প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে হেফাজত নেতাদের বৈঠক

প্রকাশ: ১৭ ডিসেম্বর ২২ । ২২:৩৮ | আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২২ । ২২:৩৮

সমকাল প্রতিবেদক

ফাইল ছবি

দীর্ঘদিনের নিরবতা ভেঙে কর্মসূচি নিয়ে ফেরা হেফাজতে ইসলামের নেতারা শনিবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তাঁরা শনিবার বিকেলে সরকারের প্রধানের কাছে সংগঠনের কারাবন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তি, মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। এর আগে সকালে একই দাবিতে রাজধানীতে ওলামা মাশায়েখ সম্মেলন করে হেফাজত।

সংগঠনটির প্রচার সম্পাদক মুফতি কিফায়াতুল্লাহ আজহারী বৈঠকের খবর নিশ্চিত করে সমকালকে বলেছেন, মাওলানা মামুনুল হক বা কোনো নির্দিষ্ট নেতা নন, সবার মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কাছে। তিনি মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন। রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে একটি শব্দও আলোচনা হয়নি।

বৈঠকে অংশ নেওয়া হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মুহিউদ্দীন রাব্বানী সমকালকে বলেছেন, সম্মেলনে যে সাত দফা দাবি জানানো হয়েছে, সেগুলোই প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া হয়েছে। ধর্মীয় শিক্ষাকে গুরুত্ব, শিক্ষা কমিশনে আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করা, কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা করা এবং বিশ্ব ইজতেমায় সাদ কান্দলভিকে আসতে না দেওয়ার দাবিও জানানো হয়েছে।

কিফায়াতুল্লাহ আজহারী জানান, অসুস্থতার কারণে হেফাজতের আমির আল্লামা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী গণভবনে যাননি। প্রধানমন্ত্রীকে লেখা তাঁর চিঠি বৈঠকে পাঠ করা হয়। বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি এবং হেফাজতের ১১ নেতা ছিলেন। বিকেল চারটা থেকে এক ঘণ্টা ১০ মিনিট চলে বৈঠক।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আমন্ত্রণের বিরোধিতা এবং ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে গত বছরের মার্চে সরকারের মুখোমুখি হয় হেফাজত। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে 'হেলমেটধারীদের' হামলার পর প্রতিবাদ কর্মসূচি ও হরতালে সহিংসতায় সারাদেশে চার মাদ্রাসা শিক্ষার্থীসহ ছয়জন নিহত হন। হেফাজতের তাণ্ডবে ব্রাক্ষণবাড়িয়া ও হাটহাজারী লণ্ডভণ্ড হয়। মামুনুল হকসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা গ্রেপ্তার হন। কয়েকজন এখনও জেলে।

ধরপাকড়ে হেফাজতের কমিটি বিলুপ্ত হয়। বিএনপির জোটে থাকা রাজনৈতিক দলেল নেতাদের বাদ দেওয়া হয়। তৎকালীন আমির প্রয়াত জুনায়েদ বাবুনগরী ও প্রয়াত মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদী কয়েক দফা সরকারের সঙ্গে দেন দরবার করেন। গত ২১ মাসে চারবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। নির্বাচনের এক বছর আগে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাত পেলেন হেফাজত নেতারা।

হেফাজত নেতারা শনিবার প্রধানমন্ত্রীকে জানান, মামলার কারণে মাদ্রাসার শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মাসে তিন চার দিন হাজিরা দিতে হয়। মুহিউদ্দীন রাব্বানী সমকালকে জানান, এটা শুনে প্রধানমন্ত্রী বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। সাধারণ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীসহ সবার মামলার বিষয়টি দেখতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেন। তবে এ বিষয়ে আসাদুজ্জামান খানের বক্তব্য জানা যায়নি।

হেফাজতের অভিযোগ, পাঠ্যসূচিতে ধর্মীয় শিক্ষা সংকোচন করা হচ্ছে। মুহিউদ্দীন রাব্বানী বলেন, ইসলামকে হেয় করা হয়েছে এমন সাত-আটটি পাঠ্যপুস্তুক প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আলোচনা করতে তিনি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেন।

শনিবার গুলিস্তানের মহানগর নাট্য মঞ্চে ওলামা মাশায়েখ সম্মেলনের মাধ্যমে দীর্ঘদিন পর কর্মসূচিতে ফেরে হেফাজত। পুলিশের অনুমতিও পায়। ২০১৩ সালের ৬ এপ্রিল মতিঝিলের সমাবেশে হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা শাহ আহমদ শফী ধর্ম অবমাননায় মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইন করা, সহশিক্ষা বন্ধ করা, নারী নীতি বাতিলসহ ১৩ দফা দাবি জানান। সম্মেলনে ১৩ দফা বাস্তবায়নের দাবি জানান হেফাজতের বর্তমান আমির।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে হেফাজত মহাসসচিব আল্লামা সাজিদুর রহমান, নায়েবে আমির মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, আল্লামা ইয়াহিয়া, মাওলানা সালাহউদ্দীন নানুপুরী, মাওলানা আবদুল আউয়াল, মাওলানা মুহিব্বুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর ইদ্রিস, মাওলানা আবদুল কাউয়ুম সোবহানী উপস্থিত ছিলেন।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com