
মতামত
তারুণ্যের পেশা, আশা ও হতাশা
প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২৩ । ১৮:০৮ | আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২৩ । ১৯:৩৬
মুহাম্মদ ইয়াসীন ইবনে মাসুদ

সঠিক পেশা পছন্দ এবং সে পেশায় নিজের প্রবেশ নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ স্নাতকের জন্য একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো একটি অতি জনবহুল দেশে এই বিষয়টি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই দেশে স্নাতকের সংখ্যার তুলনায় সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মোট শূন্য পদের সংখ্যা বরাবরই নগণ্য। বাংলাদেশে প্রতিবছর লাখ লাখ স্নাতক তাদের পছন্দের পেশায় প্রবেশ করতে না পেরে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। নিজের প্রকৃত দক্ষতা ও অদক্ষতার বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়ে ভুল পেশায় প্রবেশের জন্য দৌড়াদৌড়ি করার কারণে এই হতাশাগ্রস্ত স্নাতকের সংখ্যা আরও বেড়ে যাচ্ছে প্রতিবছর। বিভিন্ন প্রকাশনীর সর্বরোগের ঔষধ বা সব সমস্যার সমাধান জাতীয় বিভিন্ন চটকদার বইয়ের বিজ্ঞাপন ও বিভিন্ন মোটিভেশনাল বক্তার বক্তব্য দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অনেকেই মনে করে স্নাতক পর্যায়ের বিষয়, পরীক্ষার ফলাফল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যেটাই হোক না- কেন সবাই সব পেশায় ঢুকতে পারবে। এতে করে সব স্নাতক নিজেকে তার কল্পনায় বিভিন্ন পেশার বিভিন্ন পদে আসীন কল্পনা করতে করতে কাটিয়ে দিচ্ছে তার জীবনের অতি মূল্যবান কয়েকটি বছর। বিশেষ করে বিসিএস বা অন্যান্য সরকারি চাকরির প্রস্তুতিতে একটি বৃহৎ সংখ্যক স্নাতক গড়ে প্রায় পাঁচ বছর ব্যয় করছে। এরপর ব্যর্থ হয়ে যখন তারা কল্পনার জগৎ থেকে বাস্তবে ফিরে আসে, ততদিনে তার পছন্দের চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে নিতে সে তার নিজের পঠিত বিষয়ের জ্ঞান প্রায় হারিয়েই ফেলে। ফলে এরপর সে যখন তার বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন সরকারি বা বেসরকারি চাকরিতে প্রবেশের চেষ্টা করে তখনও সে ব্যর্থ হয়। কারণ, নিজের বিষয়ে তার দক্ষতা কমে যাওয়ায় নিয়োগকর্তারাও তাকে আর নিয়োগ দেয় না। দিলেও সে হয়তো ততদিনে তারই নিজের কোনো বন্ধুর দুই বা তিন ধাপ নিচের পদে যোগদান করে। এটাও তাকে মারাত্মকভাবে হতাশাগ্রস্ত করে। অথচ সঠিক সময়ে তার দক্ষতা ও যোগ্যতা অনুযায়ী সঠিক পেশাটি পছন্দ করে সেটাতে যোগদান করলে তাকে এই বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয় না। তার সময় বেঁচে যায় অনেক। তার পক্ষে এই সময়ে নিজের জন্য, পরিবারের জন্য উপার্জন করা সম্ভব হয় এবং সর্বোপরি দেশের জিডিপিতে সে অবদান রাখতে পারে।
বই বিক্রি বাড়ানোর জন্য অনেক প্রকাশনী বলে যে তাদের বই পড়লে বা হাতে নিলেই বিসিএস বা অন্য পছন্দের চাকরি হয়ে যাবে। আসলে বিষয়টি এতটা জাদুকরী না। বাজারে প্রচলিত কোনো বইই খারাপ না। সব বইই বিভিন্ন লেখক বা সম্পাদনা কমিটির অনিঃশেষ পরিশ্রমের ফল। মানে কিছুটা পার্থক্য হলেও সেটা কখনোই আকাশ-পাতাল হয় না। তবে ঘোষিত সেই জাদুকরী বইগুলোর আলোচ্য বিষয়াদি একজন স্নাতকের পক্ষে আয়ত্তে আনা আদৌ সম্ভব কিনা তাও বিবেচনায় নিতে হবে। বই কিনে টেবিলে সাজিয়ে রাখলেই হয় না, তা পড়তে হয়। পড়ার জন্য ইচ্ছা, যোগ্যতা, সময় ও অনুকূল পরিবেশ দরকার হয়।
পেশা পছন্দ চূড়ান্ত করার আগের বিবেচ্য বিষয়াবলি- কোনো পেশায় প্রবেশের প্রস্তুতি শুরু করার আগে সেই পেশায় আগে যারা প্রবেশ করেছে তাদের তুলনায় তার নিজের মেধা কোন পর্যায়ে আছে তা বিচার করতে হবে। একজন ছাত্র যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যে বিভাগে পড়ে বা যে বিভাগ হতে পাস করেছে সেই বিভাগ থেকে আগে পাস করা কতজন শিক্ষার্থী কতটুকু শ্রম ও অধ্যবসায় দিয়ে সেই পেশায় প্রবেশ করতে সফল হয়েছে বা হয়নি তা বিবেচনায় নিতে হবে। বলা হয়, বিসিএসের প্রস্তুতি নিলে বিসিএস না হলেও অন্য অনেক চাকরি এই প্রস্তুতিতেই হয়। সে ক্ষেত্রে অন্য যে চাকরিগুলো এই প্রস্তুতিতে হয় সেগুলোর মোট পদের সংখ্যা, সেগুলোর প্রার্থীদের মোট সংখ্যা, সেই প্রতিযোগীদের মধ্যে মোটামুটি কতজন আপাতদৃষ্টিতে প্রস্তুতিতে, একাডেমিক বিষয়ে, পরীক্ষার ফলাফলে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিবেচনায় তার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে তা জানতে হবে। যারা তার চেয়ে এগিয়ে আছে তাদের সংখ্যা সব শূন্য পদের তুলনায় বেশি কিনা তাও জানতে হবে। বেশি হলে সেই পেশা পছন্দের তালিকায় নিচের দিকে রাখতে হবে বা বাদ দিতে হবে। আরও জানতে হবে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তার চেয়ে এগিয়ে থাকা আনুমানিক কতজনকে পেছনে ফেলা সম্ভব তা। এটি সম্পর্কে ধারণা রাখা গেলে আত্মবিশ্বাস বাড়বে। এরপর জানতে হবে- যে কঠোর পরিশ্রম দরকার তার মাত্রাটি কী, সে তা করতে পারবে কিনা, সেই কঠোর পরিশ্রম করার জন্য যে সময় দরকার তা সে তার প্রতিদিনের অন্যান্য কাজ করার পর আলাদা করে রাখতে পারবে কিনা। এ বিষয়গুলো একজন পেশা পছন্দ করলে সে পছন্দটি অনেকাংশেই বাস্তবায়নযোগ্য হবে বলে আশা করা যায়।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com