ডেঙ্গু

সতর্ক থাকুন

প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২২ । ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

লে. কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ

ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েই চলেছে। প্রতিদিন আসছে মৃত্যুর খবর। ডেঙ্গুর ভয়াবহতার মাঝে করোনার খবরও বোধকরি চাপা পড়ে গেছে।

ডেঙ্গু ভাইরাস সৃষ্ট মশাবাহিত রোগ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডেঙ্গু আক্রমণে তেমন লক্ষণ প্রকাশ পায় না। প্রতি চারজনের মাঝে একজনের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। কারও দেখা দেয় মৃদু, কারও ভয়ানক লক্ষণ। মৃদু লক্ষণগুলো অন্য সাধারণ ভাইরাসজনিত রোগের মতোই।

ডেঙ্গুর সাধারণ লক্ষণ

ডেঙ্গুর সচরাচর যেসব লক্ষণ দেখা দেয় সেগুলো হলো- জ্বর, শরীরে ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখে বিশেষত চোখের পেছনের দিকে ব্যথা, মাংসপেশি, হাড় ও অস্থিসন্ধিতে ব্যথা। রোগীদের কেউ কেউ বলেন, পেটানো ব্যথা। চিকিৎসাবিজ্ঞান বলে ব্রেকবোন ফিভার- হাড়ভাঙা জ্বর। চামড়ায় ছোপ ছোপ দাগ, ক্ষুধামান্দ্য, বমি, পাতলা পায়খানা, দুর্বলতা ইত্যাদি লক্ষণও প্রকাশ পায় ডেঙ্গু আক্রমণে। জ্বর, মাথাব্যথা ও চামড়ায় ছোপ ছোপ দাগ- এগুলোকে বলা যায় ডেঙ্গুর ত্রয়ী উপসর্গ। বলা যায়, ডেঙ্গু জ্বরের প্রধান তিন উপসর্গ। এসব উপসর্গ সাধারণত দুই থেকে সাত দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এক সপ্তাহের মাঝে বেশিরভাগ রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন।

ডেঙ্গুর ভয়ানক বিপদ চিহ্ন

কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভয়ানক কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায় ডেঙ্গুর আক্রমণে। যেগুলো তীব্র মাত্রার ডেঙ্গু নির্দেশ করে সেগুলো হলো- পেটে ব্যথা, দিনে তিনবারের বেশি বমি হওয়া, নাক কিংবা দাঁতের গোড়া থেকে রক্তক্ষরণ, বমি কিংবা পায়খানার সঙ্গে রক্তক্ষরণ, শ্বাসকষ্ট, প্রচণ্ড দুর্বলতা, অস্থিরতা, খিটখিটে ভাব, হঠাৎ করে আচরণগত পরিবর্তন, তাপমাত্রার ব্যাপক পরিবর্তন, অনেক তাপমাত্রা থেকে হঠাৎ এমনকি স্বাভাবিকের চেয়ে নিচে নেমে যাওয়া, চার থেকে ছয় ঘণ্টায় প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, রক্তের হেমাটোক্রিট ২০ শতাংশ কমে যাওয়া, রক্তে প্লাটিলেটের মাত্রা অত্যন্ত নিচে নেমে যাওয়া, লিভার বড় হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।



তীব্র ডেঙ্গু হলে হাসপাতাল

তীব্র ডেঙ্গুর লক্ষণ প্রকাশ পেলে বাসায় চিকিৎসা করার সুযোগ নেই। মনে রাখবেন, তীব্র ডেঙ্গু এক ধরনের মেডিকেল ইমার্জেন্সি। এসব রোগীকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা নিতে হবে। গড়ে প্রতি ২০ জনে একজন তীব্র ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে পারেন। তীব্র ডেঙ্গুতে রক্তচাপ কমে রোগী শকে চলে যেতে পারেন। রোগীর অভ্যন্তরীণ অঙ্গ থেকে শুরু হতে পারে রক্তক্ষরণ। যাঁদের আগে একবার ডেঙ্গু হয়েছে, তাঁদের দ্বিতীয় আক্রমণে তীব্র ডেঙ্গু হওয়ার আশঙ্কা বেশি। এ সময় রক্তের অনুচক্রিকা খুব দ্রুতগতিতে কমে যেতে পারে। সেজন্য প্রতিদিন রক্ত পরীক্ষা করে অনুচক্রিকার পরিমাণ জানতে হয়। এই সংখ্যা ৫০ হাজারের নিচে নেমে গেলে দিনে অন্তত দু'বার অনুচক্রিকা পরীক্ষা করা দরকার। সঙ্গে নজর রাখতে হবে ডেঙ্গুর ভয়ানক উপসর্গের দিকে।

ডেঙ্গুর চিকিৎসা

ডেঙ্গুর কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। প্রকাশিত লক্ষণের সঙ্গে চিকিৎসা করতে হবে রোগীদের। সেজন্য কারও ডেঙ্গু হলে পূর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে। শারীরিক ও মানসিক বিশ্রাম নেওয়ার পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। শরবত, ফলের রস, ডাবের পানি, স্যুপ, স্যালাইন ও পানীয় পান করতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণে।

জ্বর বা ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল সেবন করতে হবে। অ্যাসপিরিন, আইবোপ্রোফেন কিংবা ব্যথা-বেদনানাশক বড়ি গ্রহণ করবেন না। এগুলো ডেঙ্গুর রক্তক্ষরণজনিত জটিলতা বাড়িয়ে দিতে পারে। ডেঙ্গু জ্বর চলে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টা পর যদি শরীর আরও বেশি খারাপ হতে থাকে, তাহলে অবশ্যই সতর্ক হোন। রক্ত পরীক্ষা করে অনুচক্রিকা ও হেমাটোক্রিটের পরিমাণ জেনে নিন। রক্তের অনুচক্রিকা কমতে থাকলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসুন। রক্তের অনুচক্রিকা ১০ হাজারের নিচে নেমে গেলে কিংবা রক্তক্ষরণ শুরু হলে রক্ত দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে রক্তের উপাদান প্লাটিলেট বা এফএফপি সরাসরি দেওয়া হয়। রক্তের অনুচক্রিকা বৃদ্ধির জন্য অনেকেই পেঁপে পাতার রস খেয়ে থাকেন, তবে এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।

ডেঙ্গু চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধের দিকে নজর দিতে হবে বেশি। বর্ষার সময় চলে গেলেও ডেঙ্গু থেমে নেই। এর কারণ হলো, আমরা ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা দমনে ব্যর্থ হচ্ছি। মশা বিস্তারের জায়গা এখনও অরক্ষিত। যেভাবেই হোক মশকমুক্ত রাখতে হবে আমাদের চারপাশ। সব জায়গায় তীক্ষষ্ট নজর রাখতে হবে, যেন কোথাও পানি জমে না থাকে। প্রয়োজনে মশারি ব্যবহার করুন। মশার কামড় থেকে বাঁচাতে হবে নিজেকে এবং সমাজকে। া



[মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট, সিএমএইচ

চেম্বার :আল রাজি হাসপাতাল]

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com