চট্টগ্রামে জন্মনিবন্ধন সনদ জালিয়াতি

ঘুরেফিরেই খালিদের নাম, এখনও অধরা

প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২৩ । ০০:০০ | আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২৩ । ০১:৩৯ | প্রিন্ট সংস্করণ

আব্দুল্লাহ আল মামুন, চট্টগ্রাম

সরকারি সার্ভারে অনুপ্রবেশ করে চট্টগ্রামের তিনটি ওয়ার্ডের আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যুর ঘটনা প্রথম ধরা পড়েছিল ২০২১ সালের শুরুতে। এরপর দুই বছর পেরিয়ে গেলেও ওই ঘটনার হোতা জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন বিভাগের সাবেক প্রোগ্রামার মো. খালিদকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। সম্প্রতি চট্টগ্রামের পাঁচটি ওয়ার্ডের ঠিকানা ব্যবহার করে ৫৫০টি জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যুর ঘটনায় আবার উঠে এসেছে খালিদের প্রসঙ্গ।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২১ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা, ৪১ নম্বর দক্ষিণ পতেঙ্গা ও ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ডে ১৮টি জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু হয়। তবে ওই নিবন্ধনের বিষয়ে কিছুই জানতেন না সংশ্নিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও জন্মনিবন্ধন সহকারীরা। বিষয়টি নজরে আসার পর ওই বছরের জুনে পতেঙ্গা ও চকবাজার থানায় তিনটি মামলা করা হয়। মামলার তদন্তে নেমে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) কাউন্টার টেররিজম ইউনিট গত বছরের ডিসেম্বরে যশোরের শার্শা উপজেলার মনিহারি দোকানি আশরাফুল আলমকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাঁর কাছ থেকে খালিদ ছাড়া গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার মো. আরিফ ও ঢাকার খাইরুল ইসলামের তথ্য পায় পুলিশ। তবে তাঁদের কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

জিজ্ঞাসাবাদে আশরাফুল জানিয়েছেন, খালিদের কাছে জন্মনিবন্ধনের সরকারি সার্ভারে ঢোকার আইডি ও পাসওয়ার্ড রয়েছে। এই আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে দেশের যে কোনো ঠিকানায় অনলাইনে জন্মনিবন্ধনের তথ্য সংযুক্ত ও সংশোধন করতে পারে সে। বিনিময়ে সর্বনিম্ন দেড় থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয় চক্রটি। রোহিঙ্গাসহ কয়েক হাজার ভুয়া জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরি করেছে চক্রটি।

চট্টগ্রামে সম্প্রতি ৫৫০টি জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যুর ঘটনায়ও খালিদের চক্রকেই সন্দেহ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে তারা খালিদের চক্রের কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার আসিফ মহিউদ্দীন সমকালকে বলেন, আগের চক্রের সঙ্গে এই চক্রের কোনো যোগসূত্র আছে কিনা, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের পর জানা যাবে। আমরা এখন অভিযানে আছি। অভিযান শেষ হলে বিস্তারিত জানানো হবে।

এদিকে জন্মনিবন্ধনের সার্ভারে প্রবেশের আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহারে ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও নিবন্ধন সহকারীদের অসতর্কতাকেও দায়ী করা হয়েছে। জন্মনিবন্ধনের তথ্য সহকারী সার্ভারে দেওয়ার পর কাউন্সিলর তাঁর আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে 'বহি নম্বর' দিয়ে অনুমোদন দেওয়ার কথা। তবে বাস্তবে অধিকাংশ ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের আইডি ও পাসওয়ার্ডের তথ্য থাকে জন্মনিবন্ধন সহকারীদের হাতে। শুধু জন্মনিবন্ধন সনদ প্রিন্ট দেওয়ার পর স্বাক্ষর করেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর। ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের করা জিডিতেও এর সত্যতা মিলেছে।

গতকাল সোমবার কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠকে এ নিয়ে সতর্ক করেছেন চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এ ছাড়া ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী ও ৪১ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডে নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডে ৪০৯টি জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যুর ঘটনায় মামলা করা হবে বলে জানিয়েছেন কাউন্সিলর মোহাম্মদ ইসমাইল।

চসিক মেয়র সমকালকে বলেন, কাউন্সিলরদের সতর্ক হতে বলেছি। এ ছাড়া সার্ভারের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিতে রেজিস্ট্রার জেনারেলের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বৈঠক করবেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।



© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com