সাক্ষাৎকার

দেশেই উৎপাদনের ব্যবস্থা করা দরকার

প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২২ । ০০:০০ | আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২২ । ০৯:৫৫ | প্রিন্ট সংস্করণ

জসিম উদ্দিন বাদল

এম. মাহমুদুর রশিদ, সাধারণ সম্পাদক, ইলেকট্রনিকস সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইসাব)

সমকাল :দেশে এখন কী ধরনের অগ্নিনিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার হচ্ছে?


এম. মাহমুদুর রশিদ :
আগে মানুষ এ বিষয়ে খুব একটা জানত না। অগ্নিনিরাপত্তা বলতে দেশে এক সময় শুধু ফায়ার এক্সটিংগুইশারের ব্যবহারকেই বোঝাতো। এখন এর পরিধি বেড়েছে। নতুন নতুন যন্ত্রপাতি ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র এর সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। বর্তমানে অগ্নিনিরাপত্তার সরঞ্জামগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়, যার একটি ফায়ার ডিটেকশন সিস্টেম। এটি মূলত ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেম। দ্বিতীয়টি ফায়ার প্রটেকশন সিস্টেম। এটি মূলত মেকানিক্যাল সিস্টেম। তৃতীয়টি হচ্ছে ফায়ার ডোর।


সমকাল :দেশে বহুতল ভবন নির্মাণ বাড়ছে। এ প্রেক্ষাপটে অগ্নিনিরাপত্তা সরঞ্জামের চাহিদা বাড়ছে কিনা?


এম. মাহমুদুর রশিদ
:প্রতিটি ভবনে অগ্নিনিরাপত্তা পণ্যের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা বাধ্যতামূলক। তবে প্রয়োজনীয়তার বিষয়টিকে মূলত দুটি ভাগে বিভক্ত করা যায়। প্রথমত, দেশের আইন এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) অনুসারে ভবনে ফায়ার সেফটি সরঞ্জামের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কী ধরনের ভবনে কোন ধরনের সরঞ্জাম লাগবে সেই বিষয়ে কিছু নিয়ম-নীতি রয়েছে। এসব সরঞ্জামের কার্যক্ষমতা কতটুকু হবে সে বিষয়েও বিএনবিসি কোডে বলা আছে। তাই এসব সরঞ্জাম ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। দ্বিতীয়ত, সেফটি বা নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতা। দেশের পোশাক কারখানাগুলো থেকে পণ্য কেনার ক্ষেত্রে এখন ক্রেতাদের নানা ধরনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বিদেশি যেসব ক্রেতা এ দেশের পোশাক কারখানায় কাজ করান তাদের বিভিন্ন কমপ্লায়েন্স ইস্যু রয়েছে। এসব কমপ্লায়েন্স অনেক ক্ষেত্রে আমাদের বিএনবিসি কোডের চেয়েও কঠোরভাবে মানতে হয়। শুধু কারখানা নয়, যে কোনো ভবনেই অগ্নিনিরাপত্তা সরঞ্জামের দরকার রয়েছে। কেউ যদি তাঁর নিজের বাসা বা নিজের অফিসে ঠিকমতো অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা করতে চান, সে ক্ষেত্রে কিন্তু খুব বেশি অগ্নিসরঞ্জাম দরকার পড়ে না। তবে সচেতন হওয়ার কারণে এ ধরনের ভবনেও বাড়তি উদ্যোগ নিচ্ছেন অনেকে। সুতরাং বলা যায়, শিল্পকারখানা ভবন হোক বা ব্যক্তিগত ভবন হোক- সব ধরনের ভবনেই অগ্নিসরঞ্জামের চাহিদা রয়েছে। আগামীতে প্রতিটি জেলায়, উপজেলায়, মেগা সিটি এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে অনেক ভবন হবে, শিল্পকারখানা হবে। এসব ভবনের সবক'টিতেই অগ্নিসরঞ্জামের প্রয়োজন হবে। সুতরাং ভবনের সংখ্যা যত বাড়বে নিরাপত্তা সরঞ্জামের চাহিদা তত বাড়বে।


সমকাল :অগ্নিনিরাপত্তা সরঞ্জাম খাতের বিকাশে কী ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে?


এম. মাহমুদুর রশিদ :এটি সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর একটি খাত। প্রয়োজনীয় সব ধরনের সরঞ্জামই আমদানি হয় বিদেশ থেকে। ইউএস ডলারের দর অস্বাভাবিক বেড়েছে। এতে আমদানিকারকদের ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। এসব সরঞ্জাম আমদানিতে সময় লাগে বেশি, ঝামেলাও হয় বেশি। ফলে আমদানি থেকে শুরু করে গ্রাহকের কাছে পণ্য পৌঁছাতে প্রায় তিন থেকে চার মাস সময় লেগে যায়। এতে ব্যয় বেড়ে যায়। এ খাতের উদ্যোক্তারা সরকারের নীতিসহায়তা পাচ্ছেন না। কোনো কোনো নিরাপত্তা সরঞ্জাম আমদানিতে ৩০ শতাংশ থেকে শুরু করে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক্ক-কর দিতে হয়। এছাড়াও অনেক চ্যালেঞ্জ আছে।


সমকাল :এ খাতকে এগিয়ে নিতে কী ধরনের সহায়তা দরকার?


এম. মাহমুদুর রশিদ
:এ খাতের ভবিষ্যৎ খুবই ভালো। তবে অগ্নিনির্বাপণ ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম আমদানিতে প্রচুর পরিমাণে ডলার ব্যয় হয়। এগুলো যেহেতু মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতকারী পণ্য তাই আমদানি না করে দেশেই উৎপাদনের ব্যবস্থা করা দরকার। দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপিত হচ্ছে। অগ্নিনিরাপত্তা সরঞ্জাম উৎপাদনে আলাদা অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করলে জরুরি প্রয়োজনে হাতের নাগালেই পণ্য পাওয়া সম্ভব হবে। এছাড়া মূলধনি যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক্ক কমানোর বিকল্প নেই। পাশাপাশি নীতিসহায়তা দিতে হবে।


সমকাল :এ খাতের বাজারের আকার কেমন?


এম. মাহমুদুর রশিদ
:ধীরে ধীরে তৈরি হয়েছে নিরাপত্তা সরঞ্জাম নামের একটি বিশেষ খাত। বর্তমানে বছরে এর বাজারের আকার দাঁড়িয়েছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকায়। এ খাতে ইতোমধ্যে প্রায় ৫ হাজারের বেশি প্রকৌশল কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।


সমকাল :ভবনকে নিরাপদ রাখতে কী ধরনের সচেতনতা দরকার?


এম. মাহমুদুর রশিদ :দেশের অবকাঠামোতে ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। এই উন্নয়নের অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা। তাই নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে প্রতিটি ঘর ও কর্মক্ষেত্র থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শুরু করতে হবে। বিএনবিসি অনুযায়ী ভবন নির্মাণের পাশাপাশি ভবনের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও নিশ্চিত করতে হবে। দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য মানুষের মধ্যে সচেতনতাও বাড়াতে হবে।



সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জসিম উদ্দিন বাদল

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com