সাক্ষাৎকারে ডি মারিয়া

'জানতাম একদিন সব সমালোচনা বন্ধ হবে'

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২৩ । ০০:০০ | আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২৩ । ১৩:১৪ | প্রিন্ট সংস্করণ

স্পোর্টস ডেস্ক

জয়ের সুবাস নাকে আসতেই চোখের জলে বুক ভাসান ডি মারিয়া। লুসাইলে সেদিন তাঁর জন্য দীর্ঘশ্বাস, আক্ষেপ- ইশ! যদি পুরোটা সময় মাঠে থাকতে পারতেন। কী আর করা, শরীর যে ৯০ মিনিট খেলার পক্ষে সায় দেয়নি। তাই টাচলাইনে দাঁড়িয়ে ম্যাচের পটপরিবর্তনের ধাক্কাগুলো অনুভব করেছিলেন আর কেঁদেছিলেন। তবে সেই কান্নার মাঝে যে লুকিয়ে ছিল বেদনার রং, সেটা ক'জনই জানতেন। সম্প্রতি খেলাধুলাবিষয়ক আমেরিকান চ্যানেল 'ইএসপিএন'কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই আর্জেন্টাইন শুনিয়েছেন তেমন অনেক কথাই। যার উল্লেখযোগ্য অংশ সমকাল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

দেশের হয়ে না জেতার দিনগুলো কেমন ছিল?

ডি মারিয়া: দেয়ালে মাথা ঠোকানো, চারপাশের সমালোচনা আর পরিবারের মুখে হতাশা সবকিছুর একদিন ইতি হবে, সেটা জানতাম। শেষ পর্যন্ত সেটাই হলো, দারুণ একটা সিনেমার মতো। আমার বড় মেয়ে এসব অনুমান করতে পারত। যখন আমি বাসায় এসে মন খারাপ করে বসে থাকতাম, সে পাশে এসে সান্ত্বনা দিত। নানাভাবে আমাকে হাসাতে চাইত। কোপা আমেরিকা জেতার পর সে আমাকে বলে, 'দেখেছো আমি যে বলেছিলাম, তুমি একদিন দেশের হয়ে জিতবে।' আসলে তারা কাছ থেকে আগের অবস্থাগুলো দেখে অনেক বেশি ভুগেছে।

ফাইনালে এভাবে ফ্রান্সকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হবেন, কখনও কি ভেবেছিলেন?

ডি মারিয়া: সত্যি বিশ্বাস হচ্ছিল না, আমরা সবকিছু এমন সাবলিলভাবে শেষ করতে পারব। যখন ফাইনালের প্রথমার্ধ শেষ হলো, আমার কাছে মনে হয়েছে আসলে যা হচ্ছে সব কি সত্য? নিজের মনে এমন অনেক প্রশ্নই জেগেছে। এর পর দুর্দান্ত এক ফাইনাল উপভোগ করা, পেনাল্টি হওয়া এবং সৌভাগ্যক্রমে সবকিছু সুন্দরভাবে শেষ করা। মন্টিয়েলের কথাই বলি, যে কিনা ১৬ পেনাল্টির ১৬টিতেই গোল করেছে। অথচ ওই দিন যদি সে মিস করত, তাহলে কী হতো! দেখুন, পারফরম্যান্সের সঙ্গে ভাগ্যটাও লাগে। ২০১৪ সালের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে, আমরা এত ভালো খেলেও শিরোপা জিততে পারিনি। অন্তিম সময়ে এসে আমাদের চোখের সামনে থেকে কাপটা নিয়ে গেল জার্মানি।

কাতারে আর্জেন্টিনার দর্শক ছিল উল্লেখ করার মতো। তাঁদের সমর্থন আপনাদের যাত্রাটা ঠিকভাবে শেষ করতে কতটা কাজে দিয়েছে?

