
লন্ডনের ঝড়ে অর্ধডজন নেতার স্বপ্ন ওলটপালট
সিলেট সিটি নির্বাচন
প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২৩ । ০০:০০ | আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২৩ । ০২:১৪ | প্রিন্ট সংস্করণ
ফয়সল আহমদ বাবলু, সিলেট

২০২০ সালের ১৫ জুন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি ও সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন কামরান। এর পর থেকেই সিলেট আওয়ামী লীগে মেয়র পদে দেখা দেয় প্রার্থী সংকট। তবে তাঁর অবর্তমানে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশায় মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন অর্ধডজন প্রার্থী। সম্প্রতি লন্ডন ঝড়ে অর্ধডজন মনোনয়নপ্রত্যাশীর স্বপ্ন ওলটপালট হয়ে গেছে। সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে (সিসিক) আওয়ামী লীগের মনোনয়নের আশায় মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
এ নিয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের অনেকেই ক্ষুব্ধ। অপরদিকে তৃণমূলেও দেখা দিয়েছে চাপা ক্ষোভ। তবে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা প্রধানমন্ত্রী ও দলীয়প্রধান শেখ হাসিনার সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় আছেন। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে বিষয়টি খোলাসা হবে বলেও অনেকেই আশাবাদী। আনোয়ারুজ্জামান প্রার্থী হওয়ার সংবাদে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নির্বাচনে ছড়িয়েছে উত্তাপ।
আগামী জুন মাসে শেষ হচ্ছে সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়রের মেয়াদ। আগামী অক্টোবরে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ২০০২ সালে সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর সিলেটে এ পর্যন্ত চার বার নির্বাচন হয়েছে। প্রতিটিতে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়ে আসছিলেন মহানগর বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। ২০১৮ সালের নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে কামরানের পরাজয়ের পর সিলেট আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিভেদের বিষয়টি সামনে আসে। মেয়র প্রার্থীসহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের শোকজ করে হাইকমান্ড। গত দুই মেয়াদে দলীয় কোন্দলের কারণে আরিফের কাছে হেরে যান কামরান। এ অবস্থায় জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি ভেঙে দিয়ে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব বেছে নেওয়া হয়।
কামরানের মৃত্যুর পর সিসিকের নৌকার কাণ্ডারি কে হবেন এ নিয়ে সংকটে ভুগছিল ক্ষমতাসীন দলটি। শেষ পর্যন্ত ঘটে চমক জাগানিয়া ঘটনা। যুত্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর নাম ওঠে আসে আলোচনায়। গত ২২ জানুয়ারি মনোনয়ন পাওয়ার খবরে লন্ডন থেকে ছুটে আসেন তিনি।
তাঁকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল ও সিলেট-৩ আসনের এমপি হাবিবুর রহমান হাবীব। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা তাঁকে বরণ করতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন। পরে ওসমানী বিমানবন্দর থেকে মোটর শোভাযাত্রা করে তাঁকে নিয়ে আসা হয় নগরীতে। দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজার জিয়ারত করেন আনোয়ারুজ্জান চৌধুরী।
গত বৃহস্পতিবার তিনি গণভবনে গিয়ে দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। দেখা করেন দলের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গেও। টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারত করতে যান তিনি। গতকাল সোমবার সাবেক মেয়র কামরানের কবরও জিয়ারত করেন তিনি।
এ ব্যাপারে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সমকালকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন মাঠে থাকার জন্য। জনগণের কাছে থাকার জন্য। তাই বিলাসী জীবন ছেড়ে ছুটে এসেছি সাধারণ মানুষের কল্যাণে। তিনি বলেন, আমি দেশে আসার পর থেকেই সব মহলের সাড়া পাচ্ছি। সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা বলেছেন দল যাঁকে মনোনয়ন দেবে তাঁর পক্ষেই তাঁরা থাকবেন। ইতোমধ্যে যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা তাঁকে সাধুবাদ জানিয়েছে।
এদিকে আনোয়ারুজ্জামান দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও করছেন। তাঁদের মান ভাঙাতে নানাভাবে কাজ করছেন। দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, তাঁদের সঙ্গে দূরত্ব গোছালে আগামী নির্বাচন তাঁর জন্য অনেকটা সহজ হবে।
নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সক্রিয় জাকির হোসেন। গত নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এবারও তিনি মনোনয়ন পাওয়ার আশায় কাজ করছেন।
গত সিটি নির্বাচনে বদর উদ্দিন আহমদের সঙ্গে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ। মনোনয়ন না পেলেও দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে কাজ করেন এই নেতা। সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির দীর্ঘদিনের জটিলতার অবসান ঘটিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি।
সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ গত দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। গেল বছরের ৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনেও তিনি দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর ভাগ্যে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করা হয়ে ওঠেনি। ওই আসনে মনোনয়ন পান আনোয়ারুজ্জামানের আস্থাভাজন প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান হাবীব।
প্রয়াত মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের ছেলে নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আরমান আহমদ শিপলুও ছিলেন মনোয়নপ্রত্যাশী। বাবার মৃত্যুর পর থেকেই মাঠে কাজ করছেন শিপলু। বাবার মতো বিভিন্ন মানবিক কাজও করে চলেছেন শিপলু। তিনি বলেন, নির্বাচনের এখনও সময় বাকি আছে। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী আমার বাবার কবর জিয়ারত করেছেন। তারপরও দল যাঁকে মনোনয়ন দেবে তাঁর পক্ষে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তরুণ এই নেতা।
নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ ২০২১ সালের ৯ নভেম্বর কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে নগরীতে বিশাল শোডাউন দিয়ে আলোচনায় আসেন। চার বারের কাউন্সিলর হিসেবে মনোনয়নপ্রত্যাশী আজাদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত।
এছাড়া দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিমও মনোয়নয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তবে আনোয়ারুজ্জামানের গত কয়েকদিনের কর্মকাণ্ডে অনেকেই ধারণা করছেন দলের এখন পর্যন্ত সম্ভাব্য প্রার্থী তিনিই।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com