ইসলাম ও সমাজ

বিপর্যয় ও দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষা

প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২৩ । ০০:০০ | আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২৩ । ০১:১১ | প্রিন্ট সংস্করণ

মো. শাহজাহান কবীর

সাম্প্রতিক সিরিয়া ও তুরস্কের ভূমিকম্পের বিভীষিকা আমরা দেখেছি। শক্তিশালী এই ভূমিকম্পে ব্যাপক মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে। বস্তুত মহান আল্লাহ মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন :আমি জিন ও মানবকে আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি। দুনিয়ার জীবনে মহান আল্লাহ মানুষকে তাঁর নিদর্শন নানাভাবে দেখান। এর মধ্যে ভূমিকম্প অন্যতম। মানুষ যে কত অসহায়- মাঝেমধ্যে এ ধরনের কিছু ঘটনা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়। মানুষের অর্থবিত্ত, ক্ষমতা, প্রভাব-প্রতিপত্তি কিছুই নয়। দুনিয়ার মোহে না থেকে পরকালীন কাজের জন্যও এটি সতর্কবার্তা। বলার অপেক্ষা রাখে না, মানুষ অনিবার্যভাবে কিয়ামতের দিকে ধাবিত হচ্ছে; কিয়ামত শুরু হবে মহাপ্রলয়ংকরী ভূমিকম্পের মাধ্যমে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে :'পৃথিবী ভীষণভাবে উঠিবে কাঁপিয়া/ ভিতরের বোঝা দেবে বের করিয়া।/ মানুষ বলিবে তখন কী হলো ইহার/ ব্যক্ত করিবে খবর যাবতীয় তার।' (কাব্যানুবাদ, সুরা জিলজাল :১-৪)

পবিত্র কোরআনে ভূমিকম্প বিষয়ে আরবি শব্দ 'জিলজাল' ও 'দাক্কা' ব্যবহূত হয়েছে। 'জিলজাল'-এর অর্থ একটি বস্তুর নড়াচড়ায় আরেকটি বস্তু নড়ে ওঠা। 'দাক্কা'র অর্থ প্রচণ্ড কোনো শব্দ বা আওয়াজের কারণে কোনো কিছু নড়ে ওঠা বা ঝাঁকুনি খাওয়া। পৃথিবীতে বর্তমানে যেসব ভূমিকম্প ঘটছে, তা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে ভূপৃষ্ঠের অভ্যন্তরে কঠিন শিলাত্বকে চ্যুতি বা স্থানান্তরের কারণে। তুরস্কের এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৮। ফ্রন্টলাইন বরাবর প্রায় ১০০ কিলোমিটার ধরে এটি আঘাত হেনেছে এবং এর কারণে ভবনগুলোতে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে।

ভূকম্পনের মাধ্যমে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের সতর্ক করেন, যাতে তারা অনুতপ্ত হয় এবং আল্লাহর পথে ফিরে আসে। মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের সতর্ক করার জন্য বিভিন্ন ধরনের নিদর্শন সৃষ্টি করেন। বান্দাদের উচিত, তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হওয়া, যাতে তারা তাদের ভুল বুঝতে পারে ও তাদের বোধোদয় ঘটে এবং যাতে তারা ফিরে আসে মহান আল্লাহর পথে।'

মহান আল্লাহ সুরা আল-আরাফের ৯৮-৯৯ আয়াতে আরও এরশাদ করেন :'জনপদের মানুষ কি নির্ভয় হয়ে ধরে নিয়েছে যে আমার আজাব তাদের ওপর এসে পড়বে না- তখন তারা খেল-তামাশায় মত্ত থাকবে। কিংবা তারা কি আল্লাহর কলাকৌশল থেকেও নির্ভয় হয়ে গেছে? অথচ আল্লাহর কলাকৌশল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত জাতি ছাড়া অন্য কেউই নিশ্চিত হতে পারে না।'

হাদিসে বর্ণিত, রাসুলে পাক (সা.) এরশাদ করেন : যখন অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জিত হবে, কাউকে বিশ্বাস করে সম্পদ গচ্ছিত রাখা হবে কিন্তু তার খেয়ানত করা হবে; জাকাতকে দেখা হবে জরিমানারূপে; ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া বিদ্যা অর্জন করা হবে; পুরুষ তার স্ত্রীর আনুগত্য করবে কিন্তু মায়ের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করবে; বন্ধুকে কাছে টেনে নিয়ে পিতাকে দূরে সরিয়ে দেবে; মসজিদে উচ্চ স্বরে শোরগোল হবে। জাতির সবচেয়ে দুর্বল ব্যক্তিটি সমাজের শাসকরূপে আবির্ভূত হবে, সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি হবে নেতা; একজন মানুষ, যে খারাপ কাজ করে খ্যাতি অর্জন করবে, তাকে তার খারাপ কাজের ভয়ে সম্মান করা হবে; বাদ্যযন্ত্র ও নারী শিল্পীর ব্যাপক প্রচলন হবে; মদ পান করা হবে; লোকজন তাদের পূর্ববর্তী মানুষদের অভিশাপ দেবে; এমন সময় তীব্র বাতাস প্রবাহিত হবে এবং এমন একটি ভূমিকম্প হবে, যা সেই ভূমিকে তলিয়ে দেবে। (তিরমিজি) যখন কোথাও ভূমিকম্প অথবা যে কোনো ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দেয়, তখন মানুষের উচিত মহান আল্লাহর কাছে তাওবা ইস্তেগফার করা। মহান আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করা এবং সাহায্য চাওয়া। একই সঙ্গে কেউ দুর্যোগে পতিত হলে তাদের সাহায্যে এগিয়ে যাওয়ারও তাগিদ দিয়েছে ইসলাম। অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোও যে ইবাদত- সেটি বলেছে মানবতার ধর্ম ইসলাম।

আশঙ্কা করা হচ্ছে, আমাদের দেশে ভয়াবহ ভূমিকম্প হতে পারে। তাই আমাদের উচিত মহান আল্লাহর দরবারে তাওবা ইস্তেগফার বেশি বেশি পাঠ করা, যাবতীয় অন্যায়-অপরাধ থেকে নিজেদের বিরত রাখা। একই সঙ্গে ভূমিকম্পসহ যে কোনো দুর্যোগের আগাম প্রস্তুতিও জরুরি। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সব ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে হেফাজত করুন, নিরাপদ রাখুন।

ড. মো. শাহজাহান কবীর: চেয়ারম্যান, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com