সাকরাইন উৎসব

আকাশজুড়ে ঘুড়ির মেলা

প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারি ২৩ । ০০:০০ | আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২৩ । ০৪:২৪ | প্রিন্ট সংস্করণ

ইমরান হুসাইন, জবি

পুরান ঢাকায় শনিবার সাকরাইন উৎসবে ঘুড়ি ওড়ানো শেষে আগুন নিয়ে খেলা - সমকাল

আকাশজুড়ে উড়ছে বাহারি রঙের ঘুড়ি। বাড়ির ছাদ, অলিগলিতে নাটাই ধরে আছেন দুরন্ত শিশু, তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সের মানুষ। এভাবে দুপুর গড়িয়ে বিকেলের নরম আলো নেমে এলে শুরু হয় ঘুড়ি কাটাকাটি খেলা। শিশুদের আনন্দের যেন সীমা নেই! এ আনন্দ ছড়িয়ে যায় সব বয়সীর মধ্যে। ঘুড়ি কাটাকাটি খেলায় হেরে গিয়ে কারও মনে জমা হয় কষ্ট। কিন্তু এ কষ্টও বেশি সময় থাকে না। উৎসবের আমেজ উড়িয়ে নেয় কষ্টকেও। গতকাল শনিবার পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সাকরাইন উৎসবে এসব দৃশ্য মেলে।

এদিন পুরান ঢাকার আকাশ ছিল ঘুড়ির দখলে। অগণিত ঘুড়ি যেন ঝাঁক বাঁধা পাখি। গান-বাজনার মধ্য দিয়ে সকালে শুরু হয় উৎসব। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরো এলাকায় উৎসবের আনন্দ ছড়িয়ে যায়। বাড়তে থাকে আকাশে ঘুড়ির সংখ্যাও। এবার সাকরাইনের স্লোগান ছিল- 'ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গা বাঁচান'। ঢাকাবাসী সংগঠনের আয়োজনে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘুড়ি ওড়ায় বাংলাদেশ ঘুড়ি ফেডারেশন। এ নিয়ে বকশীবাজারের ঢাকা টাওয়ারে অনুষ্ঠানের আয়োজনও করা হয়। এতে ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন অংশ নেন। অনুষ্ঠানে কাওয়ালি গান-নৃত্য পরিবেশন ছাড়াও পিঠা-পুলির আয়োজন ছিল।

ধারণা করা হয়, ১৭৪০ সাল থেকে প্রতিবছর সাকরাইন উৎসব পালন করা হচ্ছে। দিনব্যাপী নানা আয়োজনে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে পুরান ঢাকার সব বাসিন্দা এতে অংশ নেন। শনিবার বংশাল, শাঁখারীবাজার, রায়সাহেব বাজার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, বাংলাবাজার, সূত্রাপুর, গেণ্ডারিয়া, ধোলাইখাল, বকশীবাজার, হাজারীবাগ এলাকায় মানুষ দিনব্যাপী ঘুড়ি উড়িয়েছেন। সেই সঙ্গে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী নানা খাবার এবং পিঠা-পুলির আয়োজন ছিল। ঘুড়ি ওড়ানোর এ উৎসবে অংশ নেয় পঙ্খীরাজ চোখদার বোয়াদার, গায়েল, নাখপান্দার, নোমাইলদার, বলদার, পেটকাদার, মাছরাঙা, টেক্কা, গরুশিং, রগগুড্ডি, প্লাস্টিক ঘুড়িসহ নানা নামের ঘুড়ি। ছোট-বড় সবাই শখের বশে ঘুড়ি উড়িয়েছেন।

সাকরাইনকে কেন্দ্র করে পুরান ঢাকার অলিগলিতে বসে ঘুড়ির দোকান। দোকানগুলোতে ২০ টাকা থেকে ৫০০-৬০০ টাকা দামের ঘুড়ি বিক্রি হয়েছে। বিক্রেতারা জানান, এবার তাঁরা ভালো বিক্রি করেছেন। শাঁখারীবাজারের ঘুড়ি বিক্রেতা সুশান্ত কুমার সাহা বলেন, করোনার কারণে দুই বছর উৎসবের আমেজ কিছুটা কম ছিল।

এবার ঘুড়ি ও নাটাই ভালো বিক্রি হয়েছে।

দিনের শেষে সূর্য ডুবতেই শেষ হয় ঘুড়ি ওড়ানো। তখন নতুন রং ধারণ করে আকাশ। নানা আলো ছড়িয়ে পড়ে আকাশের দিকে দিকে। হাজার হাজার ফানুস। সেসঙ্গে আতশবাজির আলোর ফুল ফুটতে থাকে। বিভিন্ন বাড়ির ছাদে গান-বাজনা, নৃত্য শুরু হয়। অনেক বাড়িতে ছিল ডিজে পার্টির আয়োজনও।

স্থানীয়রা জানান, এক সময় পৌষের শেষে জামাইরা শ্বশুরবাড়ি এলে তাঁদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হতো ঘুড়ি ও নাটাই। সব বাড়ির জামাই ঘুড়ি ওড়ালে ঘটা করে সেসব দেখতেন সবাই। তবে এটা এখন আর হয় না। তবু ঘুড়ি ওড়ানো সেই উৎসব রয়ে গেছে।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com