যুবদল নেতাকে দেখতে গিয়ে ছোট ভাই রিমান্ডে

খালাতো ভাইকেও এক রাতের হাজত

প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২৩ । ০০:০০ | আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২৩ । ১৩:৫৫ | প্রিন্ট সংস্করণ

সমকাল প্রতিবেদক

প্রতীকী ছবি

বড় ভাইকে আটক করার খবর পেয়ে শ্যামপুর থানায় ছুটে গিয়েছিলেন তাঁর ছোট ভাই একেএম আমিনুল ইসলাম। বড় ভাই যুবদলের নেতা হলেও আমিনুল রাজনীতি করেন না। তাঁর নামে কোনো মামলাও নেই। তা সত্ত্বেও পুলিশ তাঁকে আটক করে এবং পরদিন এক দিনের রিমান্ডে নেয়। খবর পেয়ে খালাতো ভাই থানায় গেলে তাঁকেও আটক করে এক রাত হাজতে রাখা হয়।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের আহ্বায়ক গোলাম মাওলা শাহীনের দুই ভাইয়ের ক্ষেত্রে এ ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ পরিবারের। বিএনপির নেতাকর্মী জানান, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যুবদলের এক নেতার বাবার জানাজা শেষে ফেরার পথে শ্যামপুর থানা পুলিশ শাহীনকে আটক করে।

৪৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন দিলার জানান, তাঁর বাবা বৃহস্পতিবার মারা যান। এশার নামাজের পর স্থানীয় দলকানগর ছাপরা মসজিদে জানাজা শেষে জুরাইন কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করার সময় শাহীন উপস্থিত ছিলেন। দাফন শেষে তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে ফেরার সময় কবরস্থানের সামনে থেকেই পুলিশ তাঁকে আটক করে।

তবে পুলিশের করা মামলায় রয়েছে এর সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। মামলায় দাবি করা হয়, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে শ্যামপুর থানার নতুন রাস্তা গেণ্ডারিয়া বাজার সংলগ্ন এলাকায় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের 'দুস্কৃতকারীরা' সরকারবিরোধী নাশকতা সৃষ্টি করতে মিলিত হয়। পুলিশ তাঁদের অবস্থান টের পেয়ে বাধা দিতে গেলে ইটপাটকেল ও ককটেল বিস্ম্ফোরণ করে পালানোর সময় তাঁদের মধ্য থেকে চারজনকে আটক করা হয়। ওই দিন রাতেই তাঁদের বিরুদ্ধে শ্যামপুর থানায় মামলা করে পুলিশ।

গতকাল শুক্রবার তাঁদের আদালতে হাজির করে প্রত্যেকের সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে শাহীনকে দুই দিনের এবং অন্যদের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

ইটপাটকেল ও ককটেল বিস্ম্ফোরণের বিষয়ে জানতে চাইলে দেলোয়ার হোসেন বলেন, এখানে একটা শোকাহত পরিবেশে কবরস্থানের মতো জায়গায় তিনি এসেছেন। সেখানে কীভাবে ককটেল কিংবা ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে?

প্রত্যক্ষদর্শী সিরাজুল ইসলাম জানান, শাহীনকে ধরার জন্য থানা পুলিশের একটি বড় দল জুরাইন কবরস্থানে আসে। তখন তিনি ভেতরে ছিলেন। বাইরে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে আটক করে পুলিশ। তবে সেখানে আগে-পরে কোনো ইটপাটকেল-ককটেল বিস্ম্ফোরণের ঘটনা তিনি দেখেননি, শব্দও শোনেননি।

শাহীনের স্ত্রী মাসুদা বেগম সমকালকে বলেন, তাঁর স্বামী বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

কিন্তু তাঁদের পরিবারের আর কেউ কখনও কোনো রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন না। শাহীনও চাননি তাঁর পরিবারের কেউ রাজনীতি করুক। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শাহীন তাঁকে বলেন, একটি জানাজার নামাজ শেষে তিনি বাসায় ফিরবেন। তবে রাত ৯টার দিকে খবর পান তাঁকে পুলিশ আটক করেছে। তখন তাঁর দেবর আমিনুল থানায় যান বড় ভাইকে দেখতে। আমিনুল একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। থানায় পৌঁছার পর পুলিশ তাঁকে আটক করে। তাঁর বিরুদ্ধে কখনও মামলা তো দূরের কথা, জিডিও ছিল না। ওই দিন রাতেই পুলিশের মামলায় তাঁকে ৩ নম্বর আসামি করা হয়েছে। রাতে তাঁদের খালাতো ভাই রাজুকেও আটক করে পুলিশ। তবে সকালে বিভিন্ন কায়দাকানুন করে বের হতে সক্ষম হন তিনি।

আমিনুলের স্ত্রী জাহান জেনি বলেন, 'আমাদের একটি পাঁচ বছরের শিশুসন্তান রয়েছে। এ রকম ঝামেলায় কখনও পড়েননি তাঁরা। নির্দোষ মানুষের নামে এভাবে মামলা দিচ্ছে, রিমান্ড দিচ্ছে। কার কাছে বলব? সন্তানটি বারবার জানতে চাচ্ছে বাবা কেন আসে না?'

শ্যামপুর থানার ওসি নজরুল ইসলাম বলেন, মামলা হলে আসামিরা বিভিন্ন রকম মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করবেন এটাই স্বাভাবিক। তবে বাদীর জবানবন্দিই তাঁর বক্তব্য। এটাই মূল ডকুমেন্টস হিসেবে বিবেচিত হবে।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com