই সময়ে বর্তমানের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলের নেতা ছিলেন। তিনি একই সঙ্গে আওয়ামী লীগেরও প্রধান। তখন আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছিলেন- একসঙ্গে আন্দোলন, একসঙ্গে নির্বাচন, একসঙ্গে ক্ষমতা। সে কথায় আমরা আশ্বস্ত হয়েছিলাম। পরে ১১ দলীয় জোটের সঙ্গে যুক্ত হলো আওয়ামী লীগ, জাসদ ও ন্যাপ। এর পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার হয়েছিল। সেই সরকারকেই কেবল মহাজোটের সরকার বলা যাবে। এর পর ২০১৪ ও '১৮ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার গঠন হয়েছে। সেখানে জোটের আর কারও অংশীদারিত্ব নেই। তবে আমরা ক্ষমতাসীন জোটে আছি। এর বাইরে বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের যে লক্ষ্য ও আদর্শ- লুটেরা শ্রেণির কাছ থেকে দেশকে রক্ষা করা, সাম্য নিশ্চিতে লড়াই করা, তা অব্যাহত আছে।
সমকাল: আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আপনারা যে লক্ষ্য ও অঙ্গীকার নিয়ে জোটবদ্ধ হলেন, তা কতটা পূরণ হয়েছে?
দিলীপ বড়ূয়া: আমাদের সব লক্ষ্য বা কর্মসূচি বাস্তবায়ন হয়নি সত্যি। কিছু কিছু হয়েছে। যেমন- দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রায় কার্যকর হয়েছে। সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করা দল জামায়াতের রাজনীতির ওপর আইনি নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি বিচারাধীন। জামায়াতের বিরুদ্ধে দেশে একটি জনমত তৈরি হয়েছে। মোটা দাগে এমন কিছু দাবি পূরণ হয়েছে। আবার ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নিয়ে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াত যেভাবে সহিংসতা চালিয়েছে, সে সময়ে আমরা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পাশে সমর্থন নিয়ে থেকেছি। দেশে হলি আর্টিসানের মতো ঘটনা ঘটেছে, যা কিনা বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র প্রমাণের জন্য করা হয়েছিল। সেখান থেকে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। পরে চীনের প্রেসিডেন্ট যখন বাংলাদেশ সফরে এলেন; বিশ্ববাসী দেখল, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। এখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এটা ঠিক, বর্তমানে যে সরকার, তা আওয়ামী লীগের। সেখানে আমাদের অংশগ্রহণ নেই। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আবার ১৪ দল ঐক্যবদ্ধ হবে।
সমকাল: এখন কি তবে ১৪ দল অস্তিত্বহীন? নাকি ঘুমিয়ে আছে বলা যায়?
দিলীপ বড়ূয়া: যেহেতু ১৪ দলের একটি কাঠামো আছে, ১৪ দলের একজন সমন্বয়ক আছেন, ১৪ দলের নেত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা আছেন, তাই ১৪ দল অবস্থান করছে- এটি বলতে হবে। জোটগতভাবে ১৪ দল যতটা তৎপর থাকার কথা ছিল ততটা নেই। দলগতভাবে যার যা কাজ তা আমরা করছি। আমরা কয়েক দিন আগে সেমিনার করলাম। সামনে আরও কর্মসূচি আছে। একইভাবে জাসদও কর্মসূচি পালন করছে। যার যার কাজ করে যাচ্ছে। জোটগতভাবে হচ্ছে না, এটি সত্যি। এখন যে রাজনৈতিক বাস্তবতা, তাতে আমরা মনে করি, এখন শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর এককভাবে নির্ভর করা কিংবা প্রশাসনের ওপর নির্ভরতায় বর্তমান অবস্থা থেকে পরিত্রাণ মিলবে না। এ জন্য সবাই মিলে কাজ করতে হবে। ১৪ দলীয় জোটকে সক্রিয় করার মধ্য দিয়ে জনসাধারণের কাছে পৌঁছতে পারলে, জনগণকে সম্পৃক্ত করা গেলে বর্তমান অবস্থায় বিজয় লাভ করা সম্ভব। যদি তাতে কোনো ব্যত্যয় ঘটে তাহলে দেশে আশু কোনো অরাজকতা ঘটার আশঙ্কা আছে।
