
বগুড়ায় উপনির্বাচন
ভোটারদের মাঝে আতঙ্ক, কেন্দ্রে আনাই চ্যালেঞ্জ
প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২৩ । ০০:০০ | আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২৩ । ১৪:৫৮ | প্রিন্ট সংস্করণ
লিমন বাসার, উত্তরাঞ্চল

বিএনপির ছেড়ে দেওয়া বগুড়ার দুটি আসনের উপনির্বাচনে ভোট নিয়ে আগ্রহ কম ভোটারদের। নৌকায় ভোট না দিলে কেন্দ্রে আসা যাবে না- এমন হুমকিতে আতঙ্কিত অনেক ভোটার। একাধিক প্রার্থী অভিযোগ করেছেন, সাধারণ ভোটার উপস্থিতি না হলে নৌকার বিজয়ের সম্ভাবনা বেশি। এ কারণে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা চাচ্ছেন উপস্থিতি কম হোক। তাঁরা ভিন্নমতের ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে নিষেধ করছেন।
বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী অবশ্য সব ধরনের আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ভোটের দিন পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। কোনো ভোটার বা প্রার্থীকে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হুমকি দেওয়ার সত্যতা পেলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।
তবে জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দুটি আসনের ২৫৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৫৮টিকেই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি বগুড়া ৪ ও ৬ আসনে উপনির্বাচন। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জাসদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা শেষ মুহূর্তের প্রচারে ব্যস্ত রয়েছেন।
স্থানীয় বিএনপির নেতারা বলছেন, তাঁদের প্রার্থী নেই বলে সাধারণ মানুষের ভোট নিয়ে আগ্রহ নেই। বগুড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর হেনা বলেন, ভোটের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে তাঁরা প্রত্যেক নেতাকর্মীকে নির্দেশ দিয়েছেন। বগুড়াকে বিএনপির ঘাঁটি বলা হয়। সাধারণ মানুষ ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবে না। এটা প্রহসনের ভোট। এ নির্বাচনে ১০ ভাগ ভোটারকে উপস্থিত করাও কষ্টকর হবে।
অন্যদিকে, দল থেকে বহিস্কৃত নেতা সদর থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি সরকার বাদল বলেন, বগুড়া সদর আসনটি বিএনপির। এটা যে কোনো আঙ্গিকেই হোক না কেন বিএনপির হাতেই থাকা উচিত। তিনি এ কারণেই দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে ভোট করছেন। প্রশাসন নির্বিঘ্নে ভোটদানের ব্যবস্থা করলে অনেক বিএনপি নেতাকর্মীই ভোটের মাঠে আসবে এবং ভোট দেবে।
বগুড়া সদর আসনটি দীর্ঘদিন পর নিজেদের দখলে নেওয়ার সুযোগ এসেছে বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ। এ কারণে তারা মাঠে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। তবে বিরোধী মতের ভোটারদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগও মিলেছে।
সম্প্রতি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল ইসলাম রাজের একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেখানে কর্মী সমাবেশে স্পষ্ট করে রাজ নেতাকর্মীদের বলেন, 'যারা নৌকায় ভোট দিবে না, তারা ভোটকেন্দ্রের আশেপাশেও আসবে না। কেন্দ্র থাকবে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ দলের নিয়ন্ত্রণে। এজন্য সমস্ত ব্যবস্থা করতে হবে।' অবশ্য পরে তিনি বলেছেন, এটা ছিল কথার কথা।
শুক্রবার স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মান্নান আকন্দ অভিযোগ করেন, এই মুহূর্তে নৌকা প্রার্থীর সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন তিনি। এ কারণে নৌকার কর্মীরা তাঁর সমর্থকদের ওপরে প্রতিনিয়ত হামলা চালাচ্ছেন ও হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। তাঁকে নির্বিঘ্নে প্রচার চালাতে দেওয় হচ্ছে না। তাঁর নির্বাচনী গাড়ি আটকে দেওয়া হচ্ছে। পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। প্রশাসন তাঁর কোনো অভিযোগই আমলে নিচ্ছে না। তাঁর মতে, অনেক ভোটার ভয়ে কেন্দ্রে আসবেন না।
নৌকার প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু বলেন, 'আমরা কোনো প্রার্থীকেই বাধা দিচ্ছি না। ভোট হলো গণতান্ত্রিক অধিকার। জনগণ আমাদের ভালোবেসে ভোট দেবে। কেন্দ্রেও বিপুল পরিমাণ ভোটার উপস্থিত হবেন।'
বগুড়ায় নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, সাংগাঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল, কেন্দ্রীয় সদস্য শফিকুল ইসলামসহ যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও শ্রমিক লীগের শীর্ষ নেতারা বগুড়ার নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন।
সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতের অংশগ্রহণ না থাকলেও নৌকার প্রতিপক্ষ হিসেবে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মান্নান আকন্দ (ট্রাক)। তিনি সর্বশেষ বগুড়া পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকার প্রার্থীর চেয়ে দ্বিগুণ ভোট পেয়ে সবাইকে অবাক করে দিয়েছিলেন। এ ছাড়া তিনি জেলা পরিষদ নির্বাচনেও চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সামান্য ব্যবধানে হেরে যান। তাই তাঁকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে আওয়ামী লীগ।
নন্দীগ্রাম উপজেলা বাসস্ট্যান্ড বাজারের একটি চায়ের দোকানে কথা হয় স্থানীয় কৃষক কবির খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'সব দল ভোটত গেলে হামরাও ভোট দেবার যামো, বিএনপি বাদ দিয়া ভোট হলে দিবার যামু না।'
কলেজপাড়ার সবুজ মিয়া বলেন, তাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে নির্দিষ্ট একটি মার্কায় ভোট দেওয়ার জন্য। এসব কারণে পরিবার থেকে কেউই কেন্দ্রে যাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বগুড়া শহরের মাটিডালি ও শেখেরকোলা এলাকার অনেক ভোটারের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলে তাঁরা এড়িয়ে যান। তবে গোকুল এলাকার বাসিন্দা আবু তাহের বলেন, 'নৌকায় ভোট না দিলে নাকি কেন্দ্রে যাওয়া যাবে না। আমরা খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। ভোট দিয়ে আবার কোনো ফ্যাসাদে পড়ি সেই চিন্তা করছি। একই এলাকার ফৌজিয়া খাতুন নামের এক গৃহবধূ বলেন, ইচ্ছে ছিল কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। ভোটের দিন সকালে অবস্থা দেখে সিদ্ধান্ত নেব।'
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com