আপন দর্পণ

'মিথ্যা দেখলে সরে আসি'

প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২৩ । ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

হাবিব আনিসুর রহমান

হাবিব আনিসুর রহমান [জন্ম :৬ জানুয়ারি ১৯৫৩]

হাবিব আনিসুর রহমান ১৯৫৩ সালের ৬ জানুয়ারি মেহেরপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে এমএ করার পর অধ্যাপনা শুরু। প্রথম কর্মস্থল চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে প্রায় দশ বছর অধ্যাপনার পর কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ ও যশোর সরকারি এমএম কলেজেও অধ্যাপনা করেন। তিন বছর তিনি কুষ্টিয়া সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ- 'গুলেনবারি সিনড্রোম ও অন্যান্য গল্প', 'অষ্টনাগ ষোলোচিতি', 'পোড়ামাটির জিলাপি ও অন্যান্য গল্প', 'পক্ষী ও সারমেয় সমাচার', 'পুষ্পরাজ সাহা লেন', 'আমাদের নতিপোতা গ্রামের ইতিহাস' ইত্যাদি। লেখালেখির জন্য তিনি ২০১১ সালে 'জীবননগর সাহিত্য পরিষদ সম্মাননা' ও ২০১৫ সালে 'কাঙাল হরিনাথ মজুমদার' পদকে ভূষিত হন।

-শৈশবের প্রথম স্মৃতি-

-- ছোটবেলায় আমাদের বাড়ির পাশের একটা বাগানে কোয়েল পাখি আসত। পোষা নয়। বনের কোয়েল। যখন সূর্য ডুবছে, সন্ধ্যা নামছে, কোয়েলগুলো বাগানে নেমে সারি বেঁধে তাদের ঘরে ফিরে যেত। লুকিয়ে দেখতাম, ওরা আস্তে আস্তে অন্ধকারে মিশে যাচ্ছে। মনে হতো অপার্থিব কিছু দেখছি। কোয়েলগুলোর আসার সময় হলে আমি বাগানের বেড়ার পাশে অপেক্ষায় বসে থাকতাম। দূর শৈশবের এই স্মৃতি এখনও উজ্জ্বল।

- প্রথম বইয়ের স্মৃতি-

-- আমার প্রথম বই 'গুলেনবারি সিনড্রোম ও অন্যান্য গল্প' প্রকাশিত হয় কথাশিল্পী সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের উৎসাহে, ২০০২ সালে। তিনি আমার বইটির ভূমিকা লিখে দিয়েছিলেন। মুগ্ধতার প্রকাশ হিসেবে তিনি একটা গল্প পর্যন্ত লিখে ফেলেছিলেন, নাম- বাহারুলের বাড়ি। সেখানে আমার নামও রয়েছে। প্রথম বইকে কেন্দ্র করে এসব আমার কাছে বড় আনন্দময় অভিজ্ঞতা। প্রথম কিছু লেখা ঘিরে অন্যরকম কষ্টের স্মৃতি রয়েছে। একাত্তরে আমি কলকাতা থেকে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। তখন প্রচুর কবিতা লিখেছি, কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে এখন একটাও আমার কাছে নেই। যে বাড়িতে ছিলাম তখন, সেখানে রেখে এসেছিলাম। বাড়িটা ছিল একজন এমএলএর বাড়ি (এমএলএ- মেম্বার অব লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলি)। ফোন করে জিজ্ঞেস করেছিলাম কবিতাগুলোর কথা। ওনারা জানালেন, নষ্ট হয়ে গেছে।

- আপনার প্রিয় লেখক কারা, কেন তাঁরা প্রিয়?

