আইন সংশোধনের চিন্তা

উপজেলা পরিষদের ক্ষমতা জটিলতা সহজে কাটছে না

প্রকাশ: ০১ মার্চ ২৩ । ০০:০০ | আপডেট: ০১ মার্চ ২৩ । ১০:৪৩ | প্রিন্ট সংস্করণ

বাহরাম খান

ফাইল ছবি

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ঘিরে ক্ষমতার রশি টানাটানি সহজেই কাটছে না। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এ বিষয়ে কোনো মৌলিক পরিবর্তন সরকার আনতে চাচ্ছে না। অন্যদিকে বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন থাকায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে সীমাবদ্ধতা আছে। তবে উপজেলা পরিষদ আইন সংশোধনের চিন্তা করছে সরকার।

উপজেলা পরিষদে ক্ষমতা হস্তান্তর জটিলতা নিরসনে গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে উপজেলা পরিষদে হস্তান্তরিত বিষয়ে কার্যক্রম পর্যালোচনা, পরামর্শ প্রদান ও নির্দেশিকা জারির উদ্দেশ্যে জাতীয় পর্যায়ে গঠিত কমিটির এ বৈঠকে বিদ্যমান উপজেলা আইন সংশোধনের জন্য স্থানীয় বিভাগকে আইন সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তবে এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে রিট মামলা চলমান থাকায় আইন সংশোধনের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে যাবে না সরকার।

চলতি মাসের শেষ দিকে উপজেলা চেয়ারম্যানদের করা এ-সংক্রান্ত রিট মামলার রায় হওয়ার কথা রয়েছে। আপাতত রিট মামলায় সরকার পরে অবস্থান সংক্রান্ত যুক্তি-তর্ক সাজাতে কাজ করবেন সংশ্লিষ্টরা। এ ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে দুটি বিষয় গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা হতে পারে বলে জানা গেছে। প্রথমত, আইনে উপজেলা পরিষদকে যেসব ক্ষমতা দিতে বলা হয়েছে, তা গ্রহণ করার মতো অবস্থা পরিষদের নেই। দ্বিতীয়ত, এ বিষয়ে বাস্তব পরিস্থিতি চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিতে সময় চাওয়া হবে, যা আইন সংশোধনের মাধ্যমে প্রয়োগ করতে হবে।

এসব যুক্তির বিষয়ে সরকার পক্ষের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইনে যেভাবে উপজেলা পরিষদকে স্থানীয় সরকার হিসেবে বলা হয়েছে, তাতে কিছু অসংগতি চিহ্নিত হয়েছে। এসব অসংগতির কারণে বিদ্যমান শাসন প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা আছে। উদাহরণ দিয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, জমি বেচাকেনার ক্ষেত্রে আগে শুধু ইউনিয়ন পরিষদকে ১ শতাংশ কর দিলেই হতো, এখন উপজেলা পরিষদকেও ১ শতাংশ কর দিতে হয়। অর্থাৎ একই বিষয়ে দুই জায়গায় কর দিচ্ছেন একজন নাগরিক। এ ছাড়া, আগে স্থানীয় হাটবাজার ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে ডাক হতো, এখন সেটা উপজেলা পরিষদও যুক্ত হয়েছে। এতে আরেকটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান বঞ্চিত হচ্ছে।

বিদ্যমান আইন ও বিধি অনুযায়ী উপজেলা পর্যায়ের সব কার্যক্রম উপজেলা পরিষদের নেতৃত্বে পরিচালিত হওয়ার কথা। কিন্তু প্রায় দেড় দশকে তা বাস্তবায়ন হয়নি। উপজেলা চেয়ারম্যানদের ভাষ্য, এই ক্ষমতা বাস্তবায়নের পথ হচ্ছে উপজেলা পর্যায়ে ১৩টি মন্ত্রণালয়ের ১৭টি দপ্তরের সংশ্লিষ্ট ফাইল পরিষদ চেয়াম্যানদের পর্যন্ত যাবে। বর্তমানে এসব দপ্তরের ফাইল ইউএনও পর্যন্ত দিয়ে নিষ্পত্তি হয়।

উপজেলা চেয়ারম্যানদের রিট মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এ সংশ্লিষ্ট আইন-বিধি প্রতিপালনের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে নির্দেশ দিয়েছে। এমন নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা পরিষদের ক্ষমতা হস্তান্তর সংক্রান্ত কার্যক্রম মূল্যায়ন করতে একটি উপকমিটি গঠন করে দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ওই উপকমিটি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, বিদ্যমান আইন ও আদেশ-নির্দেশ অনুযায়ী উপজেলা চেয়ারম্যানরা ক্ষমতা পাওয়ার এখতিয়ার রাখেন। অন্যদিকে তাদের সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, উপজেলা চেয়ারম্যানদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার উদ্ভব হতে পারে। তাই উপকমিটির পক্ষ থেকে উপজেলা আইন সংশোধনের সুপারিশ করেছে। আর অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপ হিসেবে চেয়ারম্যানদের চাওয়া ক্ষমতা হস্তান্তর সংক্রান্ত কার্যক্রম স্থগিত করার পরামর্শ দিয়েছে উপকমিটি, যা বিদ্যমান আইন অনুযায়ী সম্ভব বলে জানিয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ফাইন্যান্স অফিসার), স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তর এবং পরিবার কল্যাণ অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন মাঠ পর্যায়ের অফিস; কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অফিস; মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মৎস্য অধিদপ্তর এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন অফিসসহ উপজেলায় থাকা সব অফিসের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা উপজেলা চেয়ারম্যানরা চাচ্ছেন। কিন্তু বর্তমানে প্রকৌশল অফিস এবং পিআইও অফিসসহ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিভুক্ত কিছু কাজের এখতিয়ার উপজেলা চেয়ারম্যানদের রয়েছে।

উপজেলা চেয়ারম্যানরা বলছেন, দীর্ঘদিন উপজেলা পরিষদ কার্যকর না থাকায় সংসদ সদস্যরা স্থানীয় প্রশাসনসহ সব ধরনের কার্যক্রম তদারকি করছেন। এখন উপজেলা পরিষদকে ক্ষমতা দিলে সংসদ সদস্যদের ক্ষমতা অনেকাংশে খর্ব হবে। অন্যদিকে স্থানীয় প্রশাসন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে স্থানীয় প্রশাসনে কে নেতৃত্ব দেবেন, সেটা নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তের বিষয়।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com