অন্যদৃষ্টি

মন্ত্রণালয়ে দুর্যোগের হানা

প্রকাশ: ০১ ফেব্রুয়ারি ২৩ । ০০:০০ | আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২৩ । ০০:৪২ | প্রিন্ট সংস্করণ

এহ্‌সান মাহমুদ

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচিতে (সিপিপি) শতাধিক পদে নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে বলে সমকালে গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত এক সংবাদে জানা গেছে। সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে এমন চিত্র দেখে মনে হতে পারে, খোদ মন্ত্রণালয়েই দুর্যোগ হানা দিয়েছে।

সংবাদসূত্রে জানা গেছে, অনিয়মসমূহের মধ্যে আছে লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি এমন প্রার্থীদের নির্বাচিত করা, যোগ্য প্রার্থীর নম্বর কমিয়ে দেওয়া, উত্তরপত্র বদল, পছন্দের প্রার্থীদের নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা। এমনকি লিখিত পরীক্ষার খাতায় নম্বর কাটাকাটিরও প্রমাণ পাওয়া গেছে। ২০২০ সালের ১৬ জুন ১০৮ পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সিপিপি। ২০২১ সালের ২৮ আগস্ট লিখিত পরীক্ষার পর ৩০ আগস্ট ফল প্রকাশ হয়। মৌখিক পরীক্ষা শেষে ওই বছর ১৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশ হয় চূড়ান্ত ফল। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে একই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর ফল স্থগিত করা হয়। অভিযোগ তদন্ত করে নিয়োগ কার্যক্রম বাতিল করে মন্ত্রণালয়। তবে নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত সবাই আড়ালেই থেকে যায়।

এমন বাস্তবতায় আমাদের প্রশ্ন হলো- নিয়োগ কার্যক্রম বাতিল করা ভালো উদ্যোগ। তবে এই অনিয়মের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে দুর্নীতি আরও বাড়বে। নিয়োগ কার্যক্রমে সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিয়ে সেটা জনগণকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো উচিত। তাহলে সরকারি নিয়োগে দুর্নীতি করতে ভয় পাবে সংশ্নিষ্টরা। না হলে এভাবে অপরাধ সংঘটিত হবে; তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে এবং বিষয়টি ধারাবাহিকভাবে চলতেই থাকবে।

অতীতে দেখা গেছে, কোনো অপরাধী ধরা পড়লে কিংবা অপকর্ম ফাঁস হলেই কর্তৃপক্ষ খানিকটা নড়েচড়ে বসে। এর পর-আলোচনা থিতিয়ে আসার পর- আবার সবকিছু আগের মতো চলতে থাকে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ক্ষেত্রে তেমন কিছু হবে না বলেই আমরা বিশ্বাস করতে চাই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জালিয়াত চক্রকে ধরেছে- এ জন্য তারা সাধুবাদ পেতে পারে। এসব চাকরির পরীক্ষায় যারা অসদুপায়ে চাকরি নিয়েছে, তাদেরও চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। মনে রাখতে হবে- তারাও অপরাধের অংশীদার। প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারণে অনেক মেধাবী পরীক্ষার্থী চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

দেশে যখন লাখ লাখ বেকার তরুণ সরকারি চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন, তখন নিয়োগে এ ধরনের জালিয়াতি শুধু অগ্রহণযোগ্য নয়; অমার্জনীয় অপরাধও। চাকরিপ্রত্যাশী বেকারমাত্রই জানেন, একটি চাকরি তাঁর কত কাঙ্ক্ষিত! সেখানে সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হওয়ার কারণে বিপুলসংখ্যক লোক ভোগান্তিতে পড়বেন- এটা কাম্য হতে পারে না। জালিয়াতির মাধ্যমে চাকরি হলে দুটি ঘটনা ঘটে। প্রথমত, যোগ্যরা চাকরি থেকে বঞ্চিত হন। তাতে কাজ চালিয়ে নেওয়ার মতো দক্ষ জনবলের অভাবে সুষ্ঠুভাবে কাজ সম্পাদন করা হয় না। দ্বিতীয়ত, তা সমাজে বিরাজমান সুবিধাভোগী ও সুবিধাবঞ্চিতদের মধ্যকার বৈষম্য বৃদ্ধি পায়।

দেশে একটা সময়ে বিজি প্রেসের কর্মচারীদের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস হতো। সেই দিন এখন অনেকটাই পার হয়েছে। সেখানে এসেছে ডিজিটাল যুগ। এখন ডিজিটাল যুগে জালিয়াত চক্র তাদের অপকর্ম করতে নানা রকম ডিভাইস ব্যবহার করছে। আবার পরীক্ষার খাতায় কিছু না লিখেও সংশ্নিষ্ট বিভাগের কর্তাদের যোগসাজশে পরীক্ষায় উতরে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে এ ধরনের অপকর্মই করেছে অপরাধী চক্র। এখন এই চক্রের কয়েকজনকে চিহ্নিত করা গেলেও এ কথা ভাবার কারণ নেই- এর বাইরে আর কেউ নেই। নিয়োগ পরীক্ষার ক্ষেত্রে এ জালিয়াতি বন্ধ করতে হলে এ ঘটনায় জড়িত সবাইকে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাতে হবে। ভবিষ্যতে যাতে কেউ কোনো ধরনের নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি করার স্পর্ধা না দেখায়, তা নিশ্চিতে বিচারিক কার্যক্রম গ্রহণ জরুরি।

এহ্‌সান মাহমুদ : সহ-সম্পাদক, সমকাল

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com