মানবতাবিরোধী অপরাধ

গ্রেপ্তার এড়াতে বারবার বাসা পরিবর্তন করতেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মজিদ

প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২৩ । ১৬:৪৬ | আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২৩ । ১৭:১১

সমকাল প্রতিবেদক

র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার আব্দুর মজিদ

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পলাতক আসামি আব্দুল মজিদকে মাদারীপুর সদর থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৩। গতকাল বুধবার রাতে এ অভিযান চালানো হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। 

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আসামির বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ আনা হয়। ১৯৭০ সালে তিনি পূর্বধলা থানা জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি রাজাকারদের প্রধান বাহিনী আল-বদর পুর্বধলা রামপুর থানা কমিটির প্রধান ছিলেন। পুর্বধলা রামপুর মৌদাম গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেকসহ তার আপন দুই ভাই এবং পাঁচজন চাচাতো ভাই মিলে একই বাড়িতে মোট সাতজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তারা যুদ্ধে অংশগ্রহণের পাশাপাশি এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে  সহযোগিতা করত। এজন্য তারা মজিদের শত্রুতে পরিণত হয়। ১৯৭১ সালের ২১ আগস্ট দুপুরে আব্দুল মজিদ তার দলবল নিয়ে বাড়হা গ্রামের আব্দুল খালেকের বাড়িতে আক্রমন করেন। সে সময় বাড়িতে অবস্থানরত আব্দুল খালেকসহ মুক্তিবাহিনীর সবাইকে এক এক করে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে তারা। হত্যার পর বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেকের লাশটি পার্শ্ববর্তী কংস নদীতে ফেলে দেয় এবং অপর মুক্তিযোদ্ধাদের লাশ কোকখালী নদীতে বস্তাবন্দি করে ফেলে আসে। এই হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি তারা আব্দুল খালেকের বাড়িতে লুটপাট চালায় এবং অগ্নিসংযোগ করে। এ ঘটনায় মৃত আব্দুল খালেকের ভাই আব্দুল কাদের বাড়ি থেকে পালিয়ে কোন রকমে প্রাণ বাঁচান।

তিনি জানান, ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আব্দুল মজিদসহ চারজনকে আসামি করে মামলা করেন আব্দুল কাদের। পরবর্তীতে মামলার গভীর তদন্তে আরও তিনজনের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে এবং আসামীদের বিরুদ্ধে আনা সাতটি অভিযোগই প্রসিকিউশনের মাধ্যমে প্রমাণিত হলে ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল সাত আসামির মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। এটি মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধ তথা যুদ্ধাপরাধের মামলায় ৩৬তম রায়। বিচার চলাকালে এই মামলার দুজন আসামি (আহম্মদ আলী ও আব্দুর রহমান) মারা যায় এবং রায় হওয়ার পর পলাতক অবস্থায় মারা যায় আরও দুই আসামি (রদ্দিন মিয়া ও আব্দুস সালাম বেগ)। মামলার আরও দুই আসামি আব্দুল খালেক তালুকদার ও কবির খাঁ পলাতক রয়েছে। এদিকে মামলাটির বিচারিক প্রক্রিয়া চলমান থাকাকালে ২০১৫ সালে আব্দুল মজিদ তার এলাকা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসে এবং ফকিরাপুল এলাকায় কিছুদিন আত্মগোপনে থাকেন। এরপর তার আত্মীয়ের সহযোগিতায় মাদারীপুরে আত্মগোপন করে একটি কামিল মাদ্রাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে পলাতক জীবন শুরু করেন। ২০১৫ সাল থেকে মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া চলাকালে তিনি কখনই আদালতে হাজিরা দেননি। ওই বছরই তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।

অধিনায়ক জানান, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজর এড়াতে মজিদ নিয়মিত বাসা পরিবর্তন করতেন। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে তিনি অন্যের রেজিস্ট্রেশনকৃত সিমকার্ড ব্যবহার করতেন। ছেলে-মেয়েরা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হওয়ায় প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের জন্য তারা নিয়মিত তাকে অর্থ দিত। আত্মগোপনে থাকাকালে তিনি সাধারণত জনসমাগম স্থান, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ছাড়াও তার ব্যক্তিগত পরিচয় প্রকাশ পায় এমন স্থান এড়িয়ে চলতেন।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com