স্যুয়ারেজ প্রকল্প

কর্ণফুলী-হালদায় ফিরবে প্রাণ

প্রকাশ: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২৩ । ০০:০০ | আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২৩ । ১২:৫৭ | প্রিন্ট সংস্করণ

তৌফিকুল ইসলাম বাবর, চট্টগ্রাম

কর্ণফুলী নদী- ফাইল ছবি

মাস্টারপ্ল্যানের অংশ হিসেবে চট্টগ্রামে বাস্তবায়ন হচ্ছে আধুনিক পয়ঃশোধনাগার (স্যুয়ারেজ) প্রকল্প। এরই অংশ হিসেবে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে পাইপলাইন বসানোর কাজ শুরু করবে চট্টগ্রাম ওয়াসা। প্রকল্পসংশ্নিষ্টরা বলছেন, প্রথম পর্যায়ে ৩ হাজার ৮০৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বিচ্ছিন্নভাবে আর চট্টগ্রাম নগরীর বাসিন্দাদের তরল পয়ঃবর্জ্য সরাসরি সুপেয় পানির আধার কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে পড়বে না। এতে দূষণমুক্ত হয়ে নদী ফিরে পাবে জীবন। নগরবাসীর জনস্বাস্থ্যে আসবে ইতিবাচক পরিবর্তন।


এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক ও ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম সমকালকে বলেন, স্যুয়ারেজ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের ৩০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে পাইপলাইন স্থাপন শুরু হবে। একই সঙ্গে সলিড ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট, ফিকেল স্লাজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টসহ অন্যান্য স্থাপনার নির্মাণকাজ করা হচ্ছে। পয়ঃবর্জ্য পরিশোধনের পরই তা নদীতে পড়বে। এতে নদীর পানি দূষণমুক্ত রাখা যাবে। কর্ণফুলী ও হালদায় স্বাভাবিক প্রাণপ্রবাহ ফিরবে।


সংশ্নিষ্টরা জানান, দিনে গড়ে আড়াই হাজার টন তরল পয়ঃবর্জ্য সরাসরি পড়ে কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে। এতে নদী দূষিত হয়। আবার এই পানি নগরীতে সরবরাহের ফলে তা জনস্বাস্থ্যের জন্যও হুমকি। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে ২০১৮ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রামের স্যুয়ারেজ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন হয়। নগরীকে ছয়টি ক্যাচমেন্টে ভাগ করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। প্রথম ক্যাচমেন্ট এলাকার ২০ লাখ বাসিন্দা স্যুয়ারেজ সুবিধা পাবে, যা মোট নগরবাসীর এক-তৃতীয়াংশ। প্রকল্পের প্রথম ধাপে হালিশহর ক্যাচমেন্টের কাজ হচ্ছে। এর আওতায় ২০০ কিলোমিটার পাইপলাইন, ১৪৪ কিলোমিটার সার্ভিস লাইন ও ১৫টি পাম্প স্টেশন হচ্ছে। নগরীর ২১টি ওয়ার্ডের ৩৬ বর্গকিলোমিটার এলাকার অন্তত ২০ লাখ বাসিন্দা এর সুবিধা পাবে। হালিশহরে ১৬৩ একর জায়গায় নির্মাণ করা হচ্ছে ১০ কোটি লিটার ধারণক্ষমতার সলিড ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি), দৈনিক ৩০০ টন ধারণক্ষমতার একটি, ফিকেল স্লাজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টসহ (এফএসটিপি) প্রয়োজনীয় স্থাপনা। চলতি বছরের শেষ নাগাদ প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হলেও শেষ করতে ২০২৬ সাল লেগে যেতে পারে। ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, পাইপলাইন স্থাপন ও ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক- তিনটি প্যাকেজে প্রকল্পের কাজ করছে দক্ষিণ কোরিয়ার তায়ং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। অর্থায়নে সরকার ও ওয়াসা।


পরিবেশবিদ ও কর্ণফুলী নদী গবেষক অধ্যাপক মুহাম্মদ ইদ্রিস আলী বলেন, প্রতিদিন কোটি মানুষের হাজার টন তরল বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে কর্ণফুলী ও হালদা। স্যুয়ারেজ প্রকল্প হলে নদী দুটিকে দূষণ থেকে রক্ষা করা যাবে। পুরো নগরীকেই স্যুয়ারেজের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।


চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার একেএম ফজলুল্লাহ জানান, পর্যায়ক্রমে পুরো নগরী স্যুয়ারেজের আওতায় আসবে। তখন কর্ণফুলী ও হালদা নদী আর দূষিত হবে না। প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ২৩ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে। এর মধ্যে হালিশহর ক্যাচমেন্টে ৩ হাজার ৮০৮, কালুরঘাটে ৪ হাজার ১৮৪, ফতেয়াবাদে ১ হাজার ৭০০, পূর্ব বাকলিয়ায় ৫ হাজার ৩৩৮, উত্তর কাট্টলীতে ৩ হাজার ৪৮৫ ও পতেঙ্গা ক্যাচমেন্টে ৪ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা খরচ হতে পারে।

স্যুয়ারেজের সুবিধাভোগী: স্যুয়ারেজ মাস্টারপ্ল্যানের সুপারিশ অনুযায়ী জোন-১ অর্থাৎ প্রথম ক্যাচমেন্ট এলাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ওয়াসা। এ এলাকার আওতাধীন নগরীর ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী, ১২ নম্বর সরাইপাড়া, ১৩ নম্বর পাহাড়তলী, ১৪ নম্বর লালখানবাজার, ১৫ নম্বর বাগমনিরাম, ২১ নম্বর জামালখান, ২২ নম্বর এনায়েতবাজার, ২৩ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী, ২৪ নম্বর উত্তর আগ্রাবাদ, ২৫ নম্বর রামপুর, ২৬ নম্বর উত্তর হালিশহর, ২৭ নম্বর দক্ষিণ আগ্রাবাদ, ২৮ নম্বর পাঠানটুলী, ২৯ নম্বর পশ্চিম মাদারবাড়ি, ৩০ নম্বর পূর্ব মাদারবাড়ি, ৩১ নম্বর আলকরণ, ৩২ নম্বর আন্দরকিল্লা, ৩৩ নম্বর ফিরিঙ্গিবাজার, ৩৬ নম্বর গোসাইলডাঙ্গা, ৩৭ নম্বর উত্তর-মধ্যম হালিশহর ও ৩৮ নম্বর দক্ষিণ-মধ্য হালিশহর ওয়ার্ডের গ্রাহকরা পয়ঃসংযোগ পাবেন। প্রকল্পের অংশ হিসেবে এসব এলাকায় বাসাবাড়ির সীমানার অভ্যন্তরে নতুন ইন্সপেকশন পিট নির্মাণ, পয়ঃবর্জ্য সংগ্রহের পাইপলাইন নির্মাণ ও বিদ্যমান বৃষ্টির পানির লাইন থেকে পয়ঃবর্জ্য লাইন পৃথক, সেপটিক ট্যাঙ্ক বাইপাসপূর্বক নতুন পিটে সংযুক্ত করা হচ্ছে। পরে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে এটি বন্ধসহ আনুষঙ্গিক কাজ করা হবে বলে জানা গেছে।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com