
অন্যদৃষ্টি
'বই সংরক্ষণ' উৎসবও হোক
প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২৩ । ০০:০০ | আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২৩ । ০৪:৩৬ | প্রিন্ট সংস্করণ
মমিনুল হক সবুজ

শিশুদের মধ্যে পাঠ্যবই যত্ন, সংরক্ষণ এবং বইয়ের প্রতি মায়া সৃষ্টির অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। বই সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সৃজনশীল কিছু উপায় অবলম্বন করা যায়। সেটাও শেখার অংশ। জীবনের শিক্ষার প্রথম ধাপ থেকে শিশুরা যা শিখবে, তার বহিঃপ্রকাশ ঘটবে শিক্ষাজীবনের শেষ পর্যন্ত। এমনকি কর্মজীবনেও সে প্রভাব দেখা যাবে। কাজ দেখে অনুমান করা যাবে, ব্যক্তি কতটা সৃজনশীল। বলার অপেক্ষা রাখে না, ভাত পুরোনো হলে পান্তা কড়কড়া হয়। কিন্তু বই পুরোনো হলে বাসি হয় না, বরং অক্ষত থাকে। নতুন বইয়ের যেমন ঘ্রাণ পাওয়া যায়; সৃজনশীল মানুষের নাকেও পুরোনো বইয়ের অন্যরকম ঘ্রাণ আসে। এই ঘ্রাণ নেশার মতো। বারবার ছুটে যাবে ঘ্রাণের টানে, বইয়ের ধ্যানে।
সরকার প্রতিবছর শুরুতেই শিক্ষার্থীদের নতুন বই দিয়ে থাকে। বছরের প্রথম দিন তাই শিশুর কাছে 'বই উৎসব'। শিশুরা নতুন বই পেয়ে থাকে। এই বই বছর শেষে সুন্দরভাবে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা থাকা দরকার। শিশুরা যদি জানে, হাতে পাওয়া বইটি এক বছর পড়ে অক্ষত অবস্থায় ফেরত দিতে হবে- তাহলে ওই শিশু ও পরিবার বইয়ের প্রতি যত্নবান হবে। শিশুকে বইগুলো সুন্দররূপে মলাটবন্দি করে রাখতে শিক্ষক ও অভিভাবকগণ উৎসাহিত করবেন। বইয়ের যত্ন করলে শিশুরাও পরিণত বয়সে বই কিনবে, বই পড়বে। 'বই পড়ে নষ্ট করে দিতে হবে; ফেলে দিতে হবে'- এই ধারণা শিশুর মধ্যে জন্ম নিলে ওই শিশু কখনও বইয়ের প্রতি যত্নশীল হবে না। এক বছর পর, হাতে পাওয়া বই পড়া শেষে কেজি দরে বিক্রি অথবা চুলাসহ গৃহের অন্যান্য কাজে ব্যবহারের দৃশ্য যখন একজন শিশু দেখবে; তার মনে বইয়ের কদর, বইয়ের সম্মান জন্ম নেবে না। বইয়ের প্রতি সম্মান জন্মালে শিশু বেশি বেশি বই পড়তে উৎসাহী হবে। পৃথিবীতে আমাদের জানা ও দেখার বাইরে অনেক জিনিস রয়েছে। বই না পড়লে আমরা তা জানব না। আজকের পৃথিবীর যে জাতি জ্ঞানে সমৃদ্ধ; প্রতিযোগিতার দৌড়ে তারাই এগিয়ে। জাতি হিসেবে আমাদের টিকে থাকতে হলে সে জ্ঞানের দৌড়ে আমাদেরও অংশ নিতে হবে। পড়তে হবে বই।
বই কি 'ঘুড়ি'? এটি আকাশে উড়িয়ে দিয়ে মাটি থেকে তাকিয়ে দেখলে সার্থকতা ফুরিয়ে যায়? বই ঘুড়ির মতো খেলনা, উৎসব পণ্য নয়; বই পড়ার জন্য। জ্ঞানের আকাশে জ্ঞানভান্ডার নির্মাণের জন্য। জ্ঞানভান্ডার না থাকলে পচে যাওয়া পণ্যের মতো মানুষের মন হবে; যে মন শুধু নিজের স্বার্থ চিনবে। প্রতিবছর ১ জানুয়ারি দেশে বই উৎসব হয়। ভালো কথা। বই বিতরণ উৎসবের পাশাপাশি 'বই সংরক্ষণ উৎসব' করা যেতে পারে। ডিসেম্বরের শেষ তারিখে সব শিক্ষার্থীর হাতে পুরোনো বই থাকবে। তারা তাদের বই বিদ্যালয়ে জমা দেবে। ১ জানুয়ারি নতুন বই হাতে পাবে। 'বই সংরক্ষণ উৎসব' করতে পারলে জাতি-গোষ্ঠী উপকৃত হবে। 'বই সংরক্ষণ উৎসব' সফল করতে পারলে কৃতিত্বের দাবিদার হওয়া যাবে। এই সাফল্য অর্জনের উদ্যোগ জাতিকে নতুন সূর্যোদয়ের আলো দেখাবে। এ উদ্যোগ সফল করতে পারলে পরবর্তী বছরের জন্য বইগুলো অন্য শিশুদের মাঝে বিতরণ করা যাবে। এ উদ্যোগ ৮০-৯০ শতাংশ সফল হলেও বই মুদ্রণ, পরিবহন, বিতরণ বাবদ রাজস্ব সাশ্রয় হবে। তৃতীয় থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিশুরা বই সংরক্ষণ করতে সক্ষম। বই সংরক্ষণে উদ্যোগ নিতে গেলে শিশুদের ১০ অথবা ২০ মার্কস বার্ষিক পরীক্ষার জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে। বই পড়ার পাশাপাশি সংরক্ষণ ও যথাসময়ে জমা দিলে ২০ মার্কস বার্ষিক পরীক্ষায় যোগ হবে। শ্রেণিবিশেষে প্রতিটি বইয়ের ওপর মার্কস বণ্টন করতে হবে।
সৃজনশীল এই কাজের মাধ্যমে বই সংরক্ষণ উদ্যোগ সফল করতে পারলে সাশ্রয় হবে রাজস্ব; যা দিয়ে দেশের শিক্ষকদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য বড় হাসপাতাল গড়ে তোলা সম্ভব। এ উদ্যোগ নেওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়। এ উৎসব একদিকে যেমন শিশুদের বইয়ের প্রতি যত্নবান করবে, তেমনি সরকারেরও অর্থ সাশ্রয় হবে। বিষয়টি জনস্বার্থে বিবেচনা করা যেতে পারে।
মমিনুল হক সবুজ: শিক্ষক, বাগমারা, রাজশাহী
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com