সমকাল: আপনি বলছেন, জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। কিন্তু দেশে একটি আলোচনা রয়েছে- বড় পরিসরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে আর কোনো রাজনৈতিক দল জনগণের কাছে পৌঁছাতে পারে না।
দিলীপ বড়ূয়া: এটি এক সুপারফিশিয়াল কথা। আওয়ামী লীগ এককভাবে পারছে না বলেই তো আমাদের প্রয়োজন হয়েছে। আওয়ামী লীগ একা পারছে না বলেই ১৪ দল গঠন করা হয়েছিল। আমি যদি আমার দলের কথা বলি, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের বিশ্বাসযোগ্যতা আছে। দেশে ন্যায়ভিত্তিক ও সমতার ভিত্তিতে সমাজ গঠন করতে হলে সাম্যবাদী দলের প্রয়োজন হবে। শিল্পমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলাম; কোনো দুর্নীতি স্পর্শ করতে পারেনি। দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছিলাম। কাদায় ছিলাম, কিন্তু কাদা আমাদের স্পর্শ করতে পারেনি। বাইন মাছ যেমন কাদায় থাকে, কিন্তু কাদা গায়ে লাগে না; তেমনি একজন কমিউনিস্ট হিসেবে শিল্প মন্ত্রণালয়ের মতো একটি জায়গায় কোনো দুর্নীতি গায়ে লাগেনি। সাম্রাজ্যবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও লুটেরা ধনিক শ্রেণি তথা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক দুর্বৃত্তায়নের হাত থেকে দেশবাসীকে রক্ষার জন্য আমরা রাজনীতি করি। জাতীয় সার্বভৌমত্বকে সুরক্ষা করতে আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করেছিলাম।
সমকাল: এখন বিএনপি যেভাবে রাজপথে আন্দোলন করছে, এটি মোকাবিলায় কোনো কর্মসূচি আছে কি আপনাদের? আগামী নির্বাচন সামনে রেখে কীভাবে বিরোধীদের মোকাবিলা করবেন- দল বা জোটগতভাবে?
দিলীপ বড়ূয়া: আমি মনে করি, এখনকার যে পরিস্থিতি, তা আওয়ামী লীগ একা মোকাবিলা করতে পারবে না। আমাদের প্রয়েজিন আছে। আবার আমাদেরও আওয়ামী লীগের প্রয়োজন আছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে ২৩ দফা নিয়ে এক হয়ে আমরা আন্দোলন করেছিলাম। তাই আমার মনে হয়, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে জোটবদ্ধ হয়েই আন্দোলন-সংগ্রাম করা হবে। এখন হয়তো আওয়ামী লীগের সভাপতি, যিনি আবার দেশের প্রধানমন্ত্রী; কোনো সীমাবদ্ধতার জন্য আমাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু করেননি। আমি আশাবাদী, আগামী ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পরেই আমাদের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ তৈরি হবে।
সমকাল: ১৪ দল কি আগের মতো বিএনপিকে মোকাবিলা করতে পারবে?
দিলীপ বড়ূয়া: মাও সেতুং-এর একটি কথা আমি উল্লেখ করতে চাই- 'রাজনীতি কিছুই না। রাজনীতি হচ্ছে দ্বন্দ্বগুলোকে মোকাবিলা করা।' আমার মনে হয়, বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এখন এই কাজটি করছেন। আমি বিশ্বাস করি, তিনি সামনের দিনেও এসব সমস্যা মোকাবিলা করবেন। এখন বিএনপি রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করছে। কিন্তু ক্ষমতায় থাকতে বিএনপি কী করেছিল, তা আমাদের মনে আছে তো। কিন্তু এখন জনগণের কাছে আওয়ামী লীগের বিকল্প হচ্ছে বিএনপি। আমি মনে করি, এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী প্রশাসন। প্রশাসন মাঝেমধ্যে এমন সব পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে থাকে, যাতে মানুষ বিএনপির দিকে ধাবিত হচ্ছে। তার মানে এই নয়, আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপি ভালো। কিন্তু প্রশাসনের কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
সমকাল: এখন দেশে অর্থনেতিক ও খাদ্য সংকট নিয়ে আলোচনা আছে। এ জন্য কাকে দায়ী করবেন? প্রশাসন, না রাজনীতিকে?
