শেষ চিঠি

প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২৩ । ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

প্রশান্ত সরকার

চিঠি এখন আর লেখা হয় না। মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবারের এ যুগে আগের মতো চিঠি লেখার ফুরসত কই! পরিবর্তনের ধারায় সবকিছুই পরিবর্তিত হচ্ছে। কিন্তু অতীতের অনুভূতি বারবার টেনে নিই সেই ফেলে আসা দিনগুলোকে। মনে পড়ে সেই প্রথম চিঠির স্মৃতি। যশোর জেলার বাঘারপাড়া থানার দোহাকোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আমি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি; নিজ জন্মস্থান নড়াইলে। আমার বড় দাদাকে লিখেছিলাম প্রথম চিঠি। উত্তর পেতে ১০-১২ দিন সময় লেগেছিল। তখনকার বার্তা পাঠানোর মাধ্যমই ছিল চিঠি। বিভিন্ন নিমন্ত্রণ, আমন্ত্রণ, যে কোনো সংবাদ চিঠির মাধ্যমে আদান-প্রদান হতো। আজও চিঠি লেখার গুরুত্ব রয়ে গেছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে; প্রিয় মানুষের কাছ থেকে কোনো বার্তা চিঠির মাধ্যমে পাওয়ার মজাটা একেবারে কম নয়। তবে প্রিয় মানুষটিকে লেখা শেষ চিঠিটি যেন আজও শিহরণ জাগায় মনে- 'প্রিয়তমা, দিবসে জনগণের কোলাহল ভেবে পূর্বাকাশের উদিত সূর্য পশ্চিম গগনে ঘুমিয়ে পড়েছে, আর সেই সঙ্গে দেখা দিয়েছে অসংখ্য তারার মেলা। কী ফুট ফুটে রুপালি চাঁদ, চারদিকে যেন আলোয় আলোয় আলোকিত। ঝিঁঝিপোকার আওয়াজ ও হাসনাহেনা ফুলের সুবাসে চারদিক মুখরিত। মুখরিত এই স্মৃতিবিজড়িত ক্ষণে লিখছি তোমার পানে আমার চিঠিখানি... উত্তর পাওয়ার প্রতীক্ষায় রইলাম।' চিঠি নিয়ে আছে অনেক মজার ঘটনা। ১৮৬২ সালে ভিক্টর হুগো (ফরাসি সাহিত্যিক) তাঁর উপন্যাস 'লা মিজারাবল' প্রকাশের পর প্রকাশককে একটি চিঠি লিখেছিলেন, সেখানে লেখা ছিল শুধুই একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন (?)। প্রকাশকও উত্তর দিলেন শুধু বিস্ময়কর চিহ্ন (!) দিয়ে। এর মানে ভিক্টর হুগো প্রশ্নবোধক চিহ্ন দিয়ে জানতে চেয়েছিলেন, 'কেমন বিক্রি।' প্রকাশক বিস্ময়কর চিহ্ন দিয়ে জবাব দেন, বিক্রি অবিশ্বাস্য। চিঠিটি বিশ্বের সবচেয়ে ছোট চিঠির তালিকায় গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লিখিয়েছে। ১৯৫২ সালে কোরিয়ার যুদ্ধে নিউইয়র্কের এক নারী তাঁর প্রেমিককে যে চিঠি লিখেছিলেন, তা ছিল ৩ হাজার ২০০ ফুট লম্বা। এই চিঠি লিখতে সময় লেগেছিল এক মাস, যা গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে সবচেয়ে বড় চিঠির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আমাদের জীবন-সংসার, সমাজ-সাহিত্য, সংস্কৃতি, বিচারকাজের একটি বড় অংশ দখল করে থাকা চিঠির গুরুত্ব ও আবেগের কমতি ছিল না কখনোই। চিঠি নিয়ে বিভিন্ন কবির লেখা কবিতা, সমাজের সালিশ-শাসনব্যবস্থায় চিঠি প্রমাণক, চিঠি হস্তান্তরে ডাকহরকরার জীবনী চিঠির গুরুত্বকে অর্থবহ করেছে। প্রাচীন ভারত, মিসর, রোম, চীনে ঐতিহাসিকভাবে চিঠির প্রচলন ছিল। সতেরো ও আঠারো শতকে চিঠি লেখা হতো সুশিক্ষার জন্য। চিঠি পাঠচর্চা, অভিজ্ঞতা বর্ণনা করা, বিতর্কমূলক লেখা বা সমমনা অন্যদের সঙ্গে ধারণা বিনিময়ের পদ্ধতি। 

সভাপতি সুহৃদ সমাবেশ, নড়াইল

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com