
তারুণ্যের ফ্রিল্যান্সিং
প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারি ২৩ । ০০:০০ | আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২৩ । ১০:১১ | প্রিন্ট সংস্করণ
পান্থ বিহোস

ফ্রিল্যান্সিংকে বলা হয় মুক্ত পেশা। অর্থাৎ একজন ফ্রিল্যান্সার নিজের স্বাধীনমতো যখন ইচ্ছা কাজ করতে পারেন। ধরাবাঁধা কোনো নিয়ম নেই। যে কারণে সারাবিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও প্রচুর জনপ্রিয় হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার। বিশেষ করে স্বাধীনচেতা তরুণ-তরুণীদের কাছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি না পেরোতেই অনেকে হয়ে ওঠেন প্রফেশনাল।
যেভাবে ফ্রিল্যান্সিং করা হয়
ফ্রিল্যান্সিং পেশাটি বেশি জনপ্রিয় হয়েছে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে। এক দেশে বসে অন্য কোনো দেশের কারও কাজ করে দেওয়াটাই হচ্ছে আউটসোর্সিং। ধরুন, অস্ট্রেলিয়ার অধিবাসী ম্যাকগিলের দরকার একটি ওয়েবসাইট। বাংলাদেশে বসে কেউ ওয়েবসাইটটি তৈরি করে দিলেন, বিনিময়ে অর্থ পেলেন। কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দু'জন আলাদা হয়ে গেলেন। প্রয়োজনে বাংলাদেশি ব্যক্তি পরবর্তী এক মাস কাজ না-ও করতে পারেন। অর্থাৎ, পরবর্তী সময়ে যখন প্রয়োজন মনে হবে, তখন করবেন। এই যে স্বাধীনভাবে কাজ করা, এটিই ফ্রিল্যান্সিং। এসইও কনসালট্যান্ট এবং অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার আশফাকুর রহমান রিয়াদের কাছে ফ্রিল্যান্স শুরু করার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'দেশের জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য অংশ তরুণ। তরুণ প্রজন্ম আমাদের পুরো অর্থনীতিকে ব্যাপকভাবে বদলে দিতে পারে। বর্তমানে প্রধানত প্রযুক্তিভিত্তিক কাজ, যেমন- ওয়েব ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট, সফটওয়্যার এবং অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট, আর্টিকেল রাইটিং, কনটেন্ট মার্কেটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, মাল্টিমিডিয়া, আর্কিটেকচার, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ওয়েব রিসার্চ, ডাটা এন্ট্রি ইত্যাদি কাজ দিয়ে শুরু করতে পারে। ইউটিউব একটি শিক্ষামূলক প্ল্যাটফর্ম। সুতরাং, কেউ বিষয়গুলোতে দক্ষতা বাড়াতে চাইলে ইউটিউব আপনার কাঙ্ক্ষিত বিষয়গুলো আরও ভালোভাবে শিখতে সাহায্য করতে পারে।'
কী শিখবেন; কোথায় শিখবেন?
ফ্রিল্যান্স প্রোগ্রামার হাসিবুল হাসানের মতে, 'যে কেউ ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন। এখানে বয়সের সীমাবদ্ধতা বা লিঙ্গের কোনো ভেদাভেদ নেই। তা ছাড়া এখানে কোনো ডিগ্রি বা একাডেমিক সার্টিফিকেটেরও প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন শুধু লেগে থাকার ইচ্ছাশক্তি এবং কর্মদক্ষতা। পিওডি বা প্রিন্ট অন ডিমান্ড বর্তমানে আয়ের বেশ জনপ্রিয় একটি মাধ্যম। এখানে প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্টের কোনো ঝামেলা নিজের কাছে না থাকায় এবং গ্রাহক তাঁর প্রয়োজনীয় জিনিসের পছন্দসই প্রিন্ট পাওয়ায় এটি বেশ দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। পিওডি প্ল্যাটফর্মগুলোতে
আপনি কয়েক মিনিটে একটি চিন্তার সেটআপ করে নিতে পারবেন এবং আপনার সৃজনশীল, প্রফেশনাল বা ফানি ডিজাইন আপলোডের মাধ্যমে সেগুলো বিক্রি করতে পারবেন। এভাবে বিবেচনা করলে খুবই সহজ একটি প্রসেস। তবে আপনি ডিজাইন না করতে পারলে পার্টনার হিসেবে ডিজাইনার রাখতে পারেন বা ফ্রিল্যান্স ডিজাইনার হায়ার করতে অথবা ডিজাইন বিক্রি করে এমন প্ল্যাটফর্ম থেকেও কিনতে পারেন।' মনে রাখবেন, দক্ষতা ছাড়া দুনিয়ার কোথাও চাকরি মেলে না। আর ফ্রিল্যান্সিং একটি পেশা। তাই ফ্রিল্যান্সিংয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে যে বিষয়ে ফ্রিল্যান্স করবেন, ঠিক সেই বিষয়ে