তৃণমূলে নেতৃত্বহীন ছাত্রলীগ

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২৩ । ০০:০০ | আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২৩ । ১১:৫৪ | প্রিন্ট সংস্করণ

মাজহারুল ইসলাম রবিন

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের তৃণমূল কমিটির বেশিরভাগের মেয়াদ নেই। এর প্রভাব পড়েছে সাংগঠনিক কার্যক্রমে। অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ায় দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় বেপরোয়া আচরণ করছেন নেতাকর্মীরা। প্রায় প্রতিদিনই নেতিবাচক খবরের খোরাক জোগাচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া দেশের সবচেয়ে প্রাচীন সংগঠনটি। গত ৬ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সংগঠনটির নতুন ওয়েবসাইট (https://bsl.community) উদ্বোধন করেন। এখান থেকে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক জেলা ও সমমান ইউনিটগুলোর সময়কাল বিশ্নেষণে দেখা গেছে, তৃণমূলের প্রায় ৮৩ শতাংশ কমিটির মেয়াদ নেই।

ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ১০ এর (খ)তে বলা হয়েছে, জেলা শাখার কার্যকাল এক বছর। জেলা শাখাকে উক্ত সময়ের মধ্যে নির্বাচিতদের হাতে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে হবে। বিশেষ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের অনুমোদন নিয়ে ৯০ দিন সময় বৃদ্ধি করা যাবে। এই সময়ের মধ্যে সম্মেলন না হলে জেলা কমিটি বিলুপ্ত বলে গণ্য হবে। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ আহ্বায়ক বা

অ্যাডহক কমিটি গঠন করে ৯০ দিনের মধ্যে সম্মেলনের ব্যবস্থা নেবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন না হলে আহ্বায়ক বা অ্যাডহক কমিটি বাতিল বলে গণ্য হবে এবং কেন্দ্রীয় সংসদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে নির্বাচন হবে।

তবে এগুলো শুধু গঠনতন্ত্রেই সীমাবদ্ধ। ছাত্রলীগের ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা গেছে, সংগঠনের জেলা ও সমমানের ২১৭ কমিটির মধ্যে মাত্র ৩৭টির মেয়াদ আছে (২০২২ থেকে বর্তমান)। এর মধ্যে রংপুর বিভাগে দুটি, রাজশাহী

বিভাগে পাঁচটি, ময়মনসিংহ বিভাগে দুটি, ঢাকা বিভাগে ১৫টি, খুলনা বিভাগে পাঁচটি, বরিশাল বিভাগে পাঁচটি ও চট্টগ্রাম বিভাগে তিনটি ইউনিট কমিটির মেয়াদ রয়েছে। অন্যদিকে সিলেট বিভাগের কোনো ইউনিটেরই মেয়াদ নেই। ২ থেকে ১০ বছর আগে মেয়াদ পার হয়েছে। ওয়েবসাইটটি পুরোপুরি আপডেটেড না থাকায় উপজেলা ও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সব কমিটি সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।

তথৈবচ সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ : গঠনতন্ত্রে বলা আছে, প্রতিটি বিভাগে মেডিকেল কলেজগুলোর সমন্বয়ে চিকিৎসাবিজ্ঞান শাখা হবে। এটি জেলা শাখা বলে গণ্য হবে। কিন্তু কোনো বিভাগেই এ শাখার কমিটি নেই। এসব শাখার অন্তর্গত মেডিকেল কলেজগুলোর তথ্য বিশ্নেষণ করে দেখা যায়, এসব শাখার অধীনে ১০টি সরকারি মেডিকেল কলেজ কমিটির মেয়াদ নেই। অবশ্য কিছুটা ব্যতিক্রম সম্মিলিত বেসরকারি মেডিকেল কলেজ শাখা। তাদের অধীনে সারাদেশের ১৩০টি চিকিৎসাবিজ্ঞান সম্পর্কিত কলেজ রয়েছে। ওয়েবসাইটে মাত্র সাতটি কলেজের তথ্য পাওয়া গেছে। এগুলোর মধ্যে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ ও ডেল্টা মেডিকেল কলেজ- এই তিনটির মেয়াদ আছে। অন্যদিকে, মেয়াদোত্তীর্ণ ইউনিট হলো- হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজ, শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ, আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজ ও উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ। এসব কলেজ ইউনিটের মেয়াদ গত বছর শেষ হয়েছে।

গোপালগঞ্জ ছাত্রলীগে চাপা ক্ষোভ : শৃঙ্খলা পরিপন্থি কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে গত বছর ১৪ জুলাই গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান পিয়ালকে বহিস্কার করা হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, পদটির ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পাওয়ার কথা জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের। কিন্তু অজানা কারণে এখনও তা হয়নি। ফলে সেখানকার নেতাকর্মীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। জেলা ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকর্মী সমকালকে বলেন, দীর্ঘদিন সাধারণ সম্পাদক না থাকায় বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে সভাপতি নিউটন মোল্লা এককভাবে সদর উপজেলা, পৌর, বঙ্গবন্ধু কলেজ ও সাতপাড় সরকারি নজরুল কলেজ শাখার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। এর পাল্টা কমিটি ঘোষণা করেন জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি এস এম রাসেল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা, রাজু খান ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবির হাসান।

গোপালগঞ্জ আওয়ামী লীগ সভাপতি মাহাবুব আলী খান বলেন, সাধারণ সম্পাদকের শূন্যস্থানে অবশ্যই ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক থাকবেন। কিন্তু কেন নেই তা ছাত্রলীগ ভালো বলতে পারবে। অবশ্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন জানান, বিষয়টি তারা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছেন।

ঢাকা কলেজ এবং বাঙলা কলেজের চিত্র : ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ দুটি ইউনিট ঢাকা কলেজ ও মিরপুর বাঙলা কলেজ। কিন্তু অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও সংঘর্ষের কারণে অর্ধযুগের বেশি এখানে কমিটি নেই। ২০১৬ সালের ১৭ নভেম্বর তিন মাসের জন্য ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। ২০১৭ সালের ২২ জানুয়ারি দু'পক্ষের সংঘর্ষের জেরে আহ্বায়কসহ ১৯ নেতাকর্মীকে বহিস্কার করে কেন্দ্রীয় সংগঠন। এরপর আর কমিটি দেয়নি। অন্যদিকে, ২০১৪ সালের ৮ অক্টোবর প্রথমে আংশিক, পরে ২০১৬ সালে বাঙলা কলেজের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়। ২০১৯ সালের ২১ মার্চ মাস এ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে নেতৃত্বশূন্য বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগ।

প্রায় চার বছর পর গত ডিসেম্বরে সম্মেলনের মাধ্যমে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি হয়। তবে তৃণমূলে এখনও এ কমিটি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। সংগঠনের নবনির্বাচিত সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান শৃঙ্খলা ফেরাতে সারাদেশে কর্মী সমাবেশ করছেন। এরপরও বেপরোয়া তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন জানান, তৃণমূলের কমিটি ঢেলে সাজাতে তাঁরা কাজ করছেন। তৃণমূলের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com