বিদ্যুতের দাম বাড়াবেন না

প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২৩ । ০০:০০ | আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২৩ । ০০:৫৮ | প্রিন্ট সংস্করণ

তামান্না আক্তার

যান্ত্রিক সভ্যতার প্রায় সব আবিস্কার ও প্রযুক্তির মূলে রয়েছে বিদ্যুৎ। শিল্প, কৃষি, পরিবহন, স্কুল-কলেজসহ বাড়ির দৈনন্দিন কাজে বিদ্যুতের অবদান অপরিসীম। একটি দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎ আবশ্যক। কিন্তু বর্তমানে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও বিদ্যুৎ সংকটে পড়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে। জ্বালানি তেল ও গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন এখন সংকটে। আন্তর্জাতিক বাজারে বিদ্যুতের কাঁচামাল এলএনজির দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়া এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিদ্যুৎ সংকট দেখা দিয়েছে বাংলাদেশেও। সরকার আপাতত এলএনজি আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। তাই দেখা দিয়েছে গ্যাসের ঘাটতি। গ্যাস সংকটের কারণে চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। এলএনজির ঘাটতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন যেমন কমে আসে, তেমনি বিদ্যুৎসেবা নিশ্চিত করাও কঠিন হয়ে পড়ে। গ্যাস সংকটের কারণে প্রতিদিন গড়ে ৮০০ থেকে ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

ইউরোপের দেশগুলো চাহিদার ৪০ শতাংশের বেশি আমদানি করে রাশিয়া থেকে। যুদ্ধের কারণে গ্যাস সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় ইউরোপের দেশগুলো আমদানির জন্য নির্ভর করছে এশিয়ার ওপর। বাংলাদেশ গ্যাস আমদানি করে মূলত কাতার থেকে। এখন ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কাতারকে। তাই দামের চেয়েও বড় ব্যাপার হলো প্রয়োজনীয় গ্যাসপ্রাপ্তি।

আগে গ্যাস সংকট দেখা দিলে তেল বা কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বাড়ানো হতো। কিন্তু এখন তা করা হচ্ছে না। বর্তমানে দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা গড়ে ১৩ হাজার মেগাওয়াট। দেশে মোট বিদ্যুৎকেন্দ্র ১৩৩টি। এর মধ্যে গ্যাসচালিত ৫৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ১১ হাজার ১৭ মেগাওয়াট। ফার্নেস অয়েলচালিত ৫৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ৫ হাজার ৫৪১ মেগাওয়াট এবং ১১টি ডিজেল কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ১ হাজার ৫১৫ মেগাওয়াট। জ্বালানি তেল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৭ হাজার মেগাওয়াট হলে দিনে গড়ে ২ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন হচ্ছে।

আমরা যদি নিজস্ব গ্যাস উত্তোলন করতাম, তাহলে সংকটে পড়তাম না। এলএনজি আমদানি করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়টি অযৌক্তিক। নিজস্ব গ্যাস শেষ হলে এলএনজি আমদানির কথা ভাবা যেত। কয়লা আমদানি করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করব। কিন্তু আমাদের যে নিজস্ব কয়লা আছে, সেটি উত্তোলন করব না- আমদানির ওপর নির্ভরতা আমাদের পরিকল্পনার মধ্যেই রয়ে গেছে।

তা ছাড়া বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সবার সচেতনতা বাড়াতে হবে। সবার মনে রাখতে হবে, বিদ্যুৎ স্টোর করে রাখার পণ্য নয়। এটি চলমান প্রক্রিয়া। বিদ্যুৎ চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন করতে হয়। তাই অপ্রয়োজনে বাতি, ফ্যান বা এসি চালিয়ে রাখা বন্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। অবৈধ লাইন বিচ্ছিন্নকরণ ও সিস্টেম লস কমিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি বিদ্যুতের সুষম বণ্টন করতে হবে। স্বল্পমূল্যে জনসাধারণের মধ্যে এনার্জি সেভিংস বাল্ক্ব বিতরণ করতে হবে। বিদ্যুতের সঠিক ব্যবস্থাপনা ও অপচয় রোধ করা গেলে জনদুর্ভোগ কমিয়ে আনা সম্ভব। বর্তমান বাস্তবতায় আরেক দফা বিদ্যুতের দাম বাড়ালে জনজীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com