দিলীপ বড়ূয়া: আমি বিশ্বাস করি, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষকে কোনো বিপদে ফেলবেন না। তবে তিনি এখন যে প্রশাসন নিয়ে বসে আছেন, তারা হচ্ছে রক্ষণশীল। এই প্রশাসন প্রতিক্রিয়াশীল, সুবিধাভোগী ও গণবিরোধী। এই প্রশাসন দিয়ে তিনি যা করছেন, তা অভাবনীয়। আবার দেশের এক শ্রেণির মুনাফালোভী ব্যবসায়ী রয়েছে, যারা এই সুযোগে তেলের দাম, চিনির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। অল্প দামে কেনার পরও বেশি দামে বিক্রি করছে। এর দায় যাচ্ছে সরকারের দিকে। কিন্তু প্রশাসনে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা এসব নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। এর সঙ্গে রয়েছে কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠী, যারা একই সঙ্গে ডলার কিনে রেখে সংকট তৈরি করছে। আবার এরাই বলছে আইএমএফ থেকে ঋণ নিতে। প্রশাসন ও ব্যবসায়ী শ্রেণির অসহায় শিকার হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাঁকে বিপদে ফেলছেন।
সমকাল: আপনার বিবেচনায় এখন দেশের সংকট কোনটি- অর্থনৈতিক, নাকি রাজনৈতিক?
দিলীপ বড়ূয়া: একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে আমি চিন্তা করি, বিএনপি ক্ষমতায় যখন ছিল, তখন তারা কী করেছে? তারা এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কথা বলে। কিন্তু সেই ব্যবস্থাকে তারাই বিতর্কিত করেছে নিজ দলীয় ও পছন্দের লোকদের নিয়োগ দিয়ে। বিএনপি হচ্ছে রাজনীতিতে দক্ষিণপন্থি এবং লুটেরা শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করে এমন দল। এখনকার প্রধানমন্ত্রী তবুও নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করছেন। সেখানে কোনো নিয়ন্ত্রণের বালাই নেই। এখন তারা বলছে- শেখ হাসিনাকে হটাতে হবে। কেন? শেখ হাসিনাকে হটানোর প্রশ্ন আসে কেন? যদি পারে ভোটের মাধ্যমে; জনগণ যদি চায় তাহলে বিএনপি আসবে।
সমকাল: বিএনপি তো নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার দাবি জানিয়ে আসছে।
দিলীপ বড়ূয়া: জনগণ যদি সঙ্গে থাকে, তাহলে সরকার তো আগের মতো যেনতেন নির্বাচন দিতে পারবে না। জনগণকে নিয়ে বিএনপিকে কাজ করতে হবে। তা না করে বিএনপির শত্রু যেন ব্যক্তি শেখ হাসিনা! শেখ হাসিনাকে ব্যক্তিগত শত্রু মনে করলে তো হবে না। তিনি অনেক বড় নেতা। সহসা বাংলাদেশে তাঁর মতো রাজনৈতিক নেতা আর আসবে না।
সমকাল: আগামী নির্বাচনকে কীভাবে গ্রহণযোগ্য করা যাবে?
দিলীপ বড়ূয়া: বিএনপি এখন বিভ্রান্তিকর কথা বলছে। একবার বলছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, আরেকবার বলছে জাতীয় সরকার। তাদের নির্দিষ্ট রূপরেখা দিতে হবে। এখন তাদের কথায় ঘুরেফিরে একটি কথাই আসছে। তা হলো শেখ হাসিনার বিরোধিতা করা। এভাবে তো হবে না। তাদের ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে আসতে হবে। আমাকে কেউ যদি বলেন, আপনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার মেনে নিন। আমি কেন মেনে নেব? ক্ষমতা কে ছাড়তে চায়! আপনি আন্দোলন-সংগ্রাম করেন। আন্দোলন করে দেখেন, কী করতে পারেন। আপনার ক্ষমতা থাকলে করেন। আমাদের দলের অবস্থান হচ্ছে- আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই না। শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হবে। তিনিই নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান থাকবেন। সেই নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। তাতে যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে, আসবে।
সমকাল: বিএনপি যদি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচনে না আসে?
দিলীপ বড়ূয়া: তারা আসবে না; করবে কী? বিপ্লব করবে? তারা কি বিপ্লবী পার্টি? তারা যা ভাবছে তা ভুল। ২০১৪ সালে তারা এলো না। আবার ২০১৮ সালে অর্ধেক খেলা রেখে উঠে পড়েছে।
সমকাল: কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনকে বিএনপি ছাড়াও অনেকে 'রাতের ভোট' হিসেবে চিহ্নিত করছে।
দিলীপ বড়ূয়া: রাতে ভোট হলো; তারা প্রতিহত করল না কেন! তারা কীসের বিরোধী দল? সরকার কী করবে, তারা তা পাহারা দেবে না?
সমকাল: বলতে চাইছেন, রাতের ভোট বিএনপির পাহারা দেওয়া উচিত ছিল?
দিলীপ বড়ূয়া: অবশ্যই। বিএনপির পাহারা দেওয়া উচিত ছিল। এটাই পলিটিক্স। এটাই ট্রিকস; রাজনৈতিক কৌশল।
সমকাল: নির্বাচনকে তবে কৌশল বলছেন?
দিলীপ বড়ূয়া: অবশ্যই কৌশল। সবসময়ই নির্বাচন কৌশল ছিল। পাকিস্তানে ইমরান খান কৌশল করছেন না? তিনি প্রথমে বললেন, আমেরিকা তাঁকে উচ্ছেদ করেছে। এখন আবার বলছেন, আমেরিকা তাঁর শত্রু নয়। তাঁকে উচ্ছেদ করেনি। প্রশ্নটা হচ্ছে- দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে, লুটপাটের কারণে, চাঁদাবাজির কারণে, অর্থ পাচারের কারণে মানুষের ক্ষোভ আছে। আবার যুবলীগ, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ নামধারীদের কারণে কিছু মানুষের ক্ষোভ আছে। সে জন্য মানুষ ক্ষুব্ধ। কিন্তু তার অর্থ এই নয়, বিএনপি ধোয়া তুলসী পাতা।
সমকাল: একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ হিসেবে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আপনার বার্তা কী?
দিলীপ বড়ূয়া: দেশবাসীর প্রতি আমার বার্তা হচ্ছে- করোনা মহামারি থেকে শুরু করে সব দুর্যোগ শেখ হাসিনা দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করছেন। তাই শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিকল্প বিএনপি কিংবা তারেক রহমান নন।
সমকাল: আওয়ামী লীগ বা বিএনপির বাইরে আপনারা বিকল্প হয়ে উঠতে পারলেন না কেন?
দিলীপ বড়ূয়া: সারা দুনিয়ায় একটি পরিবর্তন এসেছে। এখন রাজনীতি হয়ে গেছে বাজারনির্ভর, প্রচারণানির্ভর। সেখানে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে আমরা পিছিয়ে পড়েছি। এখন আদর্শের রাজনীতির তুলনায় প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতি সব দখল করে নিচ্ছে।
সমকাল: আপনাকে ধন্যবাদ।
দিলীপ বড়ূয়া: সমকালকেও ধন্যবাদ।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com