সারাহর চোখে তাঁরা আলোতে

প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২৩ । ০০:০০ | আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২৩ । ০৫:০৬ | প্রিন্ট সংস্করণ

সমকাল প্রতিবেদক

অকালমৃত্যুকে আলিঙ্গন করা সারাহ ইসলামের কর্নিয়া নেওয়া দুই নর-নারীর চোখ ফের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কোনো জটিলতা পাননি চিকিৎসকরা। গতকাল রোববার সকালে কর্নিয়া পাওয়া শিক্ষিকা ফেরদৌস আখতার ও মোহাম্মদ সুজনের চোখ পরীক্ষা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য ও চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। পরীক্ষা শেষে তিনি বলেন, দু'জনেরই চোখের অবস্থা ভালোর দিকে। তাঁদের চোখে ৭০ শতাংশ আলো ফিরেছে। ধীরে ধীরে আরও উন্নতি হবে। ওষুধ শেষ হলে তাঁরা শতভাগ দেখতে পাবেন বলে আশাবাদী এই চিকিৎসক। শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, সারাহ চার অঙ্গ দেওয়ায় চারজনের জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। অঙ্গদানে মানুষ এগিয়ে এলে ভবিষ্যতে দেশে আরও ১০ থেকে ১২টি অঙ্গ প্রতিস্থাপনে সুযোগ তৈরি হবে।

চোখ পরীক্ষা শেষে রাজধানীর সন্ধানী চক্ষু হাসপাতালে অস্ত্রোপচার হওয়া নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার মোহাম্মদ সুজন কথা বলেন সমকালের এই প্রতিবেদকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ছয় বছর আগে হঠাৎ চোখে সমস্যা হয়। আস্তে আস্তে এ সমস্যা বাড়ে। চিকিৎসা করিয়েও কোনো লাভ হচ্ছিল না। সব শেষে বিএসএমএমইউর চক্ষুবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রাজশ্রী দাশের কাছে চিকিৎসা নিচ্ছিলাম। তিনি বলেছিলেন, কর্নিয়া প্রতিস্থাপন জরুরি। তবে টাকার অভাবে ও কর্নিয়া সংকটে এটি করতে পারিনি। গত ১৮ জানুয়ারি চিকিৎসক রাজশ্রী ফোন করে বলেন, কর্নিয়া পাওয়া গেছে, বিনামূল্যে প্রতিস্থাপন করা হবে। পরে সন্ধানী চক্ষু হাসপাতালে রাত ৮টা থেকে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত অস্ত্রোপচার করে কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করা হয়। জ্ঞান ফিরে জানতে পারি, সারাহ ইসলামের কর্নিয়া আমার চোখে বসানো হয়েছে। আল্লাহ সারাহকে জান্নাতবাসী করুন। সারাহর অনুদানে আমার অন্ধত্ব-জীবন দূর হয়েছে।

চোখে কম দেখায় পোশাক কারখানা থেকে ছয় বছর আগে চাকরি চলে যায় সুজনের। এখনও কোনো কাজ পাননি। চোখ প্রতিস্থাপনের কারণেও আরও এক বছর ভারী কোনো কাজ করতে পারবেন না সুজন। এ পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকতে সমাজের বিত্তবানদের কাছে সহযোগিতা চাইলেন সুজনের স্ত্রী শিখা আক্তার।

ডা. রাজশ্রী দাশ বলেন, সুজনের চোখের অবস্থা ভালো। তবে আরও কিছুদিন ফলোআপে থাকতে হবে।

এদিকে কর্নিয়াগ্রহীতা ফেরদৌস আক্তার পাবনার একটি কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষিকা। ২০১৬ সালে অজানা এক ভাইরাসে তাঁর ডান চোখে সমস্যা দেখা দেয়। কিছুই দেখতে পেতেন না। স্থানীয় বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ক্লিনিকে চোখ দেখালেও সমাধান মেলেনি। পরে বিএসএমএমইউর কমিউনিটি অফথালমোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শীষ রহমানের কাছে চিকিৎসা নিতে আসেন। সাত বছর আগে কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন এ চিকিৎসক। তবে কর্নিয়া সংকটে এটি এত দিন সম্ভব হয়নি। সারাহর কর্নিয়া দেওয়ার সম্মতি পেয়েই চিকিৎসক শীষ রহমান ফেরদৌসকে ঢাকায় আসতে বলেন। এরপর তাঁর ডান চোখে কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করা হয়।

এ ছাড়া কিডনি পেয়ে মধ্যবয়সী দুই নারী শামীমা আক্তার ও হাসিনা আক্তার যেন নতুন জীবন পেলেন। কিডনি প্রতিস্থাপনের পর হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা চলছে তাঁদের। অবস্থা ভালো হলেও আরও তিন সপ্তাহ হাসপাতালে থাকতে হবে বলে জানিয়েছেন বিএসএমএমইউর রেনাল ট্রান্সপ্লান্ট বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল।

দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ২০ বছর বয়সী সারাহকে গত ১৮ জানুয়ারি রাতে ব্রেইন ডেড ঘোষণার পরপরই তাঁর শরীর থেকে কিডনি ও কর্নিয়া নিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়। ২০১৮ সালের মরণোত্তর অঙ্গ সংযোজন আইনে কিডনি, লিভার, কর্নিয়াসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গদানে বৈধতা দেওয়া হলেও এত দিন কর্নিয়া ছাড়া আর কিছুই প্রতিস্থাপনের ইতিহাস ছিল না। এবার সারাহর মাধ্যমে সেই বাধাও কেটে যায়।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com