
অযথা বিদেশ সফর নয়, ক্রীড়া পরিষদের নির্দেশনা
প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২৩ । ০০:০০ | আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২৩ । ১২:৪৫ | প্রিন্ট সংস্করণ
সাখাওয়াত হোসেন জয়

কখনও ভ্রমণবিলাস আবার কখনও বা মানব পাচার! অখ্যাত টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের নামে বিদেশ সফরে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে এমনটা হয়ে আসছে বছরের পর বছর ধরে। যেখানে দেশকে আন্তর্জাতিক কোনো সাফল্য দিতে তো পারেই না, বিদেশ যাওয়ার বেলায় সেই নামকাওয়াস্তে ফেডারেশনের কর্মকর্তারাই থাকেন সবার আগে। উচ্চমহলের আশীর্বাদে এসব ফেডারেশনগুলো খুব সহজেই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) থেকে অনুমতিপত্র পেয়ে যায়।
দেরিতে হলেও এ বিষয়ে এবার নড়েচড়ে বসেছে এনএসসি। বৈশ্বিক আর্থিক মন্দার কথা বিবেচনা করে ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোকে 'অযথা বিদেশ সফর' না করতে নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। প্রয়োজন ছাড়া বিদেশে দল পাঠানোর ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করেছে সংস্থাটি। এনএসসি থেকে এই সংক্রান্ত একটি চিঠি গত মঙ্গলবার সব ফেডারেশনে পাঠানো হয়েছে।
মূলত সরকারের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ফেডারেশনগুলোকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বিদেশে কোনো দল প্রেরণের ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী হতে নির্দেশনা দিয়েছে এনএসসি। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পরিচালক (ক্রীড়া) এস এম শাহ হাবিবুর রহমান হাকিমের স্বাক্ষরিতে চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, দল প্রেরণের ক্ষেত্রে কঠোরভাবে যাছাই-বাছাই করতে হবে। অত্যাবশ্যক এবং অতি প্রয়োজন না হলে অযথা কোনো খেলোয়াড়, কর্মকর্তা, কোচ ও কোনো ব্যক্তিকে দলে অন্তর্ভুক্ত না করার জন্য অনুরোধ করা হলো। চিঠিটা এমন সময় ইস্যু করেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, তার আগেই আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যর্থ কয়েকটি ফেডারেশন বিদেশ সফরের সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছে।
২ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদায় ভেগাস শুট আরচারিতে অংশ নেবেন বাংলাদেশের এক প্রতিযোগী কাজী রাফিদ ইবনে রাজিব। তার সঙ্গে অফিসিয়াল কাম কোচ হিসেবে যাচ্ছেন মোহাম্মদ ফারুক ঢালি। এই প্রতিযোগিতায় আদৌ বাংলাদেশের কোনো সাফল্য আসবে কিনা, তা নিয়েই সংশয় ক্রীড়াবোদ্ধাদের। আর এই খেলার সঙ্গে বেশিরভাগই অপরিচিত।
ফেব্রুয়ারিতেই কোচ, কর্মকর্তা ও খেলোয়াড় মিলিয়ে ১৩ সদস্যের বাংলাদেশ দল থাইল্যান্ডের ব্যাংককে যাবে এশিয়ান জুজুৎসু প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে। জুজুৎসু- এই খেলা সম্পর্কে যেখানে ধারণাই সামান্য, সেখানে বিদেশ গিয়ে 'ভ্রমণবিলাসই' কর্মকর্তাদের বড় অর্জন। যেখানে সরকার থেকে বলা হয়েছে- প্রয়োজন ছাড়া সদস্য সংখ্যা না বাড়ানো, সেখানে ওয়েস্ট এশিয়া বেসবলে অংশ নিতে ২২ জানুয়ারি ইসলামাবাদ যাচ্ছেন বাংলাদেশের ১৯ জন। আর এ তিনটি ফেডারেশনকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ।
আর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলকে বাংলাদেশে আনা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। লিওনেল মেসিদের ঢাকায় আনতে শত কোটি টাকার মতো লাগবে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের এই নির্দেশনা পেয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনও। দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনেক কর্মকর্তা অতীতে দলের সঙ্গে যুক্ত না থেকেও বিদেশে গেছেন। সামনে ফুটবলের অনেক ব্যস্ত সূচি। ফেডারেশনের খরচে কর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের সুযোগও চলে এসেছে। কয়েক বছর আগে সরকারি খরচে টেনিসের একটি গ্র্যান্ড স্লাম প্রতিযোগিতা দেখতে গিয়েছিলেন এনএসসিরই এক শীর্ষপদের কর্মকর্তা।
আর দেশের সম্ভাবনাময় ইভেন্ট আরচারি, অ্যাথলেটিকসেও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় 'ভ্রমণবিলাস' করার নজির আছে কর্মকর্তাদের। সামনে তীর-ধনুকের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতা আছে। জুলাই-আগস্টে জার্মানিতে ওয়ার্ল্ড আরচারি চ্যাম্পিয়নশিপ, আগস্টের মাঝামাঝিতে প্যারিসে বিশ্বকাপ আরচারিতে যেতে কর্মকর্তাদের লম্বা লাইন পড়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কারণ তাঁরা তো ফেডারেশনের খরচেই বিদেশ ঘুরে আসেন। এখন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নতুন এই নির্দেশনাতে যদি টনক নড়ে বিদেশ ভ্রমণপিপাসু কর্তাদের।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com