জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের মমফেসি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক

স্বপ্নজয়ী ইসরাত

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২৩ । ০০:০০ | আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২৩ । ১৩:১৩ | প্রিন্ট সংস্করণ

ফাহমিদা রিমা

ইসরাত জাহান। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মেমফিসে সোশিওলজি বিভাগে অ্যাডজাঙ্কট ফ্যাকাল্টি হিসেবে যোগ দিয়েছেন গত জানুয়ারিতে। কিশোরগঞ্জের ইসরাত জেলার সৌরবালা সরকারি গার্লস স্কুল এবং গুরুদয়াল সরকারি কলেজে পড়াশোনা শেষে ভর্তি হন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ময়মনসিংহের মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই স্বপ্ন দেখেন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার। সেই স্বপ্ন অনুযায়ী তৈরি করেন নিজেকে। এটি ছিল অনেকটা স্বপ্নের মতো। ইসরাত সেই স্বপ্ন ছুঁয়েছেন।

ইংরেজি বিভাগে ভর্তি ও মন খারাপের দিন

অন্য আট-দশজনের মতো ইসরাতও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। কোথাও সরাসরি ভর্তি হতে না পেরে শেষমেশ ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ময়মনসিংহের মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজে। ভর্তির পর থেকেই নানাজনের নানা কথা কানে ভাসে তাঁর। এতদিনের সহপাঠীরা কেউ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে, কেউ মেডিকেলে, কেউ আবার ভর্তি হয়েছেন বুয়েট, চুয়েট কিংবা কুয়েটে। কিছুদিন পর দেখলেন সহপাঠীরা ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন বিসিএসের জন্য! এতকিছুর পরও ইসরাত নিজেকে ধরে রাখলেন স্বপ্নের পথে। তাঁর পড়ার আগ্রহ বাড়ে। নিজেকে নিয়ে স্বপ্নটাও বড় হতে থাকে।

মনোযোগের ডালপালা

রাজ্যের প্রতিবন্ধকতা আর সেশনজটে পড়ে মুখ ভার হয়ে আসছিল ইসরাতের। ঢিমেতালে ক্লাস শুরু হয় ২০১০ সালে। ২০১৪ সালে স্নাতক শেষ করার কথা থাকলেও ২০১৬ সালে বসেন স্নাতক পরীক্ষায়। পড়াশোনায় নিয়মিত হওয়ায় ইসরাত বরাবরই ছিলেন ক্লাস টপার। যদিও ইংরেজি বলা এবং বোঝায় ছিল ঘাটতি। এর জন্য ব্যবহারিক জ্ঞান কম থাকাকেই দোষেন ইসরাত। তবে নিয়মিত অধ্যয়ন এবং পাঠ্যসূচি মন দিয়ে পড়ে তা কাটিয়ে ওঠেন দক্ষতার সঙ্গেই।

ডানা মেলার প্রস্তুতি

২০১৬ সালে স্নাতক শেষ করে সরকারি চাকরির পরীক্ষার যে মহারণ, তাতে নেমে পড়ার কথা যখন ভাবছিলেন ইসরাত, তখনই ত্রাতা হয়ে আসেন কাছেরই এক বন্ধু। সেই বন্ধুও বিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। দু'জনের বুদ্ধি এবং পরামর্শে ইসরাত সরকারি চাকরির পরীক্ষার রণভঙ্গ দিয়ে মন দেন বিদেশে উচ্চশিক্ষার ভর্তি প্রস্তুতিতে। যে ইসরাত ঠিকঠাক একটা মেইল লিখতে পারতেন না, ভয় পেতেন ইংরেজি বলতে, সেই ইসরাত নতুন করে নিজেকে প্রস্তুত করতে থাকেন। দিন-রাত পরিশ্রম করে বসেন জিআরই পরীক্ষায়। তবে ফলাফল আশানুরূপ হয়নি। প্রস্তুতি নিতে থাকেন আবারও জিআরইতে বসার। সেই সঙ্গে খুঁজে বের করতে থাকেন যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জিআরই স্কোর খুব গুরুত্বপূর্ণ নয় এমন বিশ্ববিদ্যালয়। যুক্ত হন বিদেশে উচ্চশিক্ষাবিষয়ক বেশ কয়েকটি ফেসবুক গ্রুপের সঙ্গেও। নানা প্রস্তুতি শেষে আবেদন করলেন বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

স্বপ্ন নয় সত্যি!

কিছুদিন পরই যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মেমফিস থেকে ই-মেইল পেলেন ইসরাত। তাঁকে জানানো হয়, আপনি সমাজবিজ্ঞান বিভাগে পূর্ণ তহবিলসহ পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। ইসরাতের যেন বিশ্বাসই হচ্ছিল না। তবে এর জন্য ইসরাত কৃতজ্ঞতা জানান সেই বন্ধুদের প্রতি, যাঁরা তাঁর সঙ্গে কথা বলে কিংবা ফেসবুকের মাধ্যমে সহযোগিতা করেছেন এবং অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। এরপর উড়াল দেন স্বপ্নের পথে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে গিয়ে শুরুতে বেশ হিমশিম খেতে হয়েছিল ইসরাতকে। পড়াশোনায় কুলিয়ে উঠতে পারতেন না। আস্তে আস্তে নিজেকে প্রস্তুত করে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

আগামীর স্বপ্ন

স্নাতকোত্তরে ইসরাত বাংলাদেশে নারী স্বাস্থ্য ও বৈষম্য নিয়ে গবেষণা করেছেন। একই বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অব মেমফিসে এ বছরই পিএইচডি গবেষণা শুরু করতে চান তিনি। বাংলাদেশের নারী স্বাস্থ্য উন্নয়নে কীভাবে আরও কার্যকর উপায় বের করে আনা যায়, তাই তাঁর গবেষণার বিষয়। হয়তো স্বপ্নবাজ এই ইসরাতদের হাত ধরেই নতুন পথ দেখবে বাংলাদেশের আগামীর নারী স্বাস্থ্য। নারী স্বাস্থ্যের উন্নয়ন মানেই সুন্দর বাংলাদেশের পথচলা! 

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com