বীর উত্তম শামসুল আলম মারা গেছেন

প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২২ । ০০:১১ | আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২২ । ১০:২৩

অনলাইন ডেস্ক

কনফিডেন্স গ্রুপের সাবেক চেয়ারম্যান, স্বাধীনতা পদকে ভূষিত বীর মুক্তিযোদ্ধা, অবসরপ্রাপ্ত গ্রুপ ক্যাপ্টেন শামসুল আলম (বীর উত্তম) ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বৃহস্পতিবার বিকেল ৪:৪৭ মিনিটে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।

আগামীকাল শুক্রবার বাদ জুম্মা গুলশান সেন্ট্রাল মসজিদে (আজাদ মসজিদ) তার জানাজা হবে। পরে বনানী কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।

শামসুল আলম ১৯৬৭ সালে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে কমিশনপ্রাপ্ত হন। এরপর তিনি যুদ্ধবিমান, বোমারু বিমান ও পরিবহন বিমান চালানোয় বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর, ‘৭১ সালের জুন মাস পর্যন্ত তিনি পাকিস্তানের চাকলালা বিমান ঘাঁটিতে নজরবন্দি অবস্থায় অবস্থান করতে বাধ্য হন। 

এরপর তিনি সেখান থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসেন এবং তেজগাঁও বিমানবন্দরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। তার ওপর চলে নির্মম নির্যাতন। আগস্ট মাসে পাক বাহিনীর নির্যাতন ক্যাম্প থেকে তিনি পালাতে সক্ষম হন এবং ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।

সেখানে শামসুল আলমসহ সাতজনকে নিয়ে গঠন করা হয় মুক্তিযুদ্ধরত বাংলাদেশের প্রথম বিমান বাহিনী যার সাংকেতিক নাম ছিল ‘কিলো ফ্লাইট’। ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর তার নেতৃত্বে একক ইঞ্জিনবিশিষ্ট একটি অটার বিমান চট্টগ্রামে ইস্টার্ন রিফাইনারিতে সফল অভিযান পরিচালনা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়।

মুক্তিযুদ্ধে এই বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তিনি জীবিত যোদ্ধাদের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘বীর উত্তম’ লাভ করেন।

পরবর্তীতে ২০১৭ সালে তাঁকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে স্বাধীন বাংলাদেশের বিমান বাহিনী গড়ে তোলার ক্ষেত্রে জনাব শামসুল আলম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এ সময় তাকে জাতির পিতার চলাচলের জন্য নির্দিষ্ট একটি ‘এএন ২৪’ ভিআইপি বিমানের পাইলট নিযুক্ত করা হয়।

১৯৮৪ সালের নভেম্বরে স্বেচ্ছায় অবসরের পূর্ব জনাব শামসুল আলম বিমান বাহিনীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।

অবসরের পর তিনি ট্রেডিং ব্যবসা শুরু করেন। এই ব্যবসায়ও তিনি ঈর্ষণীয় সাফল্য লাভ করেন। নিজের ব্যবসার পাশাপাশি তিনি একজন স্পন্সর ডিরেক্টর হিসেবে কনফিডেন্স গ্রুপে যোগদান করেন। একপর্যায়ে তিনি কনফিডেন্স গ্রুপের চেয়ারম্যান পদে গুরুদায়িত্বও পালন করেন।

বই পড়া, লেখা এবং গান শোনা ছিল তার নিত্যদিনের অভ্যাস। স্কুল, মসজিদসহ অনেক সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও তিনি সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। দুইবার তিনি বাংলাদেশ ফ্লাইং ক্লাবের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক কন্যা ও এক পুত্র, নাতি-নাতনী, আত্মীয়-স্বজন ও অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।

এই বীর মুক্তিযোদ্ধা ও কর্মবীরের মৃত্যুতে কনফিডেন্স গ্রুপ গভীর শোক প্রকাশ করছে।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com