
দুই বছর তদন্তের পর পল্লবী থানায় বিস্ফোরণ মামলার চার্জশিট
প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২২ । ২২:৪৮ | আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২২ । ২৩:০৮
বিশেষ প্রতিনিধি

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তাইজুল ইসলাম চৌধুরী বাপ্পী
রাজধানীর পল্লবী থানায় বোমা বিস্ফোরণে চার পুলিশ সদস্য ও এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী গুরুতর আহত হওয়ায় ঘটনার মামলার দুই বছর পর চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। চার্জশিটের আসামির তালিকায় নাম রয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তাইজুল ইসলাম চৌধুরী বাপ্পীর। এছাড়া আরও ১১ জনকে চার্জশিটে অভিযুক্ত করা হয়।
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের দায়ের অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে- এই ঘটনার অন্যতম পরিকল্পনাকারী পলাতক এক শীর্ষ সন্ত্রাসী হলেও তাইজুল ইসলাম চৌধুরী বাপ্পী পুরো ঘটনা সম্পর্কে অবগত ছিলেন। মামলার জব্দ করা অস্ত্র ও বোমার কাদের হেফাজতে রয়েছে তা জানতেন। পল্লবী থানার তৎকালীন ওসির সঙ্গে আলোচনাকালে অস্ত্র-বোমার সূত্র গোপন করে যান বাপ্পী। এছাড়া তিনি জনি ও আরেক আসামি হিরন ওসমানকে অস্ত্র সরবরাহ করেন। পল্লবী এলাকায় একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য মজিবুর রহমান জামিলের লোকজনকে গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্য ছিল কাউন্সিলরের। থানায় বোমা বিস্ম্ফোরণে মতো চাঞ্চল্যকর ঘটনার তদন্তে কাউন্সিলের নাম এল।
আসামিরা হলেন- রফিকুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, মোশাররফ হোসেন, জনি মিয়া, ইমামুল হোসেন ওরফে এনামুল, জামাল শিকদার ওরফে রবিন খান, হিরন ওসমান, ইয়াছিন খান, মো. হানিফ, মজিবুর রহমান ওরফে জামিল, নুরুল আমিন শেখ ও তাইজুল ইসলাম চৌধুরী ওরফে বাপ্পী। এছাড়া মোশাররফ, ইমামুল, হিরন, ইয়াছিন ও জনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। নাম-ঠিকানা না পাওয়ায় মো. আলমগীর, আন্নু মোল্লা ও পিচ্চি বাবুকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে।
পুলিশের তদন্তে উঠে আসে, এই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ভারতে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী মজিবুর রহমান ওরফে মজি ওরফে জামিল। চার্জশিটভুক্ত আসামিরা পরস্পরের পরিচিত। পল্লবী এলাকায় তারা দীর্ঘ দিন চাঁদাবাজিসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছেন। এলাকায় একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে মজিবুর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইমোতে জনির সঙ্গে যোগাযোগ করে একটি বড় নাশকতার পরিকল্পনা করেন। তাদের ধারণা ছিল- এই অপারেশন সফল করতে পারলে মিরপুর ও পল্লবী এলাকায় ঝুট ব্যবসা পুরোটা তাদের নিয়ন্ত্রণে যাবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী নুরুল আমিন শেখ হিমেল ও ইয়াছিন খানের মাধ্যমে সাতক্ষীরা সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে গুলিভর্তি দুটি পিস্তল ও একটি ডিজিটাল ওজন মাপার মেশিনের ভেতরে র্যাপিং পেপারে মোড়ানো চারটি বোমা ঢাকায় আনা হয়। অস্ত্র ও বোমা পল্লবী থানাধীন পূরবী সিনেমা হলের কাছে ইয়াসিনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। মজিবুরের পরিকল্পনায় বিষয়টি জনি তার বিশ্বস্ত সহযোগীকে হিরন ওসমানকে জানান। জনি ও হিরন নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন- পুরো পরিকল্পনা স্থানীয় কাউন্সিলর বাপ্পীকে জানাতে হবে। মজিবুর যেহেতু দীর্ঘদিন ভারতে পলাতক, তাই তার আস্থাভাজন হওয়ার চেয়ে বাপ্পীর আস্থাভাজন হতে পারলে তাদের লাভ বেশি হবে। তারা ছক আঁকে- বাপ্পীকে গিয়ে জানানো হবে- পল্লবী এলাকার যুবলীগ নেতা জুয়েল রানাকে হত্যা করার জন্য মুজিবুর রহমান অস্ত্র ও বোমা তাদের কাছে পাঠিয়েছেন। এরপর অভিযুক্ত আসামি হিরন, জনি ও ইমামুল হোসেন বাপ্পীকে জানান- বাপ্পী ও জুয়েল রানাকে হত্যা করার মিথ্যা পরিকল্পনার কথা জানান। তাদের কাছে এই ছকের বিষয়টি জানার পর বাপ্পীকে অন্য কাউকে বিষয়টি না জানানোর পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে কাউন্সিলর বাপ্পী স্থানীয় একটি রেস্টুরেন্টে বসে পল্লবী থানার তৎকালীন ওসিকে বিষয়টি অবহিত করেন। ওসি সূত্র জানতে চাইলে বাপ্পী আসামি জনি, হিরন ও ইমামুলকে ডেকে নেয়। তবে আসামিদের পরিচয় তিনি ওসির কাছে গোপন করে যান। সেখানে জনি ওসিকে বলেন, বাপ্পীকে চৌধুরীকে মারার জন্য মজিবুর অস্ত্র ও বোমা পাঠিয়েছে। তিনি সবাইকে চেনেন ও ধরিয়ে দিতে পারবেন। জনি ও হিরন মিলে মজিবুর রহমানের লোকজনদের ধরিয়ে দিতে পরিকল্পনা করে।
২০২০ সালের ২৮ জুলাই রাতে কালশী কবরস্থানের কাছ থেকে অস্ত্র ও ডিজিটাল ওয়েট মেশিনের ভেতরে থাকা বোমাসহ আসামি রফিকুল ও শহিদুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে দুটি পিস্তল, চারটি গুলি ও ওজন মাপার একটি যন্ত্র পাওয়া যায়। এরপর তাদের থানায় আনা হয়। তাদের কাছে ওজন মাপার যন্ত্র থাকা নিয়ে সন্দেহ হওয়ায় পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটকে খবর দেওয়া হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে ইউনিটের সদস্যরা থানার পরিদর্শক ইমরানুলের কক্ষে গিয়ে পরীক্ষা করেন। তবে কিছু বুঝতে পারছিলেন না। এরপর বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটের অন্য সদস্যদের খবর দেওয়া হয়। তারা পৌঁছানোর আগেই থানার ভেতর বিস্ম্ফোরণ ঘটে। এ ঘটনায় ২০২০ সালের ২৯ জুলাই পল্লবী থানায় অস্ত্র ও বোমা বিস্ম্ফোরণের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা করা হয়।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com