সাংবাদিক শিমুল হত্যার ছয় বছরেও মামলার বিচার শুরু হয়নি

প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২৩ । ০০:০০ | আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২৩ । ১২:১৫ | প্রিন্ট সংস্করণ

আতিকুল ইসলাম বুলবুল, তাড়াশ ও কোরবান আলী লাভলু, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ)

আব্দুল হাকিম শিমুল

সমকালের সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলা প্রতিনিধি আব্দুল হাকিম শিমুল হত্যাকাণ্ডের ছয় বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ শুক্রবার। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ২০১৭ সালের এই দিনে তিনি মারা যান। সে সময় এ হত্যাকাণ্ড দেশজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়ালেও সময়ের পরিক্রমায় শিমুলের নাম যেন সবাই ভুলতে বসেছেন। হত্যাকাণ্ডের পর ছয় বছর অতিক্রান্ত হলেও মামলার অভিযোগ গঠন ও বিচার কার্যক্রম কোনোটাই শুরু হয়নি। প্রায় আড়াই বছর ধরে উচ্চ আদালতে ঝুলে আছে ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি শিমুলের স্ত্রী নুরুন্নাহার খাতুনের করা মামলাটি। শিমুলের পরিবার ও সহকর্মীদের অভিযোগ, মূলত নানা অজুহাতে আসামি পক্ষের সময়ক্ষেপণের কারণেই এত দিন পরও মামলার বিচার শুরু করা যায়নি।


শিমুল হত্যার পর তাঁর স্ত্রী শাহজাদপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র হালিমুল হক মিরুসহ ৪০ জনকে আসামি করে শাহজাদপুর থানায় মামলা করেন। ২০১৭ সালের ২ মে ৩৮ জনকে আসামি করে পুলিশ অভিযোগপত্র দাখিল করে। এর পর শিমুল হত্যা মামলাটি শাহজাদপুর আমলি আদালত থেকে সিরাজগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তর করা হয়। এই আদালত সাতবার চার্জ গঠনের তারিখ ধার্য করলেও আসামিরা নানা কৌশলে সময় প্রার্থনা করে চার্জগঠন বিলম্বিত করতে থাকেন। পরে এই মামলাটি চাঞ্চল্যকর হিসেবে ২০১৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল রাজশাহীতে স্থানান্তর করা হয়। এখানেও চার্জগঠনের জন্য পাঁচবার তারিখ দিলেও প্রতিবারই আসামিপক্ষ সময় প্রার্থনা করে আদালতের কাছে। ফলে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালেও বিচারিক কার্যক্রম বিলম্বিত হতে থাকে। এক পর্যায়ে আসামিপক্ষ কৌশলে মিরুর স্ত্রীর দায়ের করা মামলা ও ছাত্রলীগ নেতা বিজয় মাহমুদের মামলা দুটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে তোলার আবেদন করলে বিচারক এ মামলা দুটি খারিজ করে দেন।


আসামিপক্ষ ট্রাইব্যুনালের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। পরে শুনানি শেষে হাইকোর্ট শিমুল হত্যা মামলার কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে রুল জারি করেন। হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে শিমুলের স্ত্রী সুপ্রিম কোর্টে লিভ টু আপিল করেছিলেন। যার প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ ছয় সপ্তাহের মধ্যে রুল নিষ্পত্তির আদেশ দেন। এর পর করোনা মহামারির কারণে হাইকোর্টের কার্যক্রম সংকুচিত হওয়ায় রুল নিষ্পত্তির শুনানি আর হয়নি। এখন পর্যন্ত রুল নিষ্পত্তির বিষয়টি হাইকোর্টে পেন্ডিং অবস্থায় রয়েছে। ফলে ছয় বছরেও শিমুল হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম মূলত শুরুই হয়নি।


দীর্ঘদিনেও বিচার সম্পন্ন না হওয়ায় শিমুলের স্ত্রী নুরুন্নাহার ও তাঁর পরিবার এখন হতাশ। নুরুন্নাহার বলেন, খুনি মিরুসহ সব আসামি জামিন নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা মামলাটি তুলে নিতে পাবনায় গিয়ে আমার বাবাকে নানাভাবে হুমকিও দিচ্ছে। তাই আমি আমার দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। শেষ পর্যন্ত স্বামীর খুনের বিচার পাব কিনা, আল্লাহ জানেন। শিমুল হত্যার বিচার দ্রুত শেষ করার ব্যবস্থা নিতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য কামনা করেন।


২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি শাহজাদপুর পৌর এলাকায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের সময় তৎকালীন পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরুর নিজস্ব শটগানের গুলিতে আহত হন সাংবাদিক শিমুল। গুরুতর অবস্থায় প্রথমে তাঁকে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা নেওয়ার পথে পরদিন শিমুল মারা যান।


এদিকে গতকাল নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে শাহজাদপুর প্রেস ক্লাব সাংবাদিক শিমুলকে স্মরণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে ছিল প্রেস ক্লাবে জাতীয় ও কালো পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাজ ধারণ, শিমুলের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শোক র‌্যালি, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল। এ ছাড়া শিমুল যে সড়কে গুলিবিদ্ধ হন, সেটিকে তাঁর নামে নামকরণে জেলা প্রশাসক এবং দ্রুত বিচার শেষ করতে প্রধান বিচারপতির কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com