
পরিবারের দাবি আজম মানসিক ভারসাম্যহীন, পুলিশ বলছে সুস্থ
প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২৩ । ২২:১৩ | আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২৩ । ২২:৪২
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

অভিযুক্ত গোলাম আজম
ঠাকুরগাঁও শহরের শান্তিনগর এলাকায় বাবাকে কুপিয়ে হত্যা করে ছেলের থানায় আত্মসমর্পণের ঘটনার নেপথ্যে কী আছে, তা নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। পরিবারের দাবি, আত্মসমর্পণ করা ২৯ বছর বয়সী গোলাম আজম মানসিক ভারসাম্যহীন।
তবে পুলিশের ভাষ্য, আজমের আচরণে মানসিক ভারসাম্যহীনতার কোনো লক্ষণ নেই। বরং পরিবারের সদস্যদের প্রতি দীর্ঘদিনের ক্ষোভ থেকেই তিনি বাবাকে খুন করেছেন।
রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) ঠাকুরগাঁও পৌর শহরের শান্তিনগর একুশে মোড় এলাকার বাড়িতে ফজলে হককে (৬৫) কুপিয়ে খুন করেন তাঁর ছেলে গোলাম আজম। পরে ওই যুবক থানায় এসে আত্মসমর্পণ করলে পুলিশ ঘটনার বিষয়ে জানতে পারে। আজমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ফজলে হকের মরদেহ তাঁর বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়।
পরিবারের দাবি, আজম দীর্ঘদিন ধরে মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। চার ভাই, দুই বোনের মধ্যে আজম চতুর্থ। তিনি রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে ঢাকা প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নেন। এরপর প্রথমে ঢাকায় একটি বেসরকারি ব্যাংকে ও পরে দিনাজপুরে একটি আইটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি শুরু করেন। কিন্তু মানসিক সমস্যার কারণে আজম চাকরি ছেড়ে দেন। এ সময় বাবা ফজলে হক বাড়িতে রেখে এক বছর মানসিক চিকিৎসকের সাহায্য নিয়ে ছেলেকে সুস্থ করে তোলেন। পরে দিনাজপুরে একটি আইটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন আজম। সেখানে থাকাকালেই বাবার এক বন্ধুর মেয়েকে বিয়ে করেন। কিন্তু কিছুদিন পরে আবারও আজমের মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। ২০২২ সালের ডিসেম্ব্বরে দিনাজপুরের চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাড়িতে বেকার ছিলেন তিনি। মাঝে মাঝে চিকিৎসকের দেওয়া ব্যবস্থাপত্র ছিঁড়ে ফেলতেন আজম, ওষুধও খেতেন না। এ নিয়ে পারিবারিক অশান্তির কারণে বাবা ফজলে হকের সঙ্গে প্রায়ই আজমের ঝামেলা হতো। তাঁর তিন মাস বয়সী একটি ছেলেও আছে।
প্রতিবেশীরা জানান, যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা গোলাম আজমের নামে নাম হওয়ায় ওই যুবককে ছোটবেলা থেকেই নানাভাবে নিগৃহীত হতে হতো। নামের কারণে কোনো চাকরিতেও তিনি টিকতে পারেননি। সবখানেই নাম পরিবর্তন করতে বলা হতো। বিষয়টি আজম তাঁর বাবাকে বারবার জানালেও তিনি নাম পরিবর্তন করতে দেননি। উল্টো তাঁকে মানসিক রোগী হিসেবে চিহ্নিত করে ফজলে হক চিকিৎসা করাচ্ছিলেন। সম্প্রতি নামের কারণে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ভাইভা দেওয়ার সময়ও তাঁকে হেনস্তা হতে হয়। সেখানেও নাম পরিবর্তনের বিষয়টি আসে। এ অবস্থায় চাকরি না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছিলেন আজম। এর মধ্যেই সন্তানকে নিয়ে তাঁর স্ত্রী বাবার বাড়িতে চলে যান। ফলে একাকিত্ব ও হতাশার মধ্যে কাটছিল আজমের দিন।
ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি কামাল হোসেন বলেন, নানা কারণে ক্ষোভ থেকেই বাবাকে খুন করেছেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন গোলাম আজম। পরিবারের সদস্যরা তাঁকে মানসিক রোগী বললেও আমাদের তা মনে হয়নি। তাঁর আচরণে মানসিক রোগীর কোনো লক্ষণ নেই। এ কারণে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনের জন্য তদন্ত চলছে।
এদিকে নিহত ফজলে হকের স্ত্রী রমিশা বেগম বলেন, স্বামী খুনের বিচারের জন্য ছেলের নামে মামলা করার চেয়ে কষ্টকর আর কিছু হতে পারে না। এর পরও মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলের চিকিৎসার জন্য আদালতের সহযোগিতা নেব।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com