একুশে বইমেলা

আজ ভাঙছে মিলনমেলা

প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২৩ । ০০:০০ | আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২৩ । ০২:২৩ | প্রিন্ট সংস্করণ

লতিফুল ইসলাম

দেখতে দেখতে শেষ সময় উপস্থিত। এ বছরের অমর একুশে বইমেলা আজ মঙ্গলবার শেষ হচ্ছে। করোনা মহামারির ধকল কাটিয়ে দুই বছর পর এবার শুরু থেকেই প্রচুর মানুষের সমাগম ছিল মেলাজুড়ে। বৈশ্বিক আর্থিক সংকট, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, কাগজের দাম বাড়ার কারণে এবার বই কেমন বিক্রি হবে, তা নিয়ে আশঙ্কায় ছিলেন প্রকাশকরা। তবে জনসমাগম বেশি হওয়ায় বিক্রি নিয়ে আশাবাদী ছিলেন তাঁরা। কিন্তু মেলার শেষে এসে লাভ-লোকসানের হিসাব মেলাতে গিয়ে নিরাশার কথাই শোনা যাচ্ছে তাঁদের কণ্ঠে। প্রকাশকরা বলছেন, প্রতিদিন প্রচুর মানুষ এলেও বইয়ের বিক্রি আশানুরূপ হয়নি। এর চেয়ে করোনা মহামারির মধ্যে আয়োজিত বইমেলায় বিক্রি অনেক ভালো ছিল।

বাংলা একাডেমির তথ্যকেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী, গতকাল সোমবার পর্যন্ত মেলায় নতুন বই এসেছে মোট ৩ হাজার ৪৬৩টি। প্রকাশকরা জানান, প্রতি বছরের মতো এবারও গল্প-উপন্যাস ও সায়েন্স ফিকশনের বই বেশি বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি অনুপ্রেরণামূলক বইয়ের কাটতিও বেশ ভালো ছিল।

পাঠক সমাবেশের ব্যবস্থাপক শামস শুভ্র বলেন, 'করোনার প্রকোপের আগে ২০২০ সালে যে মেলা করেছিলাম, আমরা আশা করেছিলাম এবার তার পুনরাবৃত্তি হবে। কিন্তু হয়নি। কারণ দ্র্রব্যমূল্য বেড়েছে। মানুষের হাতে বই কেনার বাড়তি টাকা নেই।' অবসরের ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা বলেন, 'মেলায় পাঠক সমাগম অনেক হলেও বিক্রি কিন্তু খুব বেশি হয়নি। দেশের আর্থিক অবস্থার প্রভাব বইমেলাতেও পড়েছে।'

তরুণ প্রকাশক ঝুমঝুমির স্বত্বাধিকারী শায়লা রহমান তিথি বলেন, 'বইমেলায় যে পাঠক এসেছেন, তার চার ভাগের তিন ভাগও যদি বই কিনতেন, তাহলে বিক্রি আরও ভালো হতো।' কথাপ্রকাশের ব্যবস্থাপক জাফিরুল ইসলাম বলেন, 'এবার বই বিক্রি হয়নি তেমন। কিন্তু বাংলা একাডেমির হিসাবে বিক্রির টাকার অঙ্ক হয়তো বড় শোনাবে। কারণ, কাগজের দাম বাড়ায় বইয়ের দামও বেড়েছে।'

আজ শেষ দিনে বিকেলে মূলমঞ্চে সমাপনী অধিবেশনে বইমেলার প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম। ওই প্রতিবেদনে এ বছরের মেলায় কত টাকার বই বিক্রি হলো সে তথ্য জানা যাবে। তবে বাংলা একাডেমির এই তথ্যে বই বিক্রির প্রকৃত চিত্র উঠে আসে না বলে মনে করেন পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহসভাপতি অন্যপ্রকাশের স্বত্বাধিকারী মাজহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, '৮০ কোটি, ৮২ কোটি ... বাংলা একাডেমির ওই ফিগার খুব বিতর্কিত। কিসের ভিত্তিতে তারা এই তথ্য দেয় জানি না। প্রকাশকরা ওই ফিগারের সঙ্গে একমত না।'