দক্ষ হতে হবে। বর্তমানে কনটেন্ট রাইটিং, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ডাটা ম্যানেজমেন্ট, অটোমেশন, প্রোগ্রামিং, ওয়েব ডিজাইন, এসইও ইত্যাদি বিষয়ের চাহিদা বেশি। যদি কেউ এই বিষয়গুলোর যে কোনো একটি ভালো করে শিখে দক্ষ হয়ে নেন, তবে তাঁর জন্য ফ্রিল্যান্সিং পেশা অবশ্যই আশীর্বাদস্বরূপ। ইউটিউব, গুগল, ইউডেমি, ফেসবুক গ্রুপে প্রচুর রিসোর্স পাবেন ফ্রিল্যান্সিং শেখার জন্য। এখন বাংলাতেও প্রচুর গাইডলাইন আছে। ভিডিও টিউটোরিয়াল, টেক্সট গাইডলাইন ব্লগ নিয়মিত কয়েক মাস পড়াশোনা করলে অবশ্যই ভালো কিছু করতে পারবেন। ফেসবুকের এই প্রফেশনাল গ্রুপগুলোতে ঢুঁ মারতে পারেন- সার্পকী:https://www.facebook.com/ groups/serpkey, অথরিটি এইড: https://www. facebook.com/groups/AuthorityAid ও নিসপুরসুইট: https://www.facebook.com/ groups/ nichesiteproject3
যেখানে মেলে কাজ
ফ্রিল্যান্সিং কাজের অসংখ্য পথ। এর মধ্যে মার্কেটপ্লেস, সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ও নিজস্ব নেটওয়ার্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপওয়ার্ক upwork.com), ফ্রিল্যান্সার (freelancer.com), গুরু (guru.com)- এমন বেশ কিছু মার্কেটপ্লেস আছে, যেখানে কাজদাতা বা বায়ার কাজের বর্ণনা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি দেন। যিনি কাজটা করে দেবেন তিনি ফ্রিল্যান্সার; বায়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বায়ার-ফ্রিল্যান্সারের শর্তগুলো মিলে গেলে চুক্তি হয় মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমে। বায়ার কাজের মূল্যমান অর্থ মার্কেটপ্লেসে জমা রাখেন। কাজ শেষ হলে ফ্রিল্যান্সার তা জমা দেন। বায়ার কাজ বুঝে নিয়ে ডিপোজিট মানি রিলিজ করে দেন। ফ্রিল্যান্সার তা পেয়ে যান। এভাবে একটি কাজ শেষ হয়। প্রফেশনাল সোশ্যাল নেটওয়ার্ক, যেমন লিঙ্কডইনে প্রচুর কাজ পাওয়া যায়। ফ্রিল্যান্সার যে কাজে পারদর্শী সেই নেটওয়ার্কে ঘোরাঘুরি করে কাজ ম্যানেজ করে নেন। নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কাজ করা সবচেয়ে বেশি লাভজনক। যদিও আমাদের দেশে পেমেন্ট গেটওয়ে পেপাল না থাকার কারণে এভাবে কাজ করা অনেক কঠিন। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মার্কেটপ্লেসে কাজ করার পর অনেক ফ্রিল্যান্সারই নিজস্ব নেটওয়ার্ক তৈরি করে ফেলতে পারেন। ফলে বায়ারের সঙ্গে সরাসরি কন্ট্রাক্ট করে নিজের পছন্দমতো কাজ করা যায়। দেখা যায়, এভাবে কাজ করলে বড় বড় প্রজেক্ট পাওয়া সম্ভব। যাতে করে একটি কাজের মাধ্যমেই একজন ফ্রিল্যান্সার ১০ থেকে ১৫ জনের টিম মেম্বার নিয়ে সারাবছর কাজ করে যেতে পারেন।
শুরু করুন পছন্দের কাজ দিয়ে
হুটহাট শুরু না করে যদি সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা সাজিয়ে কাজে নামেন, তবে সফলতা পাবেনই। ফ্রিল্যান্স কন্টেন্ট রাইটার আতিয়া শাহানা তাইসিয়ার ক্যারিয়ারে চোখ রাখলে দেখা যায়, ২০১৬ সালে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেন রাইটিংয়ের মাধ্যমে। ভালো লাগা থেকেই তিনি রাইটিং ক্যারিয়ার বেছে নেন। তিনি বলেন, 'নতুন কেউ কনটেন্ট রাইটিংয়ে ফ্রিল্যান্স করতে চাইলে প্রথমেই আয়ের কথা না ভেবে নিজেকে তৈরি করতে হবে। সে ক্ষেত্রে কারও কাছে ইন্টার্নশিপ নিতে পারলে ভালো হয়। শুরুতেই আয়ের কথা ভাবলে হতাশা চলে আসতে পারে মনে। ফ্রিল্যান্সিং এমন এক পেশা, যেখানে স্কিলড না হলে দু-এক মাস কাজ করা গেলেও লং টাইমের জন্য মার্কেটে টিকে থাকা যাবে না।' মনে রাখবেন, ১৫ থেকে ১৭ বছর পড়াশোনা শেষে যেখানে আমরা ৩০ হাজার টাকা মাসিক বেতনের একটি চাকরি ম্যানেজ করতে পারলেই খুশি, সেখানে ৫০০ থেকে ১০০০ ডলার মাসে আয় করার জন্য কি অন্তত ১৫ থেকে ১৭ মাস কাজ শেখা জরুরি নয়? প্রশ্নটা নিজেকেই করুন। ঠকবেন না কখনও- এটি নিশ্চিত করে বলতে পারি!
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com