
কলাম
আর্জেন্টিনার জন্য এটা 'ফাইনাল'
প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২২ । ০০:০০ | আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২২ । ০৯:৪৪ | প্রিন্ট সংস্করণ
জামাল ভূঁইয়া

ব্রাজিলের খেলা দেখে এতটাই মুগ্ধ হয়েছি যে, রাত জাগা সার্থক হয়েছে। সার্বিয়ার বিপক্ষে প্রথমার্ধে ব্রাজিল একটু সতর্ক ছিল। তাদের মধ্যে নার্ভাসও কাজ করছিল। যে কারণে এই অর্ধে কোনো গোল হয়নি। প্রথমার্ধের খেলা দেখার সময় আমার মধ্যে একটা শঙ্কা কাজ করেছিল, আর্জেন্টিনা ও জার্মানির মতো অবস্থা হয় কিনা। যখন ব্রাজিল প্রথম গোল করে, তখন আমার কাছে মনে হয়েছে ব্রাজিল আরও গোল করবে। ম্যাচটি ভালো ছিল। সবকিছু মিলিয়ে ব্রাজিল শক্তিশালী এবং ফেভারিট দল হিসেবেই সার্বিয়ার বিপক্ষে জিতেছে।
ফুটবলের যে কোনো মঞ্চেই প্রথম ম্যাচটি গুরুত্বপূর্ণ। যত শক্তিশালী দলই হোক না কেন, তাদের টার্গেটই থাকে প্রথম ম্যাচে হারা যাবে না। আর অন্য ম্যাচগুলো দেখেও কোচ তিতের ভিন্ন উপলব্ধি হয়েছিল। তিনি সে পরিকল্পনা নিয়েই দল সাজিয়েছেন। প্রথম ম্যাচে কোনো দল ঝুঁকি নিতে চায় না। ব্রাজিলের লক্ষ্যই ছিল- কোনো গোল হজম করবে না। সবকিছু বিচার-বিশ্নেষণ করে আমার মনে হয়েছে, প্রথমার্ধটা ব্রাজিলের জন্য কঠিন ছিল। দ্বিতীয়ার্ধে তো পুরোটাই ব্রাজিল খেলেছে। আমরা যে সুন্দর ফুটবলের কথা বলে আসছি, সেটা কিন্তু তিতের দল দেখিয়েছে। রিচার্লিসন তাঁর সক্ষমতা দেখিয়েছেন। তাঁকে দলে নিয়ে যে সমালোচনা হয়েছিল, সেটার জবাবও তিনি দিয়েছেন। তাঁকে যেভাবে বলটা ভিনিসিয়ুস দিয়েছিলেন, সেটা একটু পেছনে ছিল। প্রথম টাচে বল ধরে দ্বিতীয় টাচে যেভাবে অ্যাক্রোবেটিক শট নিয়েছেন, তা করাটা খুবই কঠিন। টেকনিক্যালি সেরা বলেই রিচার্লিসন সেটা করতে পেরেছেন। আমার দেখা এবারের বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত সেরা গোল রিচার্লিসনের।
আমরা যদি দেখি, বড় বড় দলের নম্বর নাইন ফুটবলার অনেক ভালো হন। আমরা যদি ক্লাব টিমে দেখি, সেখানেও কিন্তু নম্বর নাইন জার্সিটা সেরা ফুটবলারই পরেন। আর ব্রাজিলের নম্বর নাইন নিয়ে বলতে গেলে, রোনাল্ডোর কথাই মনে পড়ে। রিচার্লিসনকে এই জার্সি দেওয়ার আগে কত সমালোচনা হয়েছে। ক্লাবের হয়ে কোনো গোল করেননি, আর জাতীয় দলেও তাঁর কোনো গোল নেই বলে নেতিবাচক কথা উঠেছে। গোল করার পর ফিরমিনোকে বাদ দেওয়া নিয়ে ব্রাজিল কোচ তিতেকে অনেক প্রশ্ন শুনতে হয়েছে। রিচার্লিসনের প্রতি তিতের যে আস্থা ছিল, সেটা প্রথম ম্যাচেই দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি।
ব্রাজিল-সার্বিয়া ম্যাচের পার্থক্যের কথা বলতে চাই। ম্যাচে বদলি ব্রাজিল কোচ তিতে করেছেন, তাঁরা সবাই ইউরোপের বড় বড় ক্লাবে খেলেন। ব্রাজিলের সাইড বেঞ্চে যাঁরা আছেন, তাঁরা অন্য দলে শুরুর একাদশে খেলার যোগ্যতা রাখেন। ব্রাজিলের স্কোয়াডটা অনেক শক্তিশালী। এখানেও ব্রাজিল অনেক এগিয়ে। বিরতির পর সার্বিয়াকে একটু ক্লান্ত মনে হয়েছিল। ব্রাজিল আধিপত্য করেছে, তারাও ক্লান্ত ছিল। ম্যাচ থেকে মনোযোগও চলে যায়।
সার্বিয়ার ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। ব্রাজিলের জয়ের দিনে দুঃসংবাদ, নেইমারের ইনজুরি। জানি না কী হয়, তবে ২০১৪ সালেও কোয়ার্টার ফাইনালে কলম্বিয়ার বিপক্ষে চোটে পড়া নেইমার সেমিফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে খেলতে পারেননি। আশা করি, এবার তেমনটা হবে না। কারণ নেইমার ব্রাজিলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়।
ব্রাজিল জিতেছে, আর্জেন্টিনা প্রথম ম্যাচে হেরেছে। আগামীকাল (আজ) মেক্সিকোর বিপক্ষে আর্জেন্টিনার ম্যাচটি অনেকটা 'ফাইনালের' মতো। এই ম্যাচে হারলে শুধু আর্জেন্টাইনদের নয়, ভেঙে যাবে লিওনেল মেসির বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন। পোল্যান্ডের সঙ্গে ড্র করায় মেক্সিকো আত্মবিশ্বাসী। আর্জেন্টিনার কাছে না হারলে, তাদের দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার ভালো সম্ভাবনা আছে। এটাও আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্কালোনির জন্য চিন্তার বিষয়। সৌদি আরবের কাছে হারায় আর্জেন্টিনাকে অনেক অঙ্ক কষতে হচ্ছে। ড্র করলে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে মেসিদের। আর্জেন্টিনা দলটা মেসিনির্ভর হওয়াতেই বেশি সমস্যা। নেইমারের মতো তারকা থাকলেও ব্রাজিল তাঁর ওপর নির্ভরশীল নয়। আমি মনে করি, মেক্সিকোর বিপক্ষে একটা দল হয়েই খেলতে হবে আর্জেন্টিনাকে। তাদের ডিফেন্স লাইনটা একটু দুর্বল। এটাও কাটাতে হবে। আবারও এটা মনে রাখতে হবে, তাদের বড় শক্তি মেসি আছেন। যিনি মুহূর্তেই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন। দলকে বিশ্বকাপে টিকিয়ে রাখতে মেক্সিকোর বিপক্ষে মেসিকে জ্বলে উঠতেই হবে।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com