মতামত

বিশ্বকাপ যে দেশই পাক, জিতবে পিএসজি

প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২২ । ১৪:২৩ | আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২২ । ১৫:৫০

মো. হাসিনুর রহমান খান

বিশ্বকাপের হিসাব-নিকাশের মধ্যেই কে হবে চ্যাম্পিয়ন তার পরিসরটা ইতোমধ্যেই ছোট হয়ে এসেছে। হয় আর্জেন্টিনা না হয় ফ্রান্স। সম্ভাবনার সহজ সূত্র অনুযায়ী মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠের মতোই যে কোনো দলের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কন্ডিশনাল প্রবাবিলিটি বা শর্তযুক্ত সম্ভাবনা বের করার মাধ্যমেই আসল সম্ভাবনা বের করা হয়। তাতেই যে দল এগিয়ে থাকে তাকে বেশি সম্ভাবনাময়ী দল বলা হয়। শর্তযুক্ত সম্ভাবনা বের করতে মডেলিংয়ের প্রয়োজন হয়, যা আবার নির্ভর করে পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ওপর। 

আমার ধারণা, আর্জেন্টিনা ফ্রান্সকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হবে। আর্জেন্টিনা জিতলেও জিতবে পিএসজি ক্লাব, অন্যদিকে ফ্রান্স জিতলেও জিতবে পিএসজি ক্লাব। যারা ক্লাব পর্যায়ের খেলাধুলার খবর রাখেন না, তারা এই মতামতের সমীকরণটা সহজে বুঝতে পারবেন না। মেসি এবং এমবাপ্পে পিএসজির সবচেয়ে বড় তারকা হয়ে আরেকজন বড় তারকা নেইমারের সঙ্গে পিএসজিতে খেলছেন।

চ্যাম্পিয়ন, রানার্সআপ, তৃতীয় ও চতুর্থ পজিশন বাদে বিশ্বকাপ ফুটবলের সাতটি পুরস্কার রয়েছে। সর্বোচ্চ গোল ও অ্যাসিস্ট্যান্ট সংখ্যার ভিত্তিতে গোল্ডেন বুট যেটি পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে মেসি এবং এরপর এমবাপ্লে। তাঁদের যে কেউ এটি পাবেন অর্থাৎ ক্লাব হিসেবে পিএসজির ঘরে যাচ্ছে। তবে এ তালিকায় রয়েছেন আর্জেন্টিনার আলভারেজ এবং ফ্রান্সের জিরুডও। আরেকটি মর্যাদাবান অসাধারণ খেলার কৃতিত্বের জন্য গোল্ডেন বল যেটির দৌড়ে নিশ্চিতভাবে এগিয়ে মেসি, যাঁর ঝুলিতে রয়েছে এ বিশ্বকাপেই চারটি ম্যান অব দ্য ম্যাচ পুরস্কার। বলে রাখা দরকার মেসি একমাত্র খেলোয়াড় ফুটবল ইতিহাসে, যাঁর সবচেয়ে বেশি ম্যান অব দ্য ম্যাচ হওয়ার রেকর্ড রয়েছে। দ্বিতীয় ভাগীদার এমবাপ্লে, যাঁর ঝুলিতে রয়েছে তিনটি ম্যান অব দ্য ম্যাচ পুরস্কার। অর্থাৎ ক্লাব হিসেবে পিএসজির ঘরে যাচ্ছে।

মেসি ও এমবাপ্লে এ দুই খেলোয়াড়ের মধ্যে একজনের হাতে উঠছে গোল্ডেন বুট এবং গোল্ডেন বল উভয় পুরস্কার। উভয় পুরস্কার পাওয়ার দৌড়ে মেসি এমবাপ্লের চেয়ে ভালোই এগিয়ে। তবে এ দুটি পুরস্কার ভাগাভাগি করে নেওয়ারও একটা বড় সম্ভাবনা রয়েছে। গোল্ডেন গ্লাভস পুরস্কারের জন্য নিঃসন্দেহে এগিয়ে রয়েছে আর্জেন্টিনার গোলকিপার মার্টিনেজ। গোল সেভ করার পাশাপাশি দলের ক্লিনশিট জয়ের সংখ্যাও এই পুরস্কার নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে। আর্জেন্টিনার এই বিশ্বকাপের তিনটি ক্লিনশিট রয়েছে; অন্যদিকে ফ্রান্সের হয়েছে একটি। প্রতিভাবান তরুণ খেলোয়াড়ের জন্যও একটি পুরস্কার রয়েছে। যার দাবিদারের ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে আর্জেন্টিনার আলভারেজ। গতবারের বিশ্বকাপে এ পুরস্কারটি পেয়েছিলেন ফ্রান্সের এমবাপ্লে। এ ছাড়া আকর্ষণীয় গোলের জন্য একটি পুরস্কার রয়েছে; ব্রাজিলের রিচার্লিসন অনেকের চেয়ে এগিয়ে। তাছাড়া দলগতভাবে দুটি পুরস্কার রয়েছে। ফেয়ার খেলার টিম, চিত্তাকর্ষক এবং আনন্দ দেওয়ার টিম। কার কাছে এই দুটি পুরস্কার যাবে, তা সময়ই বলে দেবে। 

বিশ্বকাপের নানা পুরস্কারের বাইরে ব্যক্তিগত পর্যায়ে খেলোয়াড়দের কাছে বছরের সবচেয়ে মর্যাদাকর পুরস্কার ব্যালন ডি'অর। আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন হলে মেসির হাতে অষ্টমবারের মতো ব্যালন ডি'অর উঠবে। অন্যদিকে ফ্রান্স চ্যাম্পিয়ন হলে এমবাপ্লের হাতে প্রথমবারের মতো ব্যালন ডি'অর উঠবে। এ ক্ষেত্রেও পিএসজির খেলোয়াড়দের হাতে এবারের ব্যালন ডি'অর উঠতে যাচ্ছে। নিজেদের লিগ চ্যাম্পিয়ন হলেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কে জিতবে তার ভিত্তিতে এবারের ব্যালন ডি'অর কে পাবে, তা নির্ধারণে একেবারেই সুযোগ থাকবে না। পিএসজি তাদের লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন হবে এটা পরিস্কার, পাশাপাশি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সর্বোচ্চ যে কোনো স্তরে সেমিফাইনাল-ফাইনাল পৌঁছাতে পারবে এটাও ঠিক। ফলে পিএসজি ক্লাব পর্যায়ে মেসি এবং এমবাপ্লের ব্যক্তিগত সাফল্য শীর্ষে থাকায় এ দু'জনের যে কেউ এবারের ব্যালন ডি'অর পাবেন, এটার প্রায় পুরোটাই এখন পরিস্কার। 

 বিশ্বকাপ ফুটবলে সবচেয়ে বেশি ২৫টি করে ম্যাচ খেলার রেকর্ডটি রয়েছে যৌথভাবে জার্মানির লোথাল ম্যাথিউস এবং মেসির। ফাইনালে অংশগ্রহণের মাধ্যমে অনন্য এই রেকর্ডটি এখন মেসি নিজের করে নিচ্ছেন। মেসির মতো নিজের দক্ষতা, বৈচিত্র্য, নিপুণতা দিয়ে দলকে সঠিকভাবে নেতৃত্ব দিতে পেরেছে বিশ্বকাপ আসরে, অমন পরিমিত অধিনায়ক খুঁজে পাওয়া কঠিন। তাই অনেকেই মেসিকে আগামী বিশ্বকাপে দেখতে চাইবেন।

পরিমিত কথার অর্থ নানাভাবে ব্যাখ্যা করা যায়, সাধারণ অর্থে পরিমিত হলো ইংরেজিতে স্টান্ডার্ড। নানা আঙ্গিকের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যথাযথ ও যথোপযুক্ত রুচিসম্পন্ন কোনো কিছুকেই পরিমিত হিসেবে ধরা যায়। আর এর মাত্রা যখন অনন্য সাধারণ, অতিকায় উচ্চ কিংবা অভূতপূর্ব হয় তখন তাকে অতিপরিমিত বা অনন্য পরিমিত বলেও সংজ্ঞায়িত করা সম্ভব। যেমন মহামারি যখন অতিকায় ভয়ংকর, গোটা বিশ্বে তখন তাকে অতিমারি বলা হয়। ফুটবলের সব কলাকৌশল সম্পর্কে কোনো খেলোয়াড়ের অতিকায় পরিমিত জ্ঞান এবং তার অতিকায় পরিমিত প্রয়োগ দেখা যায়, তখন ওই ফুটবল খেলোয়াড়কে অবিসংবাদিত খেলোয়াড় হিসেবে সবাই মেনে নেবেন।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com