
প্রতিবেশী
নেপালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক সংকট
প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২৩ । ০০:০০ | আপডেট: ০১ মার্চ ২৩ । ১১:৩৮ | প্রিন্ট সংস্করণ
অচ্যুত ওয়েগল

নেপাল ৯ মার্চ নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করতে যাচ্ছে। এ নির্বাচন ঘিরে নেপালের রাজনীতিতে নানামুখী নাটকীয় ঘটনা আমরা প্রত্যক্ষ করছি। ক্ষমতাসীন জোট কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল-সিপিএন (মাওবাদী কেন্দ্র), সিপিএন-ইউএমএলসহ (কমিউনিস্ট ইউনিফায়েড মার্ক্সিস্ট লেনিনিস্ট) ২৫ ডিসেম্বর সরকার গঠনকারী অন্য চারটি দলের জোটে মাত্র ৬০ দিনের মধ্যে ভাঙন দেখা দেয়। গত শুক্রবার ক্ষমতাসীন জোটের অন্যতম প্রধান শরিক রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টির প্রতিনিধিত্বকারী চার মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী ও মাওবাদী চেয়ারম্যান পুষ্প কমল দাহাল ইউএমএল সভাপতি কেপি শর্মা অলিকে রীতিমতো বোকা নেপালি কংগ্রেসসহ আটটি দলের একটি জোট গঠন করেছেন। নেপালি কংগ্রেস নেতা রাম চন্দ্র পাউডেল শনিবার নতুন আটদলীয় জোটের পক্ষে তাঁর প্রার্থিতা নিবন্ধন করেছেন; প্রধানমন্ত্রী নিজে এবং জোটের অন্য প্রধান নেতারা তাঁর প্রার্থিতার প্রস্তাব সমর্থন করেছেন। ইউএমএলও সুবাস নেমবাংকে তাঁদের রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহাল প্রচণ্ডের শেষ মুহূর্তের নির্দেশ অনুসরণ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিমলা রাই পাউডিয়ালের জেনেভা সফর বাতিল করার পর ইউএমএল এখন সরকার থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এদিকে রাষ্ট্রীয় স্বতন্ত্র পার্টি অন্তত আপাতত সরকারকে সমর্থন অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা করছে। বলা বাহুল্য, গত এক দশকে পুষ্প কমল দাহাল ও কেপি শর্মা অলির মধ্যে বিশ্বাস এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার পরিবর্তে সুবিধাবাদী রাজনীতির সম্পর্ক ছিল। উল্লেখ করা প্রয়োজন, নতুন জোটের পাঁচটি প্রধান দল– নেপালি কংগ্রেস, সিপিএন (মাওবাদী কেন্দ্র), সিপিএন-ইউনাইটেড সোশ্যালিস্ট, পিপলস সোশ্যালিস্ট পার্টি ও ন্যাশনাল পিপলস ফ্রন্ট অলিকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য ২০২১ সালের এপ্রিলে গঠিত জোটে ছিল এবং ঐক্যবদ্ধভাবে গত নভেম্বরের নির্বাচনে লড়াই করেছে। দাহালের সঙ্গে তখন অলির বিরোধ তৈরি হয়। নভেম্বরের ভোটে তারা পার্লামেন্টে ১৩৬টি আসন জিতে, অর্থাৎ সরকার গঠনের জন্য মাত্র দুটি আসন কম পায়।
এরপর পুষ্প কমল দাহাল নেপালি কংগ্রেসের সভাপতি শের বাহাদুর দেউবাকে পাঁচ বছর মেয়াদের প্রথমার্ধে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য তাঁকে সমর্থন দিতে প্ররোচিত করে ব্যর্থ হন। দেউবা মেয়াদের শেষার্ধ পর্যন্ত অপেক্ষা করার প্রস্তাব দিলেও তাতে রাজি ছিলেন না দাহাল। সম্পর্কের তিক্ততা থাকা সত্ত্বেও একটি নতুন জোট গঠনের জন্য অলিকে পুনরায় ব্যবহার করেছিলেন দাহাল। এদিকে ইউএমএলের বিরুদ্ধে গঠিত জোট ভাঙার জন্য এক প্রকার মরিয়া হয়ে অপেক্ষা করছিলেন অলি। সর্বশেষ, অলিকে দাহাল যে পদক্ষেপ নিলেন, তাতে উভয়ের মধ্যে গভীর অবিশ্বাসের বিষয়ই উঠে আসে।
সমসাময়িক নেপালি রাজনীতিতে অবিশ্বাস যে ব্যাপকভাবে রয়েছে, এই ঘটনাগুলো তার প্রমাণ। আদর্শিক ও দার্শনিক যুক্তি ছাড়া কেবল ক্ষমতা ও সংসদীয় হিসাবনিকাশের জন্য রাজনৈতিক জোট তৈরি বা ভাঙার এই প্রবণতা গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ, সুশাসন নিশ্চিতকরণ ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য ক্ষতিকর। তথাকথিত মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর এই ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড পপুলিজম বা জনতুষ্টিবাদের রাজনীতির পথ প্রশস্ত করেছে।
নেপালে রাষ্ট্রপতির পদ নিয়ে এভাবে দর কষাকষি প্রধান দলগুলোর জন্য অযাচিত। দুটি অযৌক্তিক অনুশীলন ইতোমধ্যে নেপালের রাষ্ট্রপতিকে যেন অপ্রজাতন্ত্রী করে তুলেছে। প্রথমত, অতীতের দু’জন রাষ্ট্রপতিকে রাষ্ট্রীয় বিষয়ে অযাচিতভাবে তাঁদের বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে দেখা গেছে। রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভান্ডারি যে কোনো মূল্যে তার ‘কমরেড-ইন-আর্মস’ কেপি শর্মা অলির স্বার্থ রক্ষায় সচেষ্ট ছিলেন। এ কারণটিই খ্যাতিমান রাজনীতিবিদদের এই পদের জন্য আগ্রহী হতে প্ররোচিত করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, জাতীয় মর্যাদার জন্য তুলনামূলক গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্বের সন্ধান করার পরিবর্তে পদ দখলের জন্য বৃহৎ দলগুলো নিজ পক্ষের কাউকে নিয়োজিত করার চেষ্টায় লিপ্ত।
কিছু স্বৈরাচারী মনোভাবসম্পন্ন দলীয় প্রধানের স্বার্থে রাজনৈতিক জোটের ঘন ঘন অদলবদল কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সাংবিধানিক স্থিতিশীলতা ও জনসেবার ওপর প্রভাব ফেলছে। কেন্দ্রে রাজনৈতিক সমীকরণের পরিবর্তন প্রাদেশিক সরকারগুলোতেও তার প্রভাব ফেলছে। সাতটি প্রদেশেই সংসদ ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে।
ড. অচ্যুত ওয়েগল: অধ্যাপক, কাঠমান্ডু ইউনিভার্সিটি স্কুল অব ম্যানেজমেন্ট; কাঠমান্ডু পোস্ট থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর মাহফুজুর রহমান মানিক
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com