
এ দেশ হরিলুটের জায়গা হতে পারে না
প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২৩ । ০০:০০ | আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২৩ । ১৬:০৬ | প্রিন্ট সংস্করণ
সমকাল প্রতিবেদক

ফাইল ছবি
দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচারের ঘটনায় উষ্ফ্মা প্রকাশ করে হাইকোর্ট বলেছেন, এ দেশ কি হরিলুটের জায়গা? যেখানে ছলেবলে ও কৌশলে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিদেশে অর্থ পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এভাবে কি টাকা নিয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে? আমরা কি এটা অ্যালাও (অনুমোদন) করতে পারি? এ দেশ হরিলুটের জায়গা হতে পারে না।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াত সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল সোমবার 'জি.বি. হোসেন বনাম দুদক এবং অন্যান্য' মামলার শুনানিকালে এই মন্তব্য করেন। পরে হাইকোর্ট সংবিধান ও আইন অনুসারে বাংলাদেশ থেকে আয় করা অর্থ দিয়ে দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে- এমন কোনো ব্যক্তি বিদেশে সম্পত্তি কিনতে পারেন কিনা, এ প্রশ্নে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অ্যাটর্নি জেনারেলকে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেন। এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির
জন্য আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করা হয়।
গাজী বেলায়েত হোসেন যিনি জি.বি. হোসেন নামে পরিচিত। তিনি দুটি পাসপোর্টের অধিকারী। একটি বাংলাদেশের ও আরেকটি কানাডার। নিজেকে পরিচয় দেন জাহাজ ব্যবসায়ী হিসেবে। জাহাজ আমদানি করবেন বলে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক থেকে ৩০০ কোটি টাকার ঋণ নেন। কিন্তু সেই ঋণের অর্থে জাহাজ আমদানি না করে পুরো টাকা তিনি কানাডায় পাচার করেছেন বলে অভিযোগ তুলেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১৯ সালে জি.বি. হোসেনের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয় দুদক। সেই নিষেধাজ্ঞা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন তিনি। ওই রিটের ওপর শুনানি নিয়ে তাঁকে বিদেশ যেতে অনুমতি দেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি রুল জারি করেন। গতকাল ওই রুলের ওপর শুনানিতে দ্বৈত নাগরিকদের দেশ থেকে অর্থ পাচারের বিষয়টি উঠে আসে।
শুনানিতে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, বিদেশে অর্থ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের একটা নির্দেশনা রয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, যদি কেউ পাঁচ বছরের ভিসা পান তাহলে তিনি ব্যাংকিং চ্যানেলে ১২ হাজার মার্কিন ডলার নিতে পারবেন। এর চেয়ে কম সময়ের ভিসা পেলে ১০ হাজার ডলার নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এই ব্যক্তি পুরো টাকাই কানাডায় পাচার করেছেন।
এ পর্যায়ে হাইকোর্ট বলেন, 'এ দেশ কি হরিলুটের জায়গা? উনি তো দ্বৈত নাগরিক। তিনি কি এভাবে বিপুল পরিমাণ টাকা বিদেশে নিয়ে যেতে পারেন?' জবাবে খুরশীদ আলম বলেন, ওই ব্যক্তি কিছু কাল্পনিক ডকুমেন্টস দিয়ে ঋণ নিয়েছেন। আদালত বলেন, দ্বৈত নাগরিকদের হার্ট (হৃদয়) তো দুটি। কারণ তাঁরা দুই দেশের নাগরিক। ঋণের টাকা বিদেশে নিয়ে গেলে সেটা এ দেশে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে ভিনদেশে সেটা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত নাও হতে পারে।
তখন দুদকের আইনজীবী বলেন, বিশ্বের কোনো দেশই অনুমোদন দেবে না। গত এক বছরে কানাডাও তাদের আইনে পরিবর্তন এনেছে। ফলে এখন সেখানে ইচ্ছামতো বাড়ি কেনা যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, কুয়েতে বাংলাদেশের এমপি পাপুলের সাজা হয়েছে। এই ইস্যুতে কুয়েতি দূতাবাস অনেক কাজ করেছে। ফলে সে দেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে বাংলাদেশে অর্থ আসা অনেকটাই বন্ধ হয়ে গেছে।
হাইকোর্ট বলেন, শুধু মামলা করে ও বক্তব্য দিয়ে কাজ হবে না। অর্থ পাচার রোধ করতে নানা কৌশল গ্রহণ করতে হবে। যেমনটা ভারত সরকার করেছে। সেখান থেকে যারা অর্থ পাচার করে সরকার সেই পাচারকৃত অর্থের ওপর ট্যাক্স কেটে নেয়। খুরশীদ আলম বলেন, আমাদের এখানেও কাজ চলছে। তখন হাইকোর্ট বলেন, কতদিন ধরে কাজ চলবে? আমরা শুধু শুনেই যাচ্ছি- কাজ চলছে।
জি.বি. হোসেনের আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, 'উনি কানাডার নাগরিক হলেও বিদেশে তাঁর অর্থ নিয়ে যেতে বাধা নেই। শুধু দ্বৈত নাগরিকরা সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করতে পারবেন না। তবে বিদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করলে তখন এমপি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।'
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, প্রতিটি দেশেই নাগরিকত্ব আইন আছে। ইমিগ্রেশনের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি বিদেশের নাগরিকত্ব অর্জন করেন। প্রথমে বিবাহ সূত্রে, দ্বিতীয়ত রাজনৈতিক আশ্রয়ের মাধ্যমে ও বর্তমানে বিনিয়োগ ক্যাটাগরিতে নাগরিকত্ব পাচ্ছেন অনেকেই। তিনি আরও বলেন, যখন ব্যাংকগুলোতে পলিটিক্যাল অ্যাপয়েন্টমেন্ট হচ্ছে, তখন থেকেই লুটপাট শুরু হয়েছে। দেশ থেকে বেরিয়ে গেছে হাজার হাজার কোটি টাকা।
এর মাধ্যমে ব্যাংক খাতকে পঙ্গু করে ফেলা হয়েছে। আর এই লুটপাটের টাকা দিয়েই বিদেশে কেউ বিনিয়োগ করে নাগরিকত্ব অর্জন করছেন। বাড়ি কিনছেন। আদালত এ বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করতে পারেন। হাইকোর্ট বলেন, যিনি দ্বৈত নাগরিক, ঋণ আবেদন দেওয়ার সময় এ বিষয়ে ঘোষণা থাকা দরকার। দ্বৈত নাগরিক হলেও তো তাঁর ঋণ নিতে কোনো আইনগত বাধা নেই। আর ঋণের অর্থ পাচার করলে তো ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মানি লন্ডারিং আইন রয়েছে।
দুদকের আইনজীবী বলেন, বেসিক ব্যাংকের অর্থ বিদেশে পাচার নিয়ে আদালতের ওই ব্যাংকের বক্তব্য শোনা উচিত। কেন তারা একজন দ্বৈত নাগরিককে এত টাকা ঋণ দিল? এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকেরও বক্তব্য আদালত শুনতে পারেন।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com