দুই নির্মাণ শ্রমিক হত্যার ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবি

রাজশাহীতে চুরির অপবাদে দুই নির্মাণ শ্রমিককে নির্যাতন করে ‘হত্যা’র প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশ (ইনসাব) রাজশাহী জেলা শাখা। রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে নগরীর গণকপাড়ায় বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। এ সময় ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবি করেন শ্রমিকরা।

সকাল ১০টার দিকে নগরীর গণকপাড়া মোড় থেকে নির্মাণ শ্রমিকরা মিছিল বের করেন। সাহেববাজার ঘুরে এসে একই স্থানে মিছিলটি শেষ হয়। এর আগে সেখানে সমাবেশ করেন শ্রমিকরা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি রবিউল ইসলাম রবি। সভাপতিত্ব করেন জেলা শাখার সভাপতি নবাব আলী।

বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা শাখার সভাপতি আজিজুল হক বাঙ্গালী। জেলার অর্থ সম্পাদক মুকুল আলীর সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন, সহসাধারণ সম্পাদক কাউনাইন হোসেন, আমিনুল ইসলাম পলু, সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনার রশিদ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল ইসলাম প্রমুখ।

বক্তারা শ্রমিক হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করে বলেন, শ্রমিক মানেই অবহেলার পাত্র নয়। নির্মাণ শ্রমিক আছে বলে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। অথচ এক শ্রেণির মানুষ শ্রমিকদের মূল্যায়ন না করে নির্যাতন করছে। অমানুষিক নির্যাতন করে মেরে ফেলছে। নির্মাণ শ্রমিকরা বসে থাকবে না। ইট মারলে পাটকেল মারা হবে।

শ্রমিক হত্যার বিচার না হলে সারাদেশে নির্মাণকাজ বন্ধ করার হুঁশিয়ারি দিয়ে বক্তারা বলেন, ঘটনাস্থল থেকে দুই শ্রমিককে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া ও আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করার জন্য পুলিশকে ধন্যবাদ। কিন্তু গ্রেপ্তার চারজন ছাড়া আরও অনেকে নির্যাতন করেছিল। তাদেরও খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে। না হলে সারাদেশে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়া হবে। তখন দেশের উন্নয়ন থমকে দাঁড়াবে।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) নগরীর বিসিক শিল্প এলাকার মডার্ন ফুড মালিকের বাড়িতে বেঁধে দিনভর নির্যাতন করা হয় শ্রমিক রেজাউল করিম ও রাকিবকে। তাঁরা সেখানে কয়েক দিন ধরে কাজ করছিলেন। সাড়ে চার লাখ টাকা চুরির অভিযোগে তাঁদের নির্যাতন করা হয়। দুপুর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দফায় দফায় চালানো হয় নির্যাতন। হাত ও পায়ের নখ উপড়ে ফেলে চুরির স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করা হয়।

তবে দুই শ্রমিক টাকা চুরির স্বীকারোক্তি দেননি। রাত ৯টার দিকে বোয়ালিয়া থানা পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায়। মুমূর্ষু অবস্থায় তাঁদের উদ্ধার করে দ্রুত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগে এক শ্রমিককে মৃত ঘোষণা করা হয়। আরেকজন মারা যান ঘণ্টাখানেক পর।

নিহত দুই শ্রমিক নওগাঁর মান্দা উপজেলার সাগুনিয়া গ্রামের মো. রেজাউল করিম (৪৫) ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চৈতান্নপুর গ্রামের রাকিবুল ইসলাম রাকিব (৩৫)। তাঁরা নগরীর তেরোখাদিয়া ডাবতলা এলাকায় ভাড়া থাকতেন। রাকিবুলের স্ত্রী সোমা খাতুন চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

এ ঘটনায় মডার্ন ফুডের মালিক আব্দুল মালেকের ছেলে মো. আব্দুল্লাহ (৩৮), তাঁর শ্বশুর মাসুম রেজা (৫০), চাচাতো শ্যালক মঈন উদ্দিন রিয়াল (১৯) ও কর্মচারী মো. ইমরানকে (২১) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত শুক্রবার বিকেলে তাঁদের আদালতে তোলা হলে নিজেদের দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। পরে আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠান।