
সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে
বিএনপির সমাবেশে মির্জা ফখরুল
প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২৩ । ০০:০০ | আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২৩ । ০১:৩২ | প্রিন্ট সংস্করণ
সমকাল প্রতিবেদক

রাজধানীর নয়াপল্টনে বুধবার বিএনপির সমাবেশে বক্তব্য দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর -সমকাল
আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলতেই থাকবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের আর সময় নেই। যাওয়ার সময় হয়ে গেছে, যেতেই হবে। নির্যাতন-গুম-খুনের শিকার যাঁরা, তাঁদের ঋণ শোধ করতে এদের বিদায় করতে হবে। পৃথিবীর কোনো স্বৈরাচার সরকার এমনি এমনি যায়নি উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তাদের সরাতে হবে।
গতকাল বুধবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। গ্যাস-বিদ্যুৎ ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে, সরকারের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে সারাদেশে জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। সমাবেশ থেকে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকাসহ প্রত্যেক বিভাগীয় সদরে সমাবেশের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস, সরকারের দমন-পীড়ন ও নির্যাতন বন্ধ, নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি, বিদ্যুৎ এবং দ্রব্যমূল্যের দাম কমানোসহ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করা হবে। রাজধানীর আটটি স্থানে বিভিন্ন জোট ও দলের উদ্যোগে পৃথকভাবে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। একই সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে যুগপৎ আন্দোলনের পঞ্চম দফার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে নয়াপল্টনের সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ উপলক্ষে দুপুর ১২টা থেকে জড়ো হতে থাকেন নেতাকর্মীরা। মহানগর বিএনপির বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড ছাড়াও দলের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন। দুপুরের পর নেতাকর্মীদের অবস্থান ফকিরাপুল মোড় থেকে নাইটিঙ্গেল মোড় পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায়। সমাবেশে অনেক সাধারণ মানুষের উপস্থিতিও দেখা গেছে। অনেক রিকশা, ভ্যানচালককে গাড়ি বন্ধ করে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্য শুনতে দেখা গেছে। সমাবেশের জন্য বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়।
২৫ জানুয়ারি 'গণতন্ত্র হত্যা দিবস' উপলক্ষে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ কখনও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করেছিল। তারা আবারও তামাশার নির্বাচন করতে চায়। সে নির্বাচন দেশে হবে না।
তিনি বলেন, যখনই বিএনপি কর্মসূচি ঘোষণা করে, তখনই আওয়ামী লীগ একটা পাল্টা কর্মসূচি দেয়। নিজেদের ওপরে এত আস্থার অভাব! এত ভয়? বিএনপি কর্মসূচি পালন করলে না জানি কী হয়ে যাবে। ওই ভয়ে আওয়ামী লীগ কর্মসূচি দিয়ে বসে থাকে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ সবসময় গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে আর বিএনপি সবসময় গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করেছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, দেশের মানুষ কারও দাসত্ব মানেনি, একদলীয় বাকশালও মানেনি। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে আন্দোলনে নেমেছি, আন্দোলনে থাকব। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে এবং উত্তরের সদস্য আমিনুল হক ও দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, সদ্য কারামুক্ত যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও দলীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, শামা ওবায়েদ, নাজিম উদ্দিন আলম, তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেন, যুবদলের মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, ছাত্রদলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের চতুর্থ ধাপে বিএনপিসহ ৫৫টি রাজনৈতিক দল ও সংগঠন বিভিন্ন জোট ও দলের ব্যানারে একই কর্মসূচি পালন করেছে।
গণতন্ত্র মঞ্চ :জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ১৪ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে টানাপোড়েনের কারণে এর আগের কর্মসূচিতে নুরুল হক নুরের গণঅধিকার পরিষদ যোগ না দিলেও এদিন তারা অংশ নেয়। তবে অসুস্থতার কারণে উপস্থিত হননি মঞ্চের আরেক শীর্ষ নেতা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব।
সমাবেশে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আন্দোলন ধীরে ধীরে গড়ে তুলতে হয়। আগামীতে আবারও রাস্তায় আসব আরও শক্তি সঞ্চার করে। আন্দোলনের অংশ হিসেবে একই ধরনের কর্মসূচি একাধিকবারও দিতে হয়। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, আওয়ামী লীগ একটা অনিশ্চয়তার দিকে দেশকে ঠেলে দিয়েছে। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ২০১৮ সালের মতো আরেকটি মডেলের নির্বাচন করতে চাইছে আওয়ামী লীগ। ভাগাভাগির প্রস্তাব নিয়ে বিভিন্ন দলকে কাছে টানার চেষ্টা করছে। গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর বলেন, আওয়ামী লীগের হাত থেকে আমাদের দেশ ও গণতন্ত্রের মুক্তি ছিনিয়ে আনতে হবে।
১২ দলীয় জোট :রাজধানীর বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্ক সংলগ্ন সড়কে সমাবেশ করেছে ১২ দলীয় জোট। জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে ও জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদার পরিচালনায় বক্তব্য দেন- জোটের মুখপাত্র কল্যাণ পার্টির মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, লেবার পার্টির মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ এলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম প্রমুখ।
জামায়াত : ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ জামায়াতের উদ্যোগে পৃথক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। দক্ষিণ আয়োজিত সভায় জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, '৭৫ সালের বিভীষিকার মতো দেশে আজ গণতন্ত্র নেই, অর্থনীতিও শেষ, দেশে এখন জুলুমতন্ত্র চলছে। উত্তর আয়োজিত সভায় জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন বক্তব্য দেন।
এ ছাড়া এলডিপি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণফোরাম ও পিপলস পার্টি, সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোটও পৃথকভাবে সমাবেশ করে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com