দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেওয়া হচ্ছে স্বল্পমেয়াদি ধারের টাকায়

প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২৩ । ০০:০০ | আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২৩ । ১০:৪৮ | প্রিন্ট সংস্করণ

বিশেষ প্রতিনিধি

আন্তঃব্যাংক লেনদেনসহ স্বল্প মেয়াদে ধার নিয়ে লিজ অর্থায়নের মতো দীর্ঘমেয়াদে ঋণ দিচ্ছে কোনো কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এ প্রবণতা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এ অবস্থায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আন্তঃব্যাংক লেনদেন পরিহার করে বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গতকাল এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা ব্যাংকবহির্ভূত সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়। এমন এক সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ নির্দেশনা দিল, যখন কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ব্যাংকগুলোর কয়েক হাজার কোটি টাকা আটকে গেছে। জানা গেছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম বের করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশে গঠিত 'ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং' কমিটির সুপারিশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ নির্দেশনা দিয়েছে।

সংশ্নিষ্টরা জানান, বর্তমানে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তহবিলের বড় উৎস আন্তঃব্যাংক থেকে ধার করা। ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক আমানতের বাইরে এসব প্রতিষ্ঠান অন্য ব্যাংক থেকে কলমানি, রেপো, আমানত ও ঋণ হিসেবে অর্থ নেয়। বেশ কিছুদিন ধরে কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মেয়াদপূর্তির পরও টাকা দিতে না পারার অভিযোগ পাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়, সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কোনো কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান দীর্ঘমেয়াদি উৎস থেকে তহবিল সংগ্রহ না করে আন্তঃব্যাংক লেনদেনসহ বিভিন্ন স্বল্পমেয়াদি উৎস থেকে তহবিল সংগ্রহ করে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করছে। এতে কোনো কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান তহবিলের 'ম্যাচিউরিটি মিসম্যাচ' এর কারণে আন্তঃব্যাংক লেনদেনের দায় এবং আমানতকারীদের অর্থ মেয়াদ শেষে পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছে, যা প্রত্যাশিত নয়। এ অবস্থায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বজায় রাখা ও মেয়াদপূর্তিতে দায় পরিশোধের সুদক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পাবলিক মানির ঝুঁকি কমাতে আর্থিক আন্তঃব্যাংক লেনদেন পরিহার করে বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারের ফলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আন্তঃব্যাংক ধার নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এতে করে ব্যাংকগুলোর এসব প্রতিষ্ঠানে তহবিল দিতে অনীহা আরও বাড়বে। এক পর্যায়ে এসব প্রতিষ্ঠানে সুশাসন বেড়ে নিজেরাই সক্ষম হবে।

জানা গেছে, ব্যাংকের পাশাপাশি এক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আরেক প্রতিষ্ঠানের ধারের টাকা আটকে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে। টাকা ফেরত না পেয়ে বারবার মেয়াদ বাড়াচ্ছে তারা। এ উপায়ে সুদসহ পাওনার পরিমাণ বাড়ছে। এসব কারণে গত কয়েক বছর ধরে খারাপ অবস্থায় থাকা প্রতিষ্ঠানকে ধার দেয় না বেশিরভাগ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সামগ্রিকভাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাত এখন লোকসানে। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতি ১০০ টাকার সম্পদে লোকসান হয়েছে ৪০ পয়সা। আর প্রতি ১০০ টাকার মূলধনে লোকসান ৫ টাকা ৯৫ পয়সা। অবশ্য অনেকে মুনাফায় রয়েছে। গত সেপ্টেম্বর শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৭ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা, যা করা মোট ঋণের ২৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। আগের বছরের একই সময়ে ১১ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা বা মোট ঋণের ১৭ দশমিক ৬২ শতাংশ ছিল খেলাপি। আর ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে খেলাপি ছিল ১০ হাজার ২১৫ কোটি টাকা বা ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

আর্থিক খাতে বিভিন্ন দুর্নীতিতে অভিযুক্ত প্রশান্ত কুমার হালদার ২০১৪ সালে পিপলস লিজিং, বিআইএফসি, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ও এফএএস ফাইন্যান্সের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেয়। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে নামে-বেনামে ঋণ বিতরণে বড় ধরনের অনিয়ম হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়মে জড়িত হওয়ার অভিযোগ ওঠে। এক পর্যায়ে এই চারটিসহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠান অনেক ক্ষেত্রে মেয়াদ শেষে আমানত ফেরত দিতে ব্যর্থ হচ্ছে, যা পুরো খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব তৈরি হয়েছে। ব্যাংকের তুলনায় অনেক বেশি সুদ অফার করেও তারা আশানুরূপ আমানত পাচ্ছে না। যে কারণে অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান তহবিল সংগ্রহে হিমশিম খাচ্ছে। দৈনন্দিন খরচ চালাতে মধ্যম মানের প্রতিষ্ঠানগুলো অন্য ব্যাংক থেকে ধার করে কোনো মতে টিকে আছে।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com