অন্যদৃষ্টি

বাইরে ফিটফাট...

প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২৩ । ০০:০০ | আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২৩ । ০৪:২১ | প্রিন্ট সংস্করণ

মিজান শাজাহান

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট ওঠানামার ক্ষেত্রে এখনও সেই মান্ধাতার আমলের প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে বাধ্য হয়ে-বিশেষত কুয়াশার সময়- পাইলটরা দেশের অন্যত্র অথবা দেশের বাইরে বিভিন্ন বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ অবতরণ করাচ্ছেন। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও দেশের প্রধান বিমানবন্দরে আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন করতে না পারার দায় সংশ্নিষ্টরা এড়াতে পারে না। সমকালে ২০ জানুয়ারি 'উড্ডয়ন-অবতরণে সেকেলে প্রযুক্তি' শীর্ষক সংবাদে দেখা যায়, আধুনিক প্রযুক্তির ইনস্ট্রুমেন্ট ল্যান্ডিং সিস্টেম (আইএলএস) না থাকায় হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে বিঘ্ন ঘটছে ফ্লাইটের উড্ডয়ন-অবতরণ। কুয়াশার কারণে ঘোলাটে আবহাওয়ার মধ্যে প্রায়ই ঢাকার ফ্লাইট দেশ বা দেশের বাইরে অন্য কোনো বিমানবন্দরে অবতরণ করছে। মধ্যরাত থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে।

আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ অনেক দেশ আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় রানওয়ের শূন্য দৃশ্যমানতায় (ভিজিবিলিটি) ফ্লাইট ওঠানামা ঠিক রেখেছে। সেখানে আমাদের কর্তারা দিনের পর দিন সমস্যার মুখোমুখি হলেও সমাধান করতে পারেননি। এখন বলছেন, আগামী শীতের আগেই আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজিত হবে। দেশকে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে তুলনা করার আগে এসব ত্রুটি দূর করা দরকার। হাতিরঝিলের চকচকে আলো মনোমুগ্ধকর; কিন্তু শীতকালে বিমানবন্দরের রানওয়েতে অন্ধকার থাকলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়। আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইটে দেশীয় যাত্রীর পাশাপাশি বিদেশি যাত্রীও যাতায়াত করেন। তাঁরা যখন শুনবেন প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে বিমান ঢাকায় না নেমে কলকাতায় নেমেছে, তখন তাঁদের কাছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

ফ্লাইট অন্য দেশের বিমানবন্দরে অবতরণ করার কারণে বিপুল আর্থিক ক্ষতিও হয়। বিমান সংস্থাগুলোকে অতিরিক্ত অবতরণ চার্জ ও জ্বালানি খরচ দিতে হয়। এ ছাড়া যাত্রী ও তাঁদের স্বজনরা অনেক ভোগান্তির শিকার হন। এ দুর্ভোগ এ বছরই হচ্ছে তা নয়, বহুবছর ধরে তা চলছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো, এতদিন পর এসে কর্তৃপক্ষ বলছেন-অর্থমঞ্জুরিসহ সংশ্নিষ্ট প্রকল্পে অগ্রগতি ঘটার কথা।

বিদেশ থেকে শাহজালাল বিমানবন্দরের উদ্দেশে উড়ে আসা কোনো বিমান নির্দিষ্ট সময়ে রানওয়েতে অবতরণ করতে না পারলে নানা ধরনের ঝুঁকি আছে। জ্বালানি স্বল্পতার কারণে কুয়াশা কাটা পর্যন্ত আকাশে উড়ে থাকতে না পারলে যেমন দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায়, একই সঙ্গে পার্শ্ববর্তী কোনো দেশ বা দেশের অন্য কোনো বিমানবন্দর পর্যন্ত উড়ে যেতে পর্যাপ্ত জ্বালানি মজুত না থাকলেও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই শীত-বর্ষা-গ্রীষ্ফ্ম যে কোনো ঋতুতে ২৪ ঘণ্টা উড্ডয়ন-অবতরণ উপযোগী বিমানবন্দর নিশ্চিত করতে হবে।

শুধু অবকাঠামো নির্মাণ করে আন্তর্জাতিক মান দাবি করা যায় না। শাহজালাল বিমানবন্দরকে সম্প্রসারিত করা হচ্ছে। বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। অথচ কুয়াশার সময় এখানকার বিমান ভারতে অবতরণ করছে! আমাদের নীতিনির্ধারকদের আরও বাস্তববাদী হওয়া দরকার। ওপরে ফিটফাট ভেতরে সদরঘাট হলে শঙ্কা থেকেই যাবে।

বিমানের রানওয়েতে উড্ডয়ন-অবতরণে সামান্য ভুল বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ২০১৮ সালে নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণকালে বাংলাদেশের একটি বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে ৭১ যাত্রীর ৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর আহত পাইলটও পরে মারা যান। যদিও সেই দুর্ঘটনার সঙ্গে কুয়াশার কোনো সম্পর্ক ছিল না। কিন্তু বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও পাইলটের সঙ্গে রানওয়ে-সংক্রান্ত ভুল বোঝাবুঝিকে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে সংবাদমাধ্যমে। কুয়াশার সময় অস্পষ্ট রানওয়েতে বিমান অবতরণ করাতে গেলেও এ ধরনের দুর্ঘটনা হতে পারে।

হযরত শাহজালালের পাশাপাশি দেশের অন্য আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আইএলএস নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রয়োজন হলে অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরেও এটি সংযোজন করা যেতে পারে। কারণ মাঝেমধ্যে দুপুর পর্যন্ত কুয়াশা থাকে। ফলে এ সময় অভ্যন্তরীণ রুটের বিমান উড্ডয়ন-অবতরণ বন্ধ রাখতে হবে। উড়োজাহাজের মতো বাহন এবং এর সঙ্গে সংশ্নিষ্ট বিষয়াদির ব্যাপারে নূ্যনতম আপস করার সুযোগ নেই। কারণ, বিমান দুর্ঘটনার পরিণতি সবারই জানা আছে। ১৫ জানুয়ারি নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় ৭২ আরোহীর সবার মৃত্যু থেকে শিক্ষা নেওয়া যেতে পারে।

মিজান শাজাহান: সহ-সম্পাদক, সমকাল
mizanshajahan@gmail.com

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com