-- বাংলা আর অবশিষ্ট সারা বিশ্বে আমার প্রিয় লেখক অগণিত। তাঁদের ভেতর বিশেষ- আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, নাগিব মাহফুজ ও অরুন্ধতী রায়। হেমিংওয়ের 'ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি', নাগিব মাহফুজের 'চোর ও সারমেয় সমাচার' আর অরুন্ধতী রায়ের 'গড অব স্মল থিংস'। দেশে আমার পছন্দের লেখক শহীদুল জহির। জহিরের লেখা 'আমাদের কুটির শিল্পের ইতিহাস' আমাকে ভীষণ আন্দোলিত করেছিল।

- যে বই বারবার পড়েন-

-- বিভূতিভূষণের 'পথের পাঁচালী'। আমি প্রথম যখন কলেজ জীবনে পথের পাঁচালী পড়ি, মনে হয়েছিল, আমিই অপু। আরও কত বই যে বিস্মৃত হয়েছি। ভিক্টর হুগোর 'লা মিজারেবল' বারংবার পড়েছি। যদিও বয়সের কারণে এখন কমই মনে আছে। আর বারবার পড়ব 'গড অব স্মল থিংস'। ভাস্কো দ্য গামা যে কেরালায় নেমে খ্রিষ্টধর্ম প্রচার করছেন আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম। আম্মু, ভেলুথা- চরিত্রদের যেন আকাশ থেকে দেখছেন অরুন্ধতী। এত পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ। আলবেয়ার কামুর 'আউটসাইডার'ও বারংবার পড়ার মতো বই।

- লেখক ছাড়া শিল্পের পথে আর কী হতে পারতেন বলে মনে হয়?

-- লেখক ছাড়া আর বোধহয় গীতিকার হতে পারতাম। নাটকের গান লিখেছি একসময়। ১৯৭৩ সালে আমি পুরান ঢাকায় থাকতাম। নর্থব্রুক হল রোড। সেখানে ওয়াগন ব্রেকারদের নিয়ে লেখা একটা নাটকের গান আমি লিখেছিলাম। জীবন-জীবন করে শোনো আজ সংগ্রাম। পৃথিবীতে আমাদের নেই নাম, নেই কোনো ধাম। নাটকের পটভূমি, রানাঘাট রেলস্টেশনের একদল ওয়াগন ব্রেকার, যারা রাতের বেলা নেশা করে, ওয়াগন ভাঙে।

- আপনার প্রিয় সংগীতশিল্পী কারা?

-- ১৯৭৫-৭৬ সালের দিকে আমি পাশ্চাত্যের একটা সংগীত দলের প্রেমে পড়ি, বনি এম। ববি ফ্যারেল, আমি ভীষণ পছন্দ করতাম তাঁকে। তাছাড়া রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতিও গভীর আনন্দের সঙ্গে শুনি।

- কোন সীমাবদ্ধতা আপনাকে কষ্ট দেয়?

-- ১৯৯৬ সালে আমার একটা অসুখ হয়েছিল। গুলেনবারি সিনড্রোম। এতে মানুষের সমস্ত শরীর অবশ হয়ে যায়। সে কোমায় চলে যায়। মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। ভাগ্য খুব ভালো হলে কেউ বেঁচে যায়। আমার ভাগ্য ভালো ছিল। কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস চলছিল আমার, তেমন শোচনীয় অবস্থায় পৌঁছেছিলাম। স্ত্রী নাসিমার যত্নে আমি ধীরে ধীরে ভালো হয়ে উঠি।

- মানুষের কোন বৈশিষ্ট্য আপনাকে আকৃষ্ট করে?

--মানুষের সত্যবাদিতা আমাকে আকৃষ্ট করে। যার ভেতর আমি মিথ্যা দেখি, সরে আসি। এমন অনেকে আছেন যাঁদের সঙ্গে আমি আর মিশতে পারি না, শুধু মিথ্যার জন্য। আমি নিজে দীর্ঘকাল শিক্ষকতা করেছি। আমার ভেতর এই বৈশিষ্ট্যটা আমি ধরে রাখতে চাই।

- প্রিয় উক্তি কোনটি?

-- প্রিয় উক্তি বলতে, একটা বিশেষ ভাষ্য আমি আদর্শ বলে মানি। কাজ- কাজ- কাজ। প্রচুর কাজ করতে হবে। কাজ না থাকলে সচরাচর মানুষ পরচর্চায় রত হয়।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com