একুশে বইমেলা

বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের কথা একাডেমি ভাবে কি

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২৩ । ০০:০০ | আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২৩ । ০২:০৮ | প্রিন্ট সংস্করণ

লতিফুল ইসলাম

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দক্ষিণ প্রান্তে রমনা কালীমন্দিরের ফটক দিয়ে অমর
একুশে বইমেলায় ঢুকছিলেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী কোহিনূর বেগম। তাঁকে দেখে দুই
স্বেচ্ছাসেবী এগিয়ে গেলেন। একজনের কাছে হুইলচেয়ার দিয়ে আরেকজনের কাঁধে ভর
করে মেলায় ঢুকলেন কোহিনূর। সেখানেই কথা হলো তাঁর সঙ্গে।

কোহিনূর বলেন, আমার বয়স ৫০ বছর। চোখে দেখি না। তাই মাথায় আসা গল্প আরেকজনকে
দিয়ে লিখিয়ে এখন পর্যন্ত সাতটি বই প্রকাশ করেছি। আরেকটি বই এ মাসেই প্রকাশ
হবে। প্রতিদিন সাভার থেকে এসে বইমেলায় ঘুরে ঘুরে নিজের বই বিক্রি করি।
মেলায় হুইলচেয়ার নিয়ে প্রবেশের কোনো সুবিধা নেই। স্বেচ্ছাসেবীরা প্রবেশে
সহায়তা করলেও মেলার মাঠে ঘুরতে সমস্যা হয়। চলাচলের রাস্তা উঁচু-নিচু। অনেক
জায়গায় ইট-পাটকেল পড়ে আছে। প্রতিদিন এমন ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। কোহিনূর
বেগমকে মেলায় প্রবেশে সহায়তার পর ফটকের দিকে যাচ্ছিলেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন
সুইচ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের সদস্য মিলন মিয়া। তিনি বলেন, হুইলচেয়ার নিয়ে
প্রবেশসহ মেলার মাঠে হাঁটতে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের অসুবিধা হয়। এ
বিষয় জানানোর পরও মেলা আয়োজক কমিটি কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

গতকাল মঙ্গলবার মেলার সপ্তম দিন বিকেলে হুইলচেয়ারে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে
ঘুরছিলেন লেখিকা নূর আঁখি। রাস্তা সুবিধাজনক না থাকায় চলতে সমস্যা হচ্ছিল।
নূর আঁখি বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে শরীর খারাপ। মেলায় হুইলচেয়ারের সেবাটা
ভালো; স্বেচ্ছাসেবীরা অনেক আন্তরিক। কিন্তু মেলার পরিবেশ আমাদের উপযোগী নয়।
কেউ তো আর ইচ্ছা করে হুইলচেয়ার ব্যবহার করে না। আমার মতো যাঁরা অসুস্থ
কিংবা চলতে সমস্যা হয়, তাঁদের জন্য সব প্রবেশপথে ব্যবস্থা থাকা দরকার।

হুইলচেয়ারে বইমেলায় এসেছিলেন নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জিয়া
হায়দার। বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির ফটক দিয়ে বইমেলায় প্রবেশকালে
বিড়ম্বনায় পড়েন তিনি। ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রতিবছর বইমেলায় আসি, কিন্তু
আয়োজকরা হুইলচেয়ারের বিষয়টি মাথায় রাখেন না। মেলা মাঠের উঁচু-নিচু জায়গায়
হুইলচেয়ারে ঘুরতে অনেক সমস্যা হয়। টিএসসির সামনের ফটক এত সরু, হুইলচেয়ার
নিয়ে প্রবেশ করতেই কষ্ট হয়। মাঠে ধুলা, নরম মাটিতে চাকা আটকে যায়।

বইমেলায় গত ৯ বছর সেবা দিয়ে আসছে সুইচ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন। হুইলচেয়ার
সরবরাহ করে থাকে বাংলা একাডেমি। ফাউন্ডেশনের প্রধান সমন্বয়ক মোস্তাফিজুর
রহমান বলেন, স্বেচ্ছাসেবকদের অনেক কষ্ট হয়। প্রতিটি স্টল যদি লেন আকারে করা
হতো বা পাকা রাস্তা থাকত, তাহলে হুইলচেয়ার নিয়ে চলাফেরা করা যেত। এ
সমস্যার কথা জানিয়ে প্রতিবার বাংলা একাডেমির কাছে আবেদন করা হলেও কোনো
উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না।

এ বিষয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা সমকালকে বলেন, এর
আগে তিনি হুইলচেয়ার নিয়ে সমস্যার কথা শোনেননি। এখন যেহেতু এ নিয়ে কথা
হচ্ছে, সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

দুই প্রকাশনীর স্টল বন্ধ, সাতটিকে সতর্ক :পাইরেটেড বই বিক্রির অপরাধে গতকাল
রাবেয়া বুক হাউস ও গ্রন্থ প্রকাশ নামে দুটি প্রকাশনীর স্টল বন্ধ করে
দিয়েছে বইমেলা কমিটি। এ ছাড়া নীতিমালা-বহির্ভূত বই বিক্রি করায় সাত
প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করেছে বইমেলার টাস্কফোর্স। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- মা সেরা
প্রকাশন, জ্ঞান বিতান, মৌ প্রকাশনী, বঙ্গজ প্রকাশন, গাজী প্রকাশনী, মেধা
পাবলিকেশন্স ও দেশজ। সতর্কবার্তা না মানলে পরবর্তী অভিযানে ব্যবস্থা নেওয়া
হবে বলে জানিয়েছেন টাস্কফোর্সের সভাপতি ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব
অসীম কুমার দে।

এদিকে গতকাল বইমেলায় বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির অফিস
উদ্বোধন করেছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন
সমিতির উপদেষ্টা ওসমান গনি, সহসভাপতি মাজহারুল ইসলাম, শ্যামল পাল, বাংলা
একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা প্রমুখ।

এ দিন মেলায় এসেছে নতুন আরও ১০৪টি বই। মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় 'স্মরণ
:মাহবুব তালুকদার' এবং 'স্মরণ :আলী ইমাম' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে
প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গাজী রহমান ও আহমাদ মাযহার। আলোচনায় অংশ নেন ড.
নিমাই মণ্ডল, আমীরুল ইসলাম ও ওমর কায়সার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ফরিদুর
রেজা সাগর।




© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com