ডি মারিয়া: হ্যাঁ, দর্শকরাই ছিলেন প্রাণ হয়ে। তাঁরা ফাইনালে গোল করতে সহায়তা করেছেন। এতটা রোমাঞ্চিত ছিলেন দর্শকরা, এতটা উন্মাদনায় ছিলেন আমি দেখে অবাক হয়ে যেতাম। যেটা আমাদের বাড়তি আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছিল, আমাদের অনেক বেশি আক্রমণাত্মক খেলতে সাহায্য করেছিল। টিম বাসে যখন ভেন্যুতে আসছি, তখনই টের পাই মানুষের ভালোবাসা। চারদিক থেকে কীভাবে তাঁরা ম্যাচ দেখতে আসছিলেন। চার বছর এই টুর্নামেন্টের জন্য আর্জেন্টিনার সমর্থকরা অপেক্ষা করেন। তাঁরা সর্বোচ্চ দিয়ে আমাদের সমর্থন দিয়ে যান, যা আমাদের অনেক বেশি প্রেরণা দেয়। যে কারণে আমরাও প্রাণপণ লড়াই করার চেষ্টা করি।

২০২৬ বিশ্বকাপে কি মেসির সঙ্গে আরেকবার দেশের হয়ে লড়তে চান?

ডি মারিয়া: আসলে ২৬ বিশ্বকাপ এখনও অনেক দূরে। আমি আপাতত সেটা নিয়ে ভাবছি না। আমার মনে আগামী কোপা আমেরিকা। সুযোগ পেলে অবশ্যই সেখানে নিজেকে নিংড়ে দেব। তবে লিও পরের বিশ্বকাপ খেলবেন, এটা আমিও আশা করছি। সে সেরা, সাতটি ব্যালন ডি'অর, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, বার্সার হয়ে প্রায় সবকিছুই জিতেছেন। আমি বলব, সে ইতিহাসের সেরা। দেখুন কোপা আমেরিকায় পা রাখতে হলে ইউরোপে নিয়মিত পারফর্ম করতে হবে, না হলে স্কালোনি আপনাকে নেবেন না। অবশ্যই সেখানে শতভাগ ঠিকঠাক খেলতে হবে।

যদি ম্যারাডোনা থাকতেন ... তাঁকে কতটা মিস করেছেন আপনারা?

ডি মারিয়া: দিয়েগো তাঁর মতোই। তাঁর জন্য আমার টুপিখোলা শ্রদ্ধা। যিনি কিনা আমাকে সব সময় সমর্থন দিতেন, কঠিন সময়ে পাশে থাকতেন। যখন সবাই আমাকে শেষ করতে চেয়েছিল, দিয়েগো ঠিকই কাঁধে হাত রেখেছেন। তবে আমার প্রজন্মে এসে আমরা যা দেখেছি, তাতে মেসিকেই আমি সেরা মানব। এটা খুবই দারুণ হতো, যদি ম্যারাডোনা মেসির হাতে কাপটা দেখে যেতে পারতেন। যেমন লিও কাপটা হাতে নিচ্ছেন আর পাশে দিয়েগো দাঁড়ানো- সত্যিই এটা ঐতিহাসিক একটা মুহূর্ত হতো।

আপনারা আর কত দিন ... আজ বা কাল তো বিদায় বলতেই হবে। নতুন প্রজন্ম কি এই অভাববোধ করবে?

ডি মারিয়া: বিশ্বকাপ জেতাটা পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর স্মৃতির একটি। দুটি ফাইনালে যাওয়া মোটেও আমাদের জন্য সহজ ছিল না। যদিও আমার দুটি শিরোপা জেতারই দাবিদার ছিলাম। সবাই তাঁদের সেরাটা দিয়ে লড়েছেন। এ জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। দেখুন কোনো কিছুই কারও জন্য থেমে থাকে না। নতুন অনেক খেলোয়াড় আসছে। আমি মনে করি, তারাও আমাদের মতো করে ভাববে, লড়বে। তাদের দিকেও তাকিয়ে থাকবে আরেক আর্জেন্টিনা।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com