বইমেলায় বিক্রি যেমনই হোক, মননশীল সাহিত্যের পাঠক তৈরি হচ্ছে না বলে আক্ষেপ করেন উৎস প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী মোস্তফা সেলিম। তিনি বলেন, 'গল্প-কবিতা-ফিকশনের বাইরে মননশীল ও চিন্তাশীল বইয়ের পাঠক সেভাবে তৈরি হচ্ছে না। মোটিভেশনাল বা সায়েন্স ফিকশনের প্রতি আগ্রহ থাকা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু মননশীল বইগুলো পড়লে তরুণরা সমাজ ও সংস্কৃতি নিয়ে আরও বেশি জানত।'

সাহিত্যিক মোরশেদ শফিউল হাসান বলেন, এ বছর মেলায় জনসমাগম বেড়েছে। কিন্তু যাঁরা এসেছেন তাঁদের অনেকে বই কেনেননি। আবার যাঁরা ঘুরতে এসে বই কিনেছেন তাঁরা অনেকেই পড়বেন না। এতে করে তরুণ প্রজন্মের ক্ষতি হচ্ছে।

গতকাল ২৭তম দিনে নতুন বই এসেছে ১৫৮টি। বিকেলে মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় 'বিশ্ববাঙালির সাহিত্য' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আলম খোরশেদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন এ এফ এম হায়াতুল্লাহ, আল মামুন এবং জসিম মল্লিক। সভাপতিত্ব করেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন জাহিদ মুস্তাফা, মুমিত আল রশিদ, ফরিদ আহমদ দুলাল ও আরেফিন রব।

এদিকে আজ মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে ২০২২ সালে প্রকাশিত বিষয় ও মানসম্মত সর্বাধিক বই প্রকাশের জন্য আগামী প্রকাশনীকে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার ২০২৩ প্রদান করা হবে। গুণমান বিচারে ২০২২ সালে প্রকাশিত সেরা বই বিভাগে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২৩ পাচ্ছে তিনটি প্রতিষ্ঠান। আহমদ রফিক রচিত 'বিচ্ছিন্ন ভাবনা' প্রকাশের জন্য জার্নিম্যান বুক্‌স, মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ রচিত 'বাংলা একাডেমি, আমার বাংলা একাডেমি' বইয়ের জন্য ঐতিহ্য এবং হাবিবুর রহমান রচিত 'ঠার :বেদে জনগোষ্ঠীর ভাষা' বইয়ের জন্য পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড এ পুরস্কার পাচ্ছে। ২০২২ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ বইয়ের মধ্য থেকে গুণমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য ময়ূরপঙ্খি প্রকাশন পাচ্ছে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার-২০২৩। এ ছাড়া এবারের মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা হিসেবে পুঁথিনিলয় (প্যাভিলিয়ন), নবান্ন প্রকাশনী (২-৪ ইউনিট), উড়কি (১ ইউনিট)-কে প্রদান করা হবে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২৩। সন্ধ্যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রয়েছে সমাপনী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

হুমায়ুন আজাদ স্মরণ

লেখক-প্রকাশক ও কবিরা স্মরণ করলেন প্রথাবিরোধী কথাসাহিত্যিক-ভাষা বিজ্ঞানী অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে। ১৯ বছর আগে ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বইমেলা প্রাঙ্গণ থেকে বের হয়ে দুর্বৃত্তদের আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন হুমায়ুন আজাদ। অনেকেই মনে করেন, সে দিনের আক্রমণই পরে মৃত্যু ডেকে এনেছিল তাঁর। গতকাল বিকেলে বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউস চত্বরে হুমায়ুন আজাদ স্মরণে আলোচনার আয়োজন করে আগামী প্রকাশনী। এই প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ওসমান গণির সভাপতিত্বে আলোচনায় যোগ দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, কবি মোহন রায়হান, অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, হুমায়ুন আজাদের ভাই সাজ্জাদ কবির, কবি আসলাম সানী, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন প্রমুখ।











© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com