
বিএনপির মোহ ছেড়ে আ'লীগে থিতু মনজুর
প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২২ । ০০:০০ | আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২২ । ০১:২৭ | প্রিন্ট সংস্করণ
তৌফিকুল ইসলাম বাবর, চট্টগ্রাম

আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেই সক্রিয় ছিলেন আলোচিত শিল্পপতি এম মনজুর আলম। রাজনীতি করতেন দলের নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে 'গুরু' মেনে। এক সময় সেই গুরুকে টেক্কা দিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে দলের সমর্থন চান। তবে মনোনয়ন না পাওয়ায় যখন মন খারাপ, তখনই বিএনপি লুফে নেয় তাঁকে। ২০১০ সালের নির্বাচনে দলটির সমর্থন নিয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরীকে হারিয়ে জয়লাভ করেন মনজুর আলম। বিএনপিকে এমন জয় এনে দেওয়ায় পুরস্কার হিসেবে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা করা হয় তাঁকে। তবে ২০১৫ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দীনের কাছে হেরে 'মোহভঙ্গ' ঘটে তাঁর। সেদিনই ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা দেন তিনি।
আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা দিলেও অনানুষ্ঠানিকভাবে ফিরে এসে আওয়ামী লীগে থিতু হয়েছেন মনজুর আলম। এবার তাঁর টার্গেট আগামী জাতীয় নির্বাচন। এ জন্য দীর্ঘদিন দিন ধরে দলে পাকাপোক্ত হতে নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সাবেক মেয়র। এরই অংশ হিসেবে আগামী ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড মাঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা সফল করতে মাঠে নেমেছেন তিনি। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত না থাকলেও নিজের মতো করে দলটির বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। বিশেষ করে শোকের মাস আগস্ট এলেই কর্মসূচি নিয়ে সরব হয়ে ওঠেন মোস্তাফা হাকিম গ্রুপের এ কর্ণধার। তাঁর ঘনিষ্ঠরা বলছেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ আছে মনজুর আলমের। এ কারণে অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় এবার বেশি সরব। গত নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং) আসন থেকে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করেন মনজুর আলম। চাচাতো ভাই আবুল কালাম আজাদ তাঁর পক্ষে দলের মনোনয়ন ফরমও সংগ্রহ করেছিলেন। কিন্তু আসনটিতে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পান চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ডা. আফছারুল আমীন। পরপর তিন দফায় আসনটি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সাবেক এ মন্ত্রী। এবার আসনটিকে ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছেন মনজুর আলম। তিনি সমকালকে বলেন, 'এখন আমার বয়স ৭০ চলছে। নির্বাচন করার বয়স নেই। আমার ছেলেদের নির্বাচন করার বয়স। তবে প্রধানমন্ত্রী চাইলে তখন বিষয়টি দেখা যাবে।'
১৯৯৪ সাল থেকে টানা ১৬ বছর মহিউদ্দিন চৌধুরী (প্রয়াত) চট্টগ্রামের মেয়রের দায়িত্ব পালনকালে মনজুর ছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় মহিউদ্দিন গ্রেপ্তার হলে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি। পারিবারিকভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির দীক্ষা পান মনজুর আলম। তাঁর বাবা আবদুল হাকিম ছিলেন পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি নগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্যও ছিলেন।
বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে মেয়র হওয়ার পর মনজুর আলমকে দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা করা হলেও তেমন কোনো কর্মসূচিতে অংশ নিতেন না তিনি। তবে দলের কর্মসূচি পালনে অর্থ সহায়তা দিতেন। দ্বিতীয় দফায় মেয়র পদে নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর ২০১৬ সালের ১ অক্টোবর বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের এক অনুষ্ঠানে মহিউদ্দিন চৌধুরীকে আমন্ত্রণ করে মঞ্চে তাঁর পাশে ছিলেন মনজুর আলম। এর পর থেকে ধীরে ধীরে শোকের মাসের কর্মসূচিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে শুরু করেন। বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের নামে নগরীর জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকায় 'শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম' করেন তিনি।
মনজুর আলম বলেন, 'বিশেষ এক প্রেক্ষাপটে বিএনপিতে গিয়েছিলাম। সেই সময়ের পাঁচ বছর বাদ দিলে আমি আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিলাম এবং আছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে অত্যন্ত ভালোবাসেন। এটাকে ধারণ করেই বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে চাই।'
৪ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফল করতে ১৪ নভেম্বর মোস্তফা-হাকিম ভবনে আলহাজ হোছনে আরা মনজুর ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বসবাসরত অসচ্ছল নারী-পুরুষদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মনজুর আলম। ১৮ নভেম্বর একই ব্যানারে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com