
মূলধারার জনগোষ্ঠীর তুলনায় অনেক পিছিয়ে চা শ্রমিকরা
প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২২ । ০০:০০ | আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২২ । ১২:২০ | প্রিন্ট সংস্করণ
সমকাল প্রতিবেদক

মূলধারার জনগোষ্ঠীর তুলনায় চা শ্রমিকদের জীবনমান অনেক পিছিয়ে রয়েছে। তাঁদের উন্নয়নে কিছু কাঠামোগত পরিবর্তন আনা দরকার। সে জন্য শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো, আবাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি প্রয়োজন। সেই সঙ্গে চায়ের নিলাম ব্যবস্থার সংস্কার, চাকে শিল্পের দৃষ্টিতে দেখা এবং এ খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
গতকাল বুধবার রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের উদ্যোগে 'বাংলাদেশের চা বাগানের শ্রমিকরা কেন পেছনে পড়ে আছে' শীর্ষক সংলাপে এসব কথা বলেন বক্তারা।
সংলাপে সভাপতিত্ব করেন নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, কাউকে পিছিয়ে না রাখা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, দেশের চা শ্রমিকরা মূল ধারার জনগোষ্ঠীর জীবনমান থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় জায়গা পাচ্ছে না তারা।
তিনি বলেন, চা শ্রমিকদের সমস্যা বহুমাত্রিক। তাদের মধ্যে দরিদ্রতা, পুষ্টিহীনতা, শিক্ষার অভাব বেশি। আছে নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনাও। এসব ক্ষেত্রে উন্নতি করতে হবে। এ জনগোষ্ঠীকে পিছিয়ে রেখে আমাদের এসডিজি বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, চা শিল্পে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু চা বাগানের কর্মীরা এখনও আর্থসামাজিক, মানবাধিকার, মজুরি, শিক্ষা, আবাসন, স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত নানা সমস্যায় রয়েছে। সেগুলোর সমাধান করা দরকার। একই সঙ্গে এ শিল্পে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
সংলাপে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান কয়েকটি সুপারিশ করেন। তিনি বলেন, চা শ্রমিকরা এখনও অনেক পিছিয়ে রয়েছে। শুধু অবকাঠামোগত দিক থেকে তাদের কিছু উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু অন্য ক্ষেত্রে মানসম্মত উন্নয়ন হয়নি। বিশেষ করে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে তারা বেশি পিছিয়ে। এ ক্ষেত্রে দ্রুত উন্নয়ন দরকার। কীভাবে তাদের সামাজিক সুরক্ষা খাতে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, সেদিকেও জোর দিতে হবে।
সংলাপে শ্রমিকদের পক্ষে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ চা-কন্যা নারী সংগঠনের প্রধান খায়রুন আক্তার বলেন, 'আমাদের থেকে রোহিঙ্গারা অনেক ভালো আছে। গত ৭০ বছর ধরে জঙ্গলে পাহাড় কেটে বসবাস করেও এখন পর্যন্ত ভূমির ওপর আমাদের কোনো অধিকার নেই। আমরা ৩০০ টাকা মজুরির জন্য আন্দোলনে নেমেছিলাম। কিন্তু সরকার নির্ধারণ করেছে মাত্র ১৭০ টাকা। বাজারে সব জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। এই ১৭০ টাকা দিয়ে কীভাবে একটা পরিবার চলে? এই মজুরিতে কিছুই হয় না আমাদের।'
তিনি বলেন, 'দীর্ঘদিন আন্দোলনের পর শ্রমিকদের মজুরি ১৭০ টাকা করা হয়েছে। মালিকরা যদি শ্রমিকদের মানুষ মনে করত, তাহলে ৩০০ টাকা মজুরি দিত। আমাদের ছেলে-মেয়েরা এখন শিক্ষিত হচ্ছে। অথচ তারা কোথাও ভালো চাকরি পাচ্ছে না। আমাদের বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধার দেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু এই সুবিধাগুলো কী, সে বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। হাসপাতালে প্যারাসিটামল ওষুধ ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না। স্কুলে একজন শিক্ষক চার-পাঁচ বিষয়ের ক্লাস নেন।'
খায়রুন আক্তার বলেন, চা বাগানে নারী শ্রমিক ৮০ শতাংশেরও বেশি। তারা সারাদিন বাগানে কাজ করে। অথচ বাগানে কোনো শৌচাগারের ব্যবস্থা নেই। এ কারণে তারা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া গর্ভকালীন ছুটি দেওয়া হয় চার মাসের। ঠিকমতো মজুরি দেয় না।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গুইন লুইস বলেন, 'যে কোনো দেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যগুলোর কাঠামোর দিকে আমরা নজর রাখি। কেউ যেন পিছিয়ে না থাকে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করি। তবে এক্ষেত্রে দেখা গেছে, বাংলাদেশের চা শ্রমিকরা অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। তাদের শিশুরা পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। ভবিষ্যতে এ বিষয়ে অবশ্যই আমরা কাজ করব।' তিনি বলেন, পরিসংখ্যান বলছে, চা শ্রমিকদের ৫২ শতাংশই দরিদ্র। এই বিশাল দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে পেছনে ফেলে এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে না।
অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুস শহীদ বলেন, চা শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। চা শ্রমিকদের তাদের অধিকার আদায়ে উৎসাহের সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। এরই মধ্যে শ্রমিকদের দুর্দশার কথা সরকারের ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের জীবনমান উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। আগামী নির্বাচনী ইশতেহারে চা শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়টি থাকা দরকার। এ সময় এলডিসি থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com