কর্ণফুলী গ্যাসের সব কর্মীকে ১৮ লাখ টাকা বোনাস

প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২৩ । ০০:০০ | আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২৩ । ১২:২৫ | প্রিন্ট সংস্করণ

সমকাল প্রতিবেদক

ফাইল ছবি

বিতরণ কোম্পানিগুলো গ্যাস বিক্রি বাবদ একটা মাশুল (বিতরণ মার্জিন) পায়। এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) নির্দেশনা অনুসারে এই মার্জিন ব্যতীত মুনাফার বাড়তি অর্থ নিজেদের কাছে রাখতে পারে না গ্যাস কোম্পানিগুলো। কিন্তু কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানির (কাফকো) কাছে বেশি দামে বিক্রি করা গ্যাসের লভ্যাংশ পেট্রোবাংলাকে গত ১০ বছর দেয়নি কর্ণফুলী গ্যাস (কেজিডিসিএল)। এর পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা। এই অর্থ ৩৮৩ কর্মকর্তা-কর্মচারী বোনাস হিসেবে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। শুধু ২০২১-২২ অর্থবছরে একেকজন বোনাস নিয়েছেন ১৮ লাখ টাকা।

পেট্রোবাংলা সূত্রে জানায়, ২০১০ সালে বাখরাবাদ গ্যাস কোম্পানি ভেঙে কেজিডিসিএল গঠিত হয়। শুরু থেকেই কাফকোর সঙ্গে পৃথক চুক্তি অনুসারে অন্য সার কারখানার চেয়ে বেশি দামে গ্যাস বিক্রি করা হতো। বাখরাবাদ ২০১০ সাল পর্যন্ত কাফকোর কাছে আদায় করা অতিরিক্ত অর্থ পুরোপুরি পেট্রোবাংলাকে পরিশোধ করেছে। কেজিডিসিএল ২০১০ সালের জুলাই মাস থেকে এখন পর্যন্ত বিইআরসির নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত হারে কাফকোর কাছে গ্যাস বিক্রি করলেও বাড়তি টাকার একটি বড় অংশই পেট্রোবাংলার খাতে জমা করেনি।

এ বিষয়ে হিসাব চেয়ে পেট্রোবাংলা কেজিডিসিএলকে ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১১টি চিঠি পাঠালেও কোনো সাড়া মেলেনি।

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে জ্বালানি বিভাগের এক সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কাফকোর কাছ থেকে বিইআরসি নির্ধারিত গ্যাসের মূল্যের অতিরিক্ত অর্থের অর্ধেক পেট্রোবাংলার কোষাগারে দিতে হবে। সে সময় কাফকোর প্রতি ইউনিটের দাম ছিল ১২ টাকা আর বিইআরসি অন্য সার কারখানার জন্য নির্ধারণ করেছিল প্রতি ঘনমিটার ২ টাকা ৭১ পয়সা। অর্থাৎ ১ ইউনিটেই কাফকোর কাছ থেকে কেজিডিসিএল অতিরিক্ত পেত ৯ টাকা ২৯ পয়সা। পরে অন্য সার কারখানার গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কাফকোর দামও বেড়েছে। ২০১৯ সালের ৩০ জুন বিইআরসি সার কারখানার প্রতি ঘনমিটারে দাম ৪.৪৫ টাকা এবং ২০২২ সালের জুনে তা বাড়িয়ে প্রতি ঘনমিটার ১৬ টাকা করে। এখন কাফকোর কাছে প্রতি ঘনমিটার গ্যাস বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়।

পেট্রোবাংলার হিসাব বলছে, ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত কাফকোর কাছে কেজিডিসিএল ৪৩৯ কোটি ঘনমিটারের বেশি গ্যাস বিক্রি করেছে। কাফকোর সঙ্গে চুক্তি অনুসারে এর দাম ৫ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা।

অন্য সার কারখানার নির্ধারিত মূল্য অনুসারে এই পরিমাণ গ্যাসের দাম ১ হাজার ৪৫৭ কোটি টাকা। ফলে কেজিডিসিএলের বাড়তি আয় ৩ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে কেজিডিসিএল পেট্রোবাংলাকে দিয়েছে মাত্র ৯৬১ কোটি টাকা। বিইআরসির নির্দেশনা অনুসারে পেট্রোবাংলা পাবে ২ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা।

গ্যাসের ঘাটতি মেটাতে ২০১৮ সাল থেকে এলএনজি আমদানি করছে সরকার। প্রতি ঘনমিটার এলএনজি আমদানিতে পেট্রোবাংলার খরচ হয় ৪০-৫০ টাকা। ২০১৯ সালের বিইআরসির আদেশ অনুসারে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর থেকে পেট্রোবাংলা গড়ে পেত ৭ টাকা ১৭ পয়সা। ২০২২ সালের জুনে এই দাম বেড়ে হয় ১১ টাকা ৯৭ পয়সা।

গত সপ্তাহে জ্বালানি বিভাগ গ্যাসের দাম বৃদ্ধির পর এই গড় দাম দাঁড়িয়েছে ২১ টাকা ৬৭ পয়সা। অর্থাৎ কয়েক দফা দাম বৃদ্ধি করলেও এলএনজি আমদানিতে বিপুল ভর্তুকি লাগছে। এই ভর্তুকির অর্থ সংস্থানের জন্য কোম্পানিগুলোর অতিরিক্ত মুনাফা পেট্রোবাংলাকে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল বিইআরসি। কিন্তু কর্ণফুলী সেই কথায় কান দেয়নি। সূত্র জানায়, লভ্যাংশের ৫ শতাংশ কর্মচারীদের বোনাস তহবিলে জমা হয়। এর ৮০ শতাংশ কর্মচারীদের বোনাস হিসেবে দেওয়া হয়। বাকি ২০ শতাংশ ১০ শতাংশ করে আরও দুটি তহবিলে জমা হয়।

কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, জ্বালানি সচিব কেজিডিসিএলের বোর্ড চেয়ারম্যান হন। আমলা দিয়ে পরিচালিত বোর্ডের সিদ্ধান্ত জনস্বার্থবিরোধী হবে, এটাই নিয়ম।

জানতে চাইলে কেজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল ইসলাম গতকাল সমকালকে বলেন, তিনি নতুন এসেছেন। তাঁর আসার আগেই কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুসারে লভ্যাংশ বণ্টন করা হয়েছে। তিনি জানান, পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুসারে বিইআরসির নির্দেশনার বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল করা হয়েছে।

জানতে চাইলে বিইআরসির চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল সমকালকে বলেন, কাফকোর কাছে অতিরিক্ত দামে গ্যাস বিক্রি ও লভ্যাংশ বণ্টনের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, তিনি নতুন দায়িত্ব নিয়েছেন। তাই জেনে পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে মন্তব্য করবেন।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com