ঘন কুয়াশায় ঝুঁকির মুখে ফসল

প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২৩ । ০০:০০ | আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২৩ । ০২:০২ | প্রিন্ট সংস্করণ

জাহিদুর রহমান

রংপুর ও দিনাজপুর অঞ্চলে শীতের স্থায়িত্ব ও তীব্রতা অন্য এলাকার তুলনায় বেশি। শৈত্যপ্রবাহের কারণে এসব এলাকায় বোরো ধানের চারা হলুদাভ হয়ে মারা যাচ্ছে। গাইবান্ধার সাদুল্যাপুরের কাজীবাড়ী সন্তোলা গ্রামের কৃষক আলমগীর হোসেন এবার পাঁচ একর জমিতে বোরো বুনতে বীজতলা তৈরি করেছেন; কিন্তু চারা বাড়ছে কম। আরও কয়েক দিন ঘন কুয়াশা থাকলে বীজতলা পুরোটাই নষ্ট হয়ে যেতে পারে- এমন আশঙ্কা করছেন তিনি। নীলফামারীতে বোরোর চারা হলুদ বর্ণ ধারণ করে দুর্বল হয়ে পড়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন কৃষক। শুধু বোরো ধান নয়, ঘন কুয়াশার কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছে সরিষা, আলুসহ রবি ফসল।

বেশ কয়েকটি জেলার কৃষকরা জানান, দুঃসময়েও তাঁরা পাশে পাচ্ছেন না কৃষি বিভাগের মাঠকর্মীদের। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দাবি, বোরোর চারা রক্ষায় কৃষকদের পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখাসহ বেশ কিছু পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘ মেয়াদে কম তাপমাত্রা বজায় থাকলে ধান, সরিষা, আলুসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। ঝরে পড়তে পারে আমের মুকুল।

দুই সপ্তাহ ধরে সারাদেশে তীব্র ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে; পড়ছে ঘন কুয়াশা। গত রোববার রোদ উঠলেও জানুয়ারি মাসে আরও শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশার আশঙ্কা আবহাওয়াবিদদের। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ বছর ৪৯ লাখ ৭৭ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ৭ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭২ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। ৬ লাখ ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সারাদেশে ১ লাখ ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। ভুট্টার জমি ১ লাখ ৪৭ হাজার হেক্টর।

কৃষকরা জানান, রাতভর বৃষ্টির মতো ঘন কুয়াশা পড়ার কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আলুর ক্ষেতে 'লেট ব্লাইট' রোগ দেখা দিয়েছে। এতে ছত্রাক ধরে পাতা ও কা পচে গাছ মরে যাচ্ছে। একই কারণে বোরো ধানের বীজতলায় 'কোল্ড ইনজুরি' দেখা দিয়েছে। এতে চারা মরে যাচ্ছে। আলুক্ষেতে ছত্রাকনাশক ছিটাচ্ছেন চাষিরা। কুয়াশার হাত থেকে ধানের চারা বাঁচাতে বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হচ্ছে। অনেক সময় এতেও কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

বোরোর চারার যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সে জন্য বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) কৃষকদের বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে। বলা হয়েছে, শৈত্যপ্রবাহের সময় বীজতলা স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢেকে রাখতে হবে। শৈত্যপ্রবাহ দীর্ঘ হলে বীজতলা দিনে-রাতেও ঢেকে রাখতে হবে। বীজতলায় ৩ থেকে ৫ সেন্টিমিটার পানি ধরে রাখতে হবে, এ ক্ষেত্রে নলকূপের পানি ব্যবহার করতে পারলে ভালো। তবে এই পানি প্রতিদিন পরিবর্তন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং পাতায় যে শিশির আটকাবে, তাও ঝরিয়ে দিতে হবে। বীজতলায় কোনো কারণে চারা হলুদ হয়ে গেলে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া জমিতে রোপণের জন্য কমপক্ষে ৩৫ থেকে ৪০ দিনের চারা ব্যবহার করতে হবে। এ বয়সী চারা রোপণ করলে শীতে চারার মৃত্যুহার কমে।

ব্রি'র মহাপরিচালক মো. শাহজাহান কবীর বলেন, উদ্বেগের কিছু নেই। শৈত্যপ্রবাহ বোরো ধান উৎপাদনে তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না। রোববার রোদ দেখা গেছে, তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে। পরামর্শ মেনে চললে চারার মৃত্যু হবে না, সতেজ থাকবে এবং ফলনও বেশি হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, জানুয়ারি মাস থেকে আমগাছে প্রচুর মুকুল ধরে। টানা শৈত্যপ্রবাহে আমের এই মুকুল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এমন আবহাওয়ায় মুকুল নষ্ট হওয়া ঠেকাতে বর্দোমিক্সচার অথবা সালফারজাতীয় কীটনাশক এক লিটার পানিতে দুই গ্রাম করে মিশিয়ে আমগাছে ব্যবহার করতে হবে। তবে আমগাছে শোষক পোকার (হপার) আক্রমণ হলে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে কীটনাশক স্প্রে করতে হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, বোরো রোপণের জন্য ৩ লাখ ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। এখনও মাঠ পর্যায় থেকে ক্ষতির খবর আসেনি। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কৃষকরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন। আলুতে এখনও কোনো সমস্যার খবর পাওয়া যায়নি। তবে ঠান্ডা দীর্ঘমেয়াদি হলে এর প্রভাব পড়তে পারে, আলুর পাতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এ জন্য কৃষকদের কিছু কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যাতে পাতা নষ্ট হওয়া বা অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত না হয়। কারণ, মাসখানেকের মধ্যেই আলুর মূল ফলন উঠতে শুরু করবে। শীতের কারণে সবজি ও ভুট্টার খুব বেশি সমস্যা হয় না বলে জানান তিনি